আলম শাইন

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় জোন। বিশেষ করে খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার, বৈদেশিক বাণিজ্য, জাহাজশিল্প, আমদানি-রপ্তানি কিংবা পর্যটন এসব ‘নীল সমুদ্র অর্থনীতি’র আওতায় পড়ে। এই বিষয়টি সম্পর্কে সর্বসাধারণের ধারণা নেই বললেই চলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সমুদ্রসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় হলেও আহরণে একধরনের অনীহা লক্ষ করা যায় আমাদের মধ্যে। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী বিশ্বের প্রতিটি দেশই ইচ্ছে করলে সমুদ্রসম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে অনায়াসেই। কিছু কিছু দেশ নির্ভরশীল হচ্ছেও ক্রমেই। তবে ইচ্ছে করলে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হতে পারে বাংলাদেশ। এটি অনেকভাবেই সম্ভব। বিশেষ করে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের মাধ্যমে অতি সহজেই আমরা সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারি।
দুর্গম অঞ্চলের খনিজ সম্পদের তুলনায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও যথেষ্ট লাভজনক। যেমন, একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে, মৎস্য আহরণ ও লবণ উৎপাদন। এ দুটি ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ লগ্নির প্রয়োজন পড়ে না। অথচ কোটি কোটি টাকা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারীরা। এ দুটি সেক্টরে বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি অর্থ লগ্নি না থাকলেও অনেক সময় প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার।
বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ স্থলভূমি, বাদবাকি তিন ভাগ জলরাশিতে ভরপুর। মাত্র এক ভাগ স্থলভূমির মধ্যে শত শত ধরনের খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকলে বাকি তিন ভাগে কী পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে, তা অনুমেয়। এই হিসাব-নিকাশের জন্য কাগজ-কলম নিয়ে অঙ্ক কষার প্রয়োজন নেই, সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। অনেকের উপলব্ধি জলতলে আবার কিসের সম্পদ!
সমীক্ষায় জানা গেছে, সমুদ্রে ৫০টির বেশি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে আছে বালু, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, মোনাজাইট, জিরকন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়োডিন, অ্যালুমিনিয়াম, ফসফরাস, লিথুনিয়ার, সালফার, সিলিকন, কপার, নাইট্রোজেন, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম, বোরন, স্বর্ণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ক্লে (সিমেন্টের কাঁচামাল), দ্রবীভূত লবণসহ হরেক খনিজ পদার্থ। অপরদিকে জলজ প্রাণীদের মধ্যে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৬০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙরসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এ ছাড়াও আমাদের সমুদ্র সীমানায় প্রচুর টুনা মাছ পাওয়া যায়, যা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ মাছের আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যাপক। উল্লেখ্য, আমাদের দেশেও টুনা মাছের প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকায় পর্যটক বেড়াতে এলে টুনা মাছের বারবিকিউ তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
অন্য খনিজ পদার্থের তুলনায় সমুদ্রে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তার পরেই হচ্ছে সালফার। মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে কিংবা খাদ্যের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে হলে লবণের বিকল্প নেই, যা জোগান দিচ্ছে সমুদ্রের জলরাশি। অপরদিকে সালফারের প্রয়োজনীয়তা স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করার নয়। ইউরেনিয়ামও একটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ।
বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামের দাম যেমন চড়া, তেমনি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরেনিয়ামের চাহিদা বলে শেষ করার মতো নয়।
কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৭ শতাংশ হলে বাণিজ্যিকভাবে সেটি উত্তোলনের উপযুক্ত হয়। সেই মতে, আমাদের সমুদ্রসীমানায়, বিশেষ করে উপকূলীয় কিছু অংশে বাণিজ্যিকভাবে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের মতো মজুত রয়েছে। ইউরেনিয়াম শুধু বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায়ই নয়, বিশ্বের সমগ্র সমুদ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন টন, যা উত্তোলন করলে পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটবে না। খনি থেকে ইউরেনিয়াম আহরণ করা খুব বিপজ্জনক হলেও সমুদ্রের তলদেশ থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন তুলনামূলক নিরাপদ। অন্যদিকে প্রতি ঘনমাইল সমুদ্রজলে প্রায় ২৫ টন স্বর্ণ মজুতের তথ্যও জানা যায়। সমুদ্রের তলদেশে অফুরন্ত গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের মজুত আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পাশেই মিয়ানমার ইতিমধ্যে বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমাদের সমুদ্রসীমানায় তার চেয়েও বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেটি উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, আর মাত্র ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩১ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্যাস মজুত থাকবে। ভূপৃষ্ঠের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্রে রক্ষিত গ্যাসের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে উত্তোলন সম্ভব না হলেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক ইজারা দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে ভারত, মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলন করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে ইতিমধ্যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। গ্যাসের মতো ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রেও ইজারার মাধ্যমে আহরণ সম্ভব। কারণ, ইউরেনিয়ামের ব্যবহার দেশে খুব দ্রুততর হতে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে ইউরেনিয়ামের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
শুধু নীল সমুদ্রই নয়, সমুদ্র উপকূলেও রয়েছে অগাধ সম্পদ। সমুদ্র উপকূলে এ পর্যন্ত ১৭ প্রকার খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রোটাইল, গ্যানেট, ম্যাগনেটাইট উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলেও প্রায় ১.২৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলেও সমুদ্র উপকূলের বালু আহরণে সেই ধরনের ঝুঁকি নেই।
সুনীল অর্থনীতি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যার জন্য সমুদ্রে রক্ষিত প্রাণিজ সম্পদ, অপ্রাণিজ বা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। তাতে করে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, তেমনি বেকারদেরও কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। আরেকটি কথা হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের সম্পদ যতটা নিরাপদে আগলে রাখা সম্ভব, ততটা নিরাপদ নয় সমুদ্রসম্পদ। বিশেষ করে প্রাণিজ সম্পদের কথাই ধরা যাক। এ সম্পদের মধ্যে স্থিরতা নেই। যেকোনো সময় সীমানা অতিক্রম করতে পারে অথবা সীমানা ডিঙিয়ে কেউ কেউ আহরণ করে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: পরিবেশ ও বন্য প্রাণিবিষয়ক কলামিস্ট

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় জোন। বিশেষ করে খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার, বৈদেশিক বাণিজ্য, জাহাজশিল্প, আমদানি-রপ্তানি কিংবা পর্যটন এসব ‘নীল সমুদ্র অর্থনীতি’র আওতায় পড়ে। এই বিষয়টি সম্পর্কে সর্বসাধারণের ধারণা নেই বললেই চলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সমুদ্রসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় হলেও আহরণে একধরনের অনীহা লক্ষ করা যায় আমাদের মধ্যে। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী বিশ্বের প্রতিটি দেশই ইচ্ছে করলে সমুদ্রসম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে অনায়াসেই। কিছু কিছু দেশ নির্ভরশীল হচ্ছেও ক্রমেই। তবে ইচ্ছে করলে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হতে পারে বাংলাদেশ। এটি অনেকভাবেই সম্ভব। বিশেষ করে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের মাধ্যমে অতি সহজেই আমরা সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারি।
দুর্গম অঞ্চলের খনিজ সম্পদের তুলনায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও যথেষ্ট লাভজনক। যেমন, একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে, মৎস্য আহরণ ও লবণ উৎপাদন। এ দুটি ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ লগ্নির প্রয়োজন পড়ে না। অথচ কোটি কোটি টাকা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারীরা। এ দুটি সেক্টরে বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি অর্থ লগ্নি না থাকলেও অনেক সময় প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার।
বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ স্থলভূমি, বাদবাকি তিন ভাগ জলরাশিতে ভরপুর। মাত্র এক ভাগ স্থলভূমির মধ্যে শত শত ধরনের খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকলে বাকি তিন ভাগে কী পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে, তা অনুমেয়। এই হিসাব-নিকাশের জন্য কাগজ-কলম নিয়ে অঙ্ক কষার প্রয়োজন নেই, সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। অনেকের উপলব্ধি জলতলে আবার কিসের সম্পদ!
সমীক্ষায় জানা গেছে, সমুদ্রে ৫০টির বেশি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে আছে বালু, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, মোনাজাইট, জিরকন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়োডিন, অ্যালুমিনিয়াম, ফসফরাস, লিথুনিয়ার, সালফার, সিলিকন, কপার, নাইট্রোজেন, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম, বোরন, স্বর্ণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ক্লে (সিমেন্টের কাঁচামাল), দ্রবীভূত লবণসহ হরেক খনিজ পদার্থ। অপরদিকে জলজ প্রাণীদের মধ্যে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৬০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙরসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এ ছাড়াও আমাদের সমুদ্র সীমানায় প্রচুর টুনা মাছ পাওয়া যায়, যা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ মাছের আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যাপক। উল্লেখ্য, আমাদের দেশেও টুনা মাছের প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকায় পর্যটক বেড়াতে এলে টুনা মাছের বারবিকিউ তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
অন্য খনিজ পদার্থের তুলনায় সমুদ্রে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তার পরেই হচ্ছে সালফার। মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে কিংবা খাদ্যের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে হলে লবণের বিকল্প নেই, যা জোগান দিচ্ছে সমুদ্রের জলরাশি। অপরদিকে সালফারের প্রয়োজনীয়তা স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করার নয়। ইউরেনিয়ামও একটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ।
বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামের দাম যেমন চড়া, তেমনি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরেনিয়ামের চাহিদা বলে শেষ করার মতো নয়।
কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৭ শতাংশ হলে বাণিজ্যিকভাবে সেটি উত্তোলনের উপযুক্ত হয়। সেই মতে, আমাদের সমুদ্রসীমানায়, বিশেষ করে উপকূলীয় কিছু অংশে বাণিজ্যিকভাবে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের মতো মজুত রয়েছে। ইউরেনিয়াম শুধু বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায়ই নয়, বিশ্বের সমগ্র সমুদ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন টন, যা উত্তোলন করলে পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটবে না। খনি থেকে ইউরেনিয়াম আহরণ করা খুব বিপজ্জনক হলেও সমুদ্রের তলদেশ থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন তুলনামূলক নিরাপদ। অন্যদিকে প্রতি ঘনমাইল সমুদ্রজলে প্রায় ২৫ টন স্বর্ণ মজুতের তথ্যও জানা যায়। সমুদ্রের তলদেশে অফুরন্ত গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের মজুত আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পাশেই মিয়ানমার ইতিমধ্যে বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমাদের সমুদ্রসীমানায় তার চেয়েও বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেটি উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, আর মাত্র ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩১ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্যাস মজুত থাকবে। ভূপৃষ্ঠের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্রে রক্ষিত গ্যাসের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে উত্তোলন সম্ভব না হলেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক ইজারা দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে ভারত, মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলন করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে ইতিমধ্যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। গ্যাসের মতো ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রেও ইজারার মাধ্যমে আহরণ সম্ভব। কারণ, ইউরেনিয়ামের ব্যবহার দেশে খুব দ্রুততর হতে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে ইউরেনিয়ামের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
শুধু নীল সমুদ্রই নয়, সমুদ্র উপকূলেও রয়েছে অগাধ সম্পদ। সমুদ্র উপকূলে এ পর্যন্ত ১৭ প্রকার খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রোটাইল, গ্যানেট, ম্যাগনেটাইট উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলেও প্রায় ১.২৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলেও সমুদ্র উপকূলের বালু আহরণে সেই ধরনের ঝুঁকি নেই।
সুনীল অর্থনীতি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যার জন্য সমুদ্রে রক্ষিত প্রাণিজ সম্পদ, অপ্রাণিজ বা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। তাতে করে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, তেমনি বেকারদেরও কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। আরেকটি কথা হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের সম্পদ যতটা নিরাপদে আগলে রাখা সম্ভব, ততটা নিরাপদ নয় সমুদ্রসম্পদ। বিশেষ করে প্রাণিজ সম্পদের কথাই ধরা যাক। এ সম্পদের মধ্যে স্থিরতা নেই। যেকোনো সময় সীমানা অতিক্রম করতে পারে অথবা সীমানা ডিঙিয়ে কেউ কেউ আহরণ করে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: পরিবেশ ও বন্য প্রাণিবিষয়ক কলামিস্ট
আলম শাইন

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় জোন। বিশেষ করে খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার, বৈদেশিক বাণিজ্য, জাহাজশিল্প, আমদানি-রপ্তানি কিংবা পর্যটন এসব ‘নীল সমুদ্র অর্থনীতি’র আওতায় পড়ে। এই বিষয়টি সম্পর্কে সর্বসাধারণের ধারণা নেই বললেই চলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সমুদ্রসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় হলেও আহরণে একধরনের অনীহা লক্ষ করা যায় আমাদের মধ্যে। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী বিশ্বের প্রতিটি দেশই ইচ্ছে করলে সমুদ্রসম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে অনায়াসেই। কিছু কিছু দেশ নির্ভরশীল হচ্ছেও ক্রমেই। তবে ইচ্ছে করলে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হতে পারে বাংলাদেশ। এটি অনেকভাবেই সম্ভব। বিশেষ করে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের মাধ্যমে অতি সহজেই আমরা সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারি।
দুর্গম অঞ্চলের খনিজ সম্পদের তুলনায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও যথেষ্ট লাভজনক। যেমন, একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে, মৎস্য আহরণ ও লবণ উৎপাদন। এ দুটি ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ লগ্নির প্রয়োজন পড়ে না। অথচ কোটি কোটি টাকা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারীরা। এ দুটি সেক্টরে বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি অর্থ লগ্নি না থাকলেও অনেক সময় প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার।
বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ স্থলভূমি, বাদবাকি তিন ভাগ জলরাশিতে ভরপুর। মাত্র এক ভাগ স্থলভূমির মধ্যে শত শত ধরনের খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকলে বাকি তিন ভাগে কী পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে, তা অনুমেয়। এই হিসাব-নিকাশের জন্য কাগজ-কলম নিয়ে অঙ্ক কষার প্রয়োজন নেই, সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। অনেকের উপলব্ধি জলতলে আবার কিসের সম্পদ!
সমীক্ষায় জানা গেছে, সমুদ্রে ৫০টির বেশি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে আছে বালু, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, মোনাজাইট, জিরকন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়োডিন, অ্যালুমিনিয়াম, ফসফরাস, লিথুনিয়ার, সালফার, সিলিকন, কপার, নাইট্রোজেন, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম, বোরন, স্বর্ণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ক্লে (সিমেন্টের কাঁচামাল), দ্রবীভূত লবণসহ হরেক খনিজ পদার্থ। অপরদিকে জলজ প্রাণীদের মধ্যে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৬০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙরসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এ ছাড়াও আমাদের সমুদ্র সীমানায় প্রচুর টুনা মাছ পাওয়া যায়, যা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ মাছের আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যাপক। উল্লেখ্য, আমাদের দেশেও টুনা মাছের প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকায় পর্যটক বেড়াতে এলে টুনা মাছের বারবিকিউ তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
অন্য খনিজ পদার্থের তুলনায় সমুদ্রে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তার পরেই হচ্ছে সালফার। মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে কিংবা খাদ্যের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে হলে লবণের বিকল্প নেই, যা জোগান দিচ্ছে সমুদ্রের জলরাশি। অপরদিকে সালফারের প্রয়োজনীয়তা স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করার নয়। ইউরেনিয়ামও একটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ।
বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামের দাম যেমন চড়া, তেমনি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরেনিয়ামের চাহিদা বলে শেষ করার মতো নয়।
কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৭ শতাংশ হলে বাণিজ্যিকভাবে সেটি উত্তোলনের উপযুক্ত হয়। সেই মতে, আমাদের সমুদ্রসীমানায়, বিশেষ করে উপকূলীয় কিছু অংশে বাণিজ্যিকভাবে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের মতো মজুত রয়েছে। ইউরেনিয়াম শুধু বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায়ই নয়, বিশ্বের সমগ্র সমুদ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন টন, যা উত্তোলন করলে পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটবে না। খনি থেকে ইউরেনিয়াম আহরণ করা খুব বিপজ্জনক হলেও সমুদ্রের তলদেশ থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন তুলনামূলক নিরাপদ। অন্যদিকে প্রতি ঘনমাইল সমুদ্রজলে প্রায় ২৫ টন স্বর্ণ মজুতের তথ্যও জানা যায়। সমুদ্রের তলদেশে অফুরন্ত গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের মজুত আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পাশেই মিয়ানমার ইতিমধ্যে বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমাদের সমুদ্রসীমানায় তার চেয়েও বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেটি উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, আর মাত্র ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩১ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্যাস মজুত থাকবে। ভূপৃষ্ঠের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্রে রক্ষিত গ্যাসের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে উত্তোলন সম্ভব না হলেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক ইজারা দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে ভারত, মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলন করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে ইতিমধ্যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। গ্যাসের মতো ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রেও ইজারার মাধ্যমে আহরণ সম্ভব। কারণ, ইউরেনিয়ামের ব্যবহার দেশে খুব দ্রুততর হতে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে ইউরেনিয়ামের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
শুধু নীল সমুদ্রই নয়, সমুদ্র উপকূলেও রয়েছে অগাধ সম্পদ। সমুদ্র উপকূলে এ পর্যন্ত ১৭ প্রকার খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রোটাইল, গ্যানেট, ম্যাগনেটাইট উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলেও প্রায় ১.২৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলেও সমুদ্র উপকূলের বালু আহরণে সেই ধরনের ঝুঁকি নেই।
সুনীল অর্থনীতি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যার জন্য সমুদ্রে রক্ষিত প্রাণিজ সম্পদ, অপ্রাণিজ বা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। তাতে করে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, তেমনি বেকারদেরও কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। আরেকটি কথা হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের সম্পদ যতটা নিরাপদে আগলে রাখা সম্ভব, ততটা নিরাপদ নয় সমুদ্রসম্পদ। বিশেষ করে প্রাণিজ সম্পদের কথাই ধরা যাক। এ সম্পদের মধ্যে স্থিরতা নেই। যেকোনো সময় সীমানা অতিক্রম করতে পারে অথবা সীমানা ডিঙিয়ে কেউ কেউ আহরণ করে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: পরিবেশ ও বন্য প্রাণিবিষয়ক কলামিস্ট

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনাময় জোন। বিশেষ করে খনিজ সম্পদের বিশাল ভান্ডার, বৈদেশিক বাণিজ্য, জাহাজশিল্প, আমদানি-রপ্তানি কিংবা পর্যটন এসব ‘নীল সমুদ্র অর্থনীতি’র আওতায় পড়ে। এই বিষয়টি সম্পর্কে সর্বসাধারণের ধারণা নেই বললেই চলে। আরেকটি বিষয় হচ্ছে, সমুদ্রসম্পদ অতি প্রয়োজনীয় হলেও আহরণে একধরনের অনীহা লক্ষ করা যায় আমাদের মধ্যে। অথচ সমুদ্রতীরবর্তী বিশ্বের প্রতিটি দেশই ইচ্ছে করলে সমুদ্রসম্পদের ওপর নির্ভরশীল হতে পারে অনায়াসেই। কিছু কিছু দেশ নির্ভরশীল হচ্ছেও ক্রমেই। তবে ইচ্ছে করলে সবচেয়ে বেশি নির্ভরশীল হতে পারে বাংলাদেশ। এটি অনেকভাবেই সম্ভব। বিশেষ করে খনিজ পদার্থ উত্তোলনের মাধ্যমে অতি সহজেই আমরা সমৃদ্ধ দেশে পরিণত হতে পারি।
দুর্গম অঞ্চলের খনিজ সম্পদের তুলনায় সমুদ্রসম্পদ আহরণ কিছুটা ব্যয়বহুল হলেও যথেষ্ট লাভজনক। যেমন, একটি সাধারণ বিষয় হচ্ছে, মৎস্য আহরণ ও লবণ উৎপাদন। এ দুটি ক্ষেত্রে খুব বেশি অর্থ লগ্নির প্রয়োজন পড়ে না। অথচ কোটি কোটি টাকা লাভবান হতে পারেন লগ্নিকারীরা। এ দুটি সেক্টরে বাংলাদেশ সরকারের সরাসরি অর্থ লগ্নি না থাকলেও অনেক সময় প্রণোদনা দিয়ে থাকে সরকার।
বিশ্বের চার ভাগের এক ভাগ স্থলভূমি, বাদবাকি তিন ভাগ জলরাশিতে ভরপুর। মাত্র এক ভাগ স্থলভূমির মধ্যে শত শত ধরনের খনিজ পদার্থ বিদ্যমান থাকলে বাকি তিন ভাগে কী পরিমাণ সম্পদ থাকতে পারে, তা অনুমেয়। এই হিসাব-নিকাশের জন্য কাগজ-কলম নিয়ে অঙ্ক কষার প্রয়োজন নেই, সাধারণ জ্ঞানই যথেষ্ট। অনেকের উপলব্ধি জলতলে আবার কিসের সম্পদ!
সমীক্ষায় জানা গেছে, সমুদ্রে ৫০টির বেশি অতি প্রয়োজনীয় খনিজ পদার্থ রয়েছে। এর মধ্যে আছে বালু, ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম, মোনাজাইট, জিরকন, ম্যাগনেশিয়াম, পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, জিংক, আয়োডিন, অ্যালুমিনিয়াম, ফসফরাস, লিথুনিয়ার, সালফার, সিলিকন, কপার, নাইট্রোজেন, ম্যাংগানিজ, সোডিয়াম, বোরন, স্বর্ণ, জ্বালানি তেল, গ্যাস, ক্লে (সিমেন্টের কাঁচামাল), দ্রবীভূত লবণসহ হরেক খনিজ পদার্থ। অপরদিকে জলজ প্রাণীদের মধ্যে ৪৭৫ প্রজাতির মাছ, ৩৬ প্রজাতির চিংড়ি, ৩৬০ প্রজাতির শামুক-ঝিনুক, ২০ প্রজাতির কাঁকড়া, অক্টোপাস, হাঙরসহ নানা প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণিজ সম্পদ রয়েছে বঙ্গোপসাগরে। এ ছাড়াও আমাদের সমুদ্র সীমানায় প্রচুর টুনা মাছ পাওয়া যায়, যা খেতে যেমন সুস্বাদু, তেমনি এ মাছের আন্তর্জাতিক চাহিদা ব্যাপক। উল্লেখ্য, আমাদের দেশেও টুনা মাছের প্রচুর চাহিদা তৈরি হচ্ছে। বিশেষ করে সৈকত এলাকায় পর্যটক বেড়াতে এলে টুনা মাছের বারবিকিউ তাঁদের পছন্দের তালিকায় থাকে।
অন্য খনিজ পদার্থের তুলনায় সমুদ্রে দ্রবীভূত লবণের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি, তার পরেই হচ্ছে সালফার। মানুষকে সুস্থভাবে বেঁচে থাকতে হলে কিংবা খাদ্যের স্বাদ ফিরিয়ে আনতে হলে লবণের বিকল্প নেই, যা জোগান দিচ্ছে সমুদ্রের জলরাশি। অপরদিকে সালফারের প্রয়োজনীয়তা স্বল্প পরিসরে লিখে শেষ করার নয়। ইউরেনিয়ামও একটি দুষ্প্রাপ্য খনিজ পদার্থ।
বিশ্ববাজারে ইউরেনিয়ামের দাম যেমন চড়া, তেমনি রয়েছে ব্যাপক চাহিদা। বিশেষ করে জার্মানি, জাপান ও যুক্তরাষ্ট্রের কাছে ইউরেনিয়ামের চাহিদা বলে শেষ করার মতো নয়।
কোনো স্থানে ইউরেনিয়ামের মাত্রা ৭ শতাংশ হলে বাণিজ্যিকভাবে সেটি উত্তোলনের উপযুক্ত হয়। সেই মতে, আমাদের সমুদ্রসীমানায়, বিশেষ করে উপকূলীয় কিছু অংশে বাণিজ্যিকভাবে ইউরেনিয়াম উত্তোলনের মতো মজুত রয়েছে। ইউরেনিয়াম শুধু বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকায়ই নয়, বিশ্বের সমগ্র সমুদ্রে পর্যাপ্ত পরিমাণে মজুত রয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় চার বিলিয়ন টন, যা উত্তোলন করলে পরিবেশের ভারসাম্যে ব্যাঘাত ঘটবে না। খনি থেকে ইউরেনিয়াম আহরণ করা খুব বিপজ্জনক হলেও সমুদ্রের তলদেশ থেকে ইউরেনিয়াম উত্তোলন তুলনামূলক নিরাপদ। অন্যদিকে প্রতি ঘনমাইল সমুদ্রজলে প্রায় ২৫ টন স্বর্ণ মজুতের তথ্যও জানা যায়। সমুদ্রের তলদেশে অফুরন্ত গ্যাস এবং জ্বালানি তেলের মজুত আছে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করেন। বাংলাদেশের সমুদ্রসীমার পাশেই মিয়ানমার ইতিমধ্যে বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্রের সন্ধান পেয়েছে। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, আমাদের সমুদ্রসীমানায় তার চেয়েও বড় ধরনের গ্যাসক্ষেত্র রয়েছে, সেটি উত্তোলনের উদ্যোগ নিতে হবে। কারণ, আর মাত্র ১০ বছর অর্থাৎ ২০৩১ সাল পর্যন্ত আমাদের গ্যাস মজুত থাকবে। ভূপৃষ্ঠের গ্যাস ফুরিয়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্রে রক্ষিত গ্যাসের দিকে আমাদের নজর দিতে হবে। এই মুহূর্তে উত্তোলন সম্ভব না হলেও ভারত ও মিয়ানমার থেকে অর্জিত সমুদ্রসীমায় ২৬টি ব্লক ইজারা দিয়ে সেখান থেকে প্রায় ৪০ ট্রিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস পাওয়া সম্ভব বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। সমুদ্রের খনিজ সম্পদ উত্তোলনে ভারত, মিয়ানমারের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তারা সমুদ্রের তেল-গ্যাস উত্তোলন করে নিজেদের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশে রপ্তানি করে ইতিমধ্যে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করছে। গ্যাসের মতো ইউরেনিয়ামের ক্ষেত্রেও ইজারার মাধ্যমে আহরণ সম্ভব। কারণ, ইউরেনিয়ামের ব্যবহার দেশে খুব দ্রুততর হতে যাচ্ছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হলে ইউরেনিয়ামের প্রয়োজনীয়তা দেখা দেবে।
শুধু নীল সমুদ্রই নয়, সমুদ্র উপকূলেও রয়েছে অগাধ সম্পদ। সমুদ্র উপকূলে এ পর্যন্ত ১৭ প্রকার খনিজ বালুর সন্ধান পাওয়া গেছে। এর মধ্যে ইলমেনাইট, জিরকন, রোটাইল, গ্যানেট, ম্যাগনেটাইট উল্লেখযোগ্য। ধারণা করা হচ্ছে, সমুদ্র উপকূলেও প্রায় ১.২৪ মিলিয়ন টন খনিজ বালু রয়েছে। যার আনুমানিক মূল্য ১২ হাজার কোটি টাকা। উল্লেখ্য, নদী থেকে বালু উত্তোলনের ফলে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হলেও সমুদ্র উপকূলের বালু আহরণে সেই ধরনের ঝুঁকি নেই।
সুনীল অর্থনীতি কাজে লাগাতে পারলে বাংলাদেশের পক্ষে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা আয় করা সম্ভব। যার জন্য সমুদ্রে রক্ষিত প্রাণিজ সম্পদ, অপ্রাণিজ বা খনিজ সম্পদ উত্তোলনের ব্যবস্থা নিতে হবে দ্রুত। তাতে করে দেশ যেমন অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হবে, তেমনি বেকারদেরও কর্মস্থানের ব্যবস্থা হবে। আরেকটি কথা হচ্ছে, ভূপৃষ্ঠের সম্পদ যতটা নিরাপদে আগলে রাখা সম্ভব, ততটা নিরাপদ নয় সমুদ্রসম্পদ। বিশেষ করে প্রাণিজ সম্পদের কথাই ধরা যাক। এ সম্পদের মধ্যে স্থিরতা নেই। যেকোনো সময় সীমানা অতিক্রম করতে পারে অথবা সীমানা ডিঙিয়ে কেউ কেউ আহরণ করে নিয়ে যেতে পারে।
লেখক: পরিবেশ ও বন্য প্রাণিবিষয়ক কলামিস্ট

মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
১১ মিনিট আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
২১ মিনিট আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৩১ মিনিট আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগে
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি কথা বলেছেন আজকের পত্রিকার মাসুদ রানার সঙ্গে।
মাসুদ রানা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁরা বেশিই করছেন। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি এবং হকার উচ্ছেদের মূল কারণ কী? শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, নাকি অন্য কোনো উদ্দেশ্য আছে?
চা-দোকানি ও হকাররা ক্যাম্পাসের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করেন, এ রকম তথ্য আমরা এর আগে শুনিনি বা পাইনি। যেটা আমরা জেনেছি, এখানে কিছু ভবঘুরে, পাগল থাকেন; বিশেষ করে নারী শিক্ষার্থীরা তাঁদের কাছে নিরাপত্তাহীনতায় ভোগেন। এখানে মাদকাসক্তদের আড্ডার বিষয়টা বড় করে উপস্থাপন করা হয়। সেসবের সঙ্গে হকারদের কোনো সম্পর্ক আছে বলে আমাদের ধারণা নেই। ধারণা নেই বলতে বোঝাতে চাচ্ছি, আসলে তাঁদের সঙ্গে এসবের কোনো সম্পর্ক নেই। কারণ, যদি সম্পর্ক থাকত, তাহলে ক্যাম্পাসের পাশে যে শাহবাগ থানা আছে, তারা তা জানত। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে কারা মাদক বিক্রি করে, সেটা তারা জানে এবং চাইলে তাদেরকে ধরতে পারে। কিন্তু চা-বিক্রেতা বা হকারদের সঙ্গে এর কোনো সম্পর্ক নেই।
ডাকসুর কোনো প্রতিনিধি কি এভাবে হকার উচ্ছেদ করতে পারেন? এটা তো প্রশাসনের দায়িত্বে হওয়ার কথা?
সত্যি বলতে কি, ডাকসু প্রতিনিধিদের এগুলো করার কথা নয়। এটা যাঁরা করেছেন, তাঁরা নিয়মবহির্ভূতভাবেই করেছেন। এটা করার কোনো এখতিয়ার তাঁদের নেই। তাঁরা বরং প্রশাসনের কাছে দাবি তুলতে পারেন, আপনারা এখান থেকে চা-দোকানি ও হকারদের সরিয়ে নিন এবং এখানে একটা বিকল্প ব্যবস্থা করুন। এখানে চা-দোকানি বা হকাররা কেন এসেছেন? ক্যাম্পাসে সস্তা খাবারের চাহিদা আছে বলেই তাঁরা এখানে ব্যবসা করতে পারছেন। এখানে মেট্রোরেলের কারণে মানুষের যাতায়াত আছে। দুপুর ও রাতের খাবারের পরেও শিক্ষার্থীদের খিদে লাগাটা স্বাভাবিক ব্যাপার। তাঁরাই কিন্তু এসব দোকানের বড় কনজ্যুমার বা ভোক্তা।
এখন তাঁরা যদি বলেন, এখানে কেন তাঁরা এলেন, কেন তাঁদের ঢুকতে দেওয়া হলো? তাহলে বলতে হবে, সেটা তো দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংস্কৃতির অংশ হয়ে গেছেন। সবার জানা থাকার কথা, জুলাই আন্দোলনের সময় এই মানুষগুলোই শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। অনেক সময় তাঁরা শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা দিয়েছেন। শিক্ষার্থীরা বিপদগ্রস্ত হলে তাঁদের আশ্রয় দিয়েছেন এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের সাহায্যও করেছেন। এভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে হকার বা চা-দোকানিদের একটা দীর্ঘ সময়ের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে।
আরেকটা বিষয় লক্ষ করার মতো, তাঁদের বেশির ভাগই একসময় বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যানটিন বয় ছিলেন নতুবা ক্যানটিনের অন্য কাজ করেছেন। এ ধরনের লোকজন অবসর সময়ে এই কাজের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এভাবে তাঁরা আবার ক্যাম্পাসের ইকোসিস্টেমের অংশ হয়ে গেছেন। এঁদেরকে বহিরাগত হিসেবে দেখার কোনো সুযোগ নেই।
উচ্ছেদ করা দোকানি বা হকারদের বিরুদ্ধে ‘মাদক কারবারি’র অভিযোগ আনা হয়েছে। ঢালাওভাবে সবাইকে অভিযুক্ত করা কতটা যৌক্তিক?
ক্যাম্পাসে একটা সিস্টেম থাকা দরকার। কাদেরকে এবং কীভাবে বসার অনুমতি দেওয়া হবে? এই অনুমতি যদি কেউ ভেতরে ভেতরে দিয়ে থাকে, কোনো চাঁদাবাজির ব্যাপার থাকে এবং সেখান থেকে কোনো অর্থ আয়ের ব্যাপার থাকে, তাহলে তাঁরা কোনোভাবেই সিস্টেমের মধ্যে আসতে চাইবেন না। সেটা আইনি পথ নয়। লিখিত অনুমতি না থাকায় মুখে মুখে একধরনের অনুমতি দেওয়ার মতো ব্যাপার। অর্থাৎ মৌখিক চুক্তি।
যেটাকে তাঁরা আইনবহির্ভূত বলছেন, সেটার কি কোনো লিখিত দলিল আছে? লিখিত থাকলে সেটা দেখার বিষয়। যদি কেউ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তার তো একটা নীতিমালা থাকা উচিত। সেই নীতিমালা অনুযায়ী হকারদের বসতে দেওয়া হবে। কিন্তু সেটা তো আমরা দেখতে পাচ্ছি না।
ডাকসুর পক্ষ থেকে উচ্ছেদ অভিযানে সরাসরি যুক্ত হওয়া কি সাধারণ শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধিত্ব করার চেয়ে প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় না?
প্রশাসন বা অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষার ইঙ্গিত দেয় কি না, সেটা তো আমরা জানি না। তবে অন্য কোনো গোষ্ঠীর স্বার্থ জড়িত থাকতে পারে। সাধারণ শিক্ষার্থীদের এ ধরনের কাজ করার কথা নয়। এর মধ্যে আরও কিছু ঘটনা ঘটেছে। আমি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেখেছি, বিভিন্ন জায়গায় স্থাপনা তৈরি করা হয়েছে, সেখানে দু-তিন রাতের মধ্যে দোকান বসানো হয়েছে। এই দোকানগুলো বসানো হয়েছে নতুন প্রশাসন আসার পর। তাঁরা কীভাবে এখানে এসে দোকান খুলতে পারলেন? এখানে নিশ্চয় কোনো গোষ্ঠীস্বার্থের ব্যাপার আছে, যারা এই নতুন দোকানিদের সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। অনুমান করতে পারি, এখানে কোনো না কোনোভাবে একটা বিশেষ গোষ্ঠীর স্বার্থ থাকতে পারে।
যে বামপন্থী ছাত্রনেতারা এসবের বিরোধিতা করেছেন, তাঁদেরকে ‘গাঞ্জাটিয়া’সহ আপত্তিকর শব্দে গালি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। এ ধরনের ভাষার ব্যবহার কি ছাত্ররাজনীতির পরিবেশকে বিব্রত করে না?
যাঁরা এভাবে কথা বলছেন, তাঁদের একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। উদ্দেশ্যটা হলো, যাঁরা তাঁদের এসব অপকর্মে বাধা দিচ্ছেন, তাঁদের কোনো না কোনোভাবে মানুষের কাছে হেয় করা। আমাদের সমাজব্যবস্থা অনুযায়ী, কাউকে হেয়, অপমান করা এবং ট্যাগ দেওয়ার মধ্য দিয়ে এমনভাবে চাপ প্রয়োগ করা হয়, যেন তাঁরা ভবিষ্যতে কোনো ঘটনায় প্রতিবাদ করতে না পারেন। সেই উদ্দেশ্য থেকে বামপন্থীদের ‘গাঞ্জাটিয়া’ এবং ভবঘুরে ও হকারদের সক্রিয়ভাবে আশ্রয় দেওয়ার অভিযোগ করা হয়েছে। কোনো বামপন্থী বা সাধারণ শিক্ষার্থী বলেননি যে তাঁরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা চান না। বামপন্থী ছাত্রনেতারা কিন্তু একটা প্রক্রিয়ার কথা বলেছেন।
এখন হকার উচ্ছেদ করা হচ্ছে। কিছুদিন পর অন্য কোনো হকার অন্য প্রক্রিয়ায় ফিরে আসতে পারেন। তাঁরাই যদি আবার নারী শিক্ষার্থীদের গোপনে ছবি তোলেন বা ভিডিও করেন? সেটার কী হবে?
ডাকসু প্রতিনিধি সত্যি সত্যি নিরাপত্তার কথা ভেবে থাকলে আগে তাঁদেরকে জানতে হবে, কোন কোন বিষয় একজন নারী শিক্ষার্থীকে নিরাপত্তাহীন করে তোলে। শিক্ষার্থীরা কি অভিযোগ করেছেন, যাঁরা প্রকাশ্যে খাবার বিক্রি করেন, তাঁরা নারী শিক্ষার্থীদের যৌন কোনো ইঙ্গিত দিয়েছেন কিংবা শ্লীলতাহানি করেছেন? অদ্ভুত ব্যাপার হলো, ডাকসুর যে দুজন প্রতিনিধি হকার ও চা-দোকানিদের পিটিয়েছেন, তাঁরা কিন্তু অভিযোগ করেছেন, তাঁরা মাদকাসক্তি নির্মূল করছেন। ব্যাপারটিকে তাঁরা ঘুরিয়ে এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন, যাঁরা এটার বিরুদ