মযহারুল ইসলাম বাবলা
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত নাটকের নাট্যকারের কাছে মঞ্চনাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল ঢাকা শিশু নাট্যমের অন্যতম সংগঠক হেমায়েত উদ্দিন বাবুল। নাট্যকার নাটক লিখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটেও হতাশ করেননি; যথাসময়ে নাটকের পাণ্ডুলিপি আমাদের দিয়েছিলেন। শিশু-কিশোর উপযোগী মৌলিক নাটকের পাণ্ডুলিপি পাওয়া বড়ই দুর্লভ ব্যাপার ছিল তখন। প্রতিষ্ঠিত নাট্যকারেরা হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়েও নাটক না দিতে পেরে, শিশুদের উপযোগী নাটক লেখা সহজ নয় বলে এড়িয়ে যেতেন। আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আমরা খুশিতে আটখানা হয়েছিলাম। আমাদের উদ্যোগে ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টাদের অন্যায় হস্তক্ষেপে নাজমা জেসমিন চৌধুরী রচিত এবং ঢাকা শিশু নাট্যম প্রযোজিত নাটক ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকটির মঞ্চায়নের আয়োজন প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল। ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টা প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের হস্তক্ষেপে সেই যাত্রায় সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আমরা ‘আলোটা জ্বালো’ মঞ্চস্থ করতে পেরেছিলাম। শ্রেণিবিভক্ত সমাজের বৈষম্যের বাইরে শিশু-কিশোরেরাও যে নয়, এই সত্যকে ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকে সামনে আনায় ঘটেছিল কিছু বিপত্তি। ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টা ও কার্যকরী পরিষদের অধিক সংখ্যকই নাটকটি নিয়ে আপত্তি তুললেও আমরা কতিপয় অনড় থাকায় নাটকটির সফল মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছিল।
শিশুদের নাটক মানেই রূপকথা। রাজা-রাজকন্যা কিংবা হাস্যরসের কৌতুকসর্বস্ব নাটক। প্রচলিত এই বৃত্তকে নাজমা জেসমিন চৌধুরী অতিক্রম করেছিলেন তাঁর লেখা ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকের মাধ্যমে। শিশু-কিশোর নাটকে শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম কড়া নেড়েছিলেন। শিশুরা তো ফুলের মতো পবিত্র। বড়রা যেমন শিখিয়ে দেয় বাড়ির কাজের লোক কিংবা রিকশাচালক, নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে ‘আপনি’র স্থলে তুই বা তুমি সম্বোধন। শিশুদের সরল মনে ষোলো আনা বৈষম্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয় শৈশবেই। নাজমা আপা এ জায়গাটিতে কশাঘাত করেছিলেন তাঁর ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকে। ১৯৭৭ সালে মঞ্চস্থ এই নাটকের মাধ্যমেই নাজমা আপার সঙ্গে আমার যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। নাজমা আপাদের সঙ্গে আমার অধিক ঘনিষ্ঠতায় এবং মতাদর্শিক অনৈক্যের কারণে ঢাকা শিশু নাট্যমের নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭৮ সালে নাজমা আপা ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতা-সমর্থনে ফয়েজ আহমদ, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী প্রমুখের সমন্বয়ে ঢাকা লিটল থিয়েটার গঠন করা হয়।
রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’ গীতিনাট্যটি শিশু-কিশোর উপযোগী ও সময়োচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে নাটকে রূপান্তর করেন নাজমা জেসমিন চৌধুরী। বাংলাদেশে এযাবৎকালের সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটক তাসের দেশের শিশু-কিশোর কুশীলব প্রায় ৬০ জনের বিশাল বহর, সঙ্গে আবার অভিভাবকসহ প্রায় শত মানুষের সরব উপস্থিতিতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নাজমা আপাদের বাসায় বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহড়ায় নাচ-গান, অভিনয়ে মুখর হয়ে উঠত।
নাজমা আপা মঞ্চনাটক যতগুলো লিখেছেন, সবগুলো শিশু-কিশোরদের জন্য। ঢাকায় তখন যে কটি শিশু-কিশোর নাট্যদল নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করত, অধিকাংশ নাটকের নাট্যকার ছিলেন নাজমা আপা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের বরেণ্য অধ্যাপক, প্রগতিশীল লেখক-বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী নাজমা আপা। স্যারের বিশাল ব্যক্তিত্বের সীমা অতিক্রম করে স্বীয় প্রতিভায় উদ্ভাসিত একজন সফল নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সংগঠক এবং একজন স্নেহপ্রবণ মা। নিজগুণে তিনি তাঁর অবস্থান শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। যেটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বটে। নাজমা আপার ডাক নাম মেরী। মেরী মাতার মতো তিনি ছিলেন মাতৃস্নেহপ্রবণ। নামের এমন সার্থকতা আমাদের সমাজে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নাট্য প্রতিযোগিতায় প্রথম পুরস্কারপ্রাপ্ত নাটকের নাট্যকারের কাছে মঞ্চনাটক লিখে দেওয়ার অনুরোধ করেছিল ঢাকা শিশু নাট্যমের অন্যতম সংগঠক হেমায়েত উদ্দিন বাবুল। নাট্যকার নাটক লিখে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে মোটেও হতাশ করেননি; যথাসময়ে নাটকের পাণ্ডুলিপি আমাদের দিয়েছিলেন। শিশু-কিশোর উপযোগী মৌলিক নাটকের পাণ্ডুলিপি পাওয়া বড়ই দুর্লভ ব্যাপার ছিল তখন। প্রতিষ্ঠিত নাট্যকারেরা হাজারো প্রতিশ্রুতি দিয়েও নাটক না দিতে পেরে, শিশুদের উপযোগী নাটক লেখা সহজ নয় বলে এড়িয়ে যেতেন। আকাশের চাঁদ পাওয়ার মতো আমরা খুশিতে আটখানা হয়েছিলাম। আমাদের উদ্যোগে ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টাদের অন্যায় হস্তক্ষেপে নাজমা জেসমিন চৌধুরী রচিত এবং ঢাকা শিশু নাট্যম প্রযোজিত নাটক ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকটির মঞ্চায়নের আয়োজন প্রায় ভেস্তে যেতে বসেছিল। ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টা প্রয়াত সাংবাদিক ফয়েজ আহমদের হস্তক্ষেপে সেই যাত্রায় সব প্রতিকূলতা ডিঙিয়ে আমরা ‘আলোটা জ্বালো’ মঞ্চস্থ করতে পেরেছিলাম। শ্রেণিবিভক্ত সমাজের বৈষম্যের বাইরে শিশু-কিশোরেরাও যে নয়, এই সত্যকে ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকে সামনে আনায় ঘটেছিল কিছু বিপত্তি। ঢাকা শিশু নাট্যমের উপদেষ্টা ও কার্যকরী পরিষদের অধিক সংখ্যকই নাটকটি নিয়ে আপত্তি তুললেও আমরা কতিপয় অনড় থাকায় নাটকটির সফল মঞ্চায়ন সম্ভব হয়েছিল।
শিশুদের নাটক মানেই রূপকথা। রাজা-রাজকন্যা কিংবা হাস্যরসের কৌতুকসর্বস্ব নাটক। প্রচলিত এই বৃত্তকে নাজমা জেসমিন চৌধুরী অতিক্রম করেছিলেন তাঁর লেখা ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকের মাধ্যমে। শিশু-কিশোর নাটকে শ্রেণিবৈষম্যের বিরুদ্ধে তিনিই প্রথম কড়া নেড়েছিলেন। শিশুরা তো ফুলের মতো পবিত্র। বড়রা যেমন শিখিয়ে দেয় বাড়ির কাজের লোক কিংবা রিকশাচালক, নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষদের সঙ্গে ‘আপনি’র স্থলে তুই বা তুমি সম্বোধন। শিশুদের সরল মনে ষোলো আনা বৈষম্য সৃষ্টি করে দেওয়া হয় শৈশবেই। নাজমা আপা এ জায়গাটিতে কশাঘাত করেছিলেন তাঁর ‘আলোটা জ্বালো’ নাটকে। ১৯৭৭ সালে মঞ্চস্থ এই নাটকের মাধ্যমেই নাজমা আপার সঙ্গে আমার যোগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। নাজমা আপাদের সঙ্গে আমার অধিক ঘনিষ্ঠতায় এবং মতাদর্শিক অনৈক্যের কারণে ঢাকা শিশু নাট্যমের নির্বাহী পদ থেকে পদত্যাগ করে ১৯৭৮ সালে নাজমা আপা ও অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর সার্বিক সহযোগিতা-সমর্থনে ফয়েজ আহমদ, নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, সৈয়দ সালাহউদ্দিন জাকী প্রমুখের সমন্বয়ে ঢাকা লিটল থিয়েটার গঠন করা হয়।
রবীন্দ্রনাথের ‘তাসের দেশ’ গীতিনাট্যটি শিশু-কিশোর উপযোগী ও সময়োচিত দৃষ্টিভঙ্গিতে নাটকে রূপান্তর করেন নাজমা জেসমিন চৌধুরী। বাংলাদেশে এযাবৎকালের সর্বাধিক মঞ্চস্থ নাটক তাসের দেশের শিশু-কিশোর কুশীলব প্রায় ৬০ জনের বিশাল বহর, সঙ্গে আবার অভিভাবকসহ প্রায় শত মানুষের সরব উপস্থিতিতে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর নাজমা আপাদের বাসায় বিকেল ৪টা থেকে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত মহড়ায় নাচ-গান, অভিনয়ে মুখর হয়ে উঠত।
নাজমা আপা মঞ্চনাটক যতগুলো লিখেছেন, সবগুলো শিশু-কিশোরদের জন্য। ঢাকায় তখন যে কটি শিশু-কিশোর নাট্যদল নিয়মিত নাটক মঞ্চায়ন করত, অধিকাংশ নাটকের নাট্যকার ছিলেন নাজমা আপা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি সাহিত্যের বরেণ্য অধ্যাপক, প্রগতিশীল লেখক-বুদ্ধিজীবী অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর স্ত্রী নাজমা আপা। স্যারের বিশাল ব্যক্তিত্বের সীমা অতিক্রম করে স্বীয় প্রতিভায় উদ্ভাসিত একজন সফল নাট্যকার, কথাসাহিত্যিক, লেখক, গবেষক, সংগঠক এবং একজন স্নেহপ্রবণ মা। নিজগুণে তিনি তাঁর অবস্থান শক্ত ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়ে গেছেন। যেটা অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত বটে। নাজমা আপার ডাক নাম মেরী। মেরী মাতার মতো তিনি ছিলেন মাতৃস্নেহপ্রবণ। নামের এমন সার্থকতা আমাদের সমাজে সহজে খুঁজে পাওয়া যাবে না।
লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, নতুন দিগন্ত
গত সংখ্যায় লিখেছিলাম, এখন আর ছাত্র খুঁজে পাওয়া যায় না, চারদিকে পরীক্ষার্থী। কিন্তু দ্রুতই দেখা যাচ্ছে, ছাত্র এবং পরীক্ষার্থী কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ছাত্রদের একটা বৃহদাংশ রাজনীতিবিদে পরিণত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, তাদের অঙ্গুলি হেলনে বড় বড় রাজনৈতিক সিদ্ধান্তও হয়ে যাচ্ছে। ভেবেছিলাম প্রাথমিক শিক্ষা
৯ ঘণ্টা আগেবিজ্ঞানীরা বিংশ শতাব্দীজুড়ে বহির্জাগতিক প্রাণ অনুসন্ধানের চেষ্টা চালিয়েছেন। খুঁজেছেন কার্বনভিত্তিক, সিলিকনভিত্তিক বা অ্যামোনিয়া যৌগনির্ভর প্রাণ। এটা আমাদের জানা জরুরি যে প্রাণের প্রকৃতি, আর অন্য জায়গায় প্রাণ আছে কি না, তা আসলে একই প্রশ্নের দুটো দিক। তা হলো, ‘কেন আমরা এখানে?’ বিস্ময়ের ব্যাপার হচ্ছে,
৯ ঘণ্টা আগেপরিবার হলো মূলত রক্ত-সম্পর্কিত ব্যক্তিদের সংগঠন, যেখানে সব সদস্যের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, নিরাপত্তা এবং বিনোদনের আয়োজন হয়ে থাকে। পরিবার কখন কী কারণে গড়ে উঠেছে, তা নিয়ে মতপার্থক্য রয়েছে। বেশির ভাগের মত হলো, মানুষ সমতলে বসবাস করার সময় কৃষিকাজ শিখে ফেলে। কৃষিজাত পণ্য সংরক্ষণের জন্য গোলাঘর
৯ ঘণ্টা আগেনিষিদ্ধ জিনিসের প্রতি মানুষের আকর্ষণ বেশি, এ কথা নতুন নয়। এবং এ ব্যাপারে প্রমাণের অভাব নেই। একটা কিছু নিষিদ্ধ করলেই যে তা ব্যবহার করা বন্ধ হয়ে যাবে, এমন ভাবাটাই ভুল। ধরুন, একটি রাজনৈতিক দলকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হলে সেই দলটি যে ছদ্মবেশে বা তলে তলে রাজনীতি করবে না, সেই গ্যারান্টি কে দিতে পারে? তেমনি কেউ
৯ ঘণ্টা আগে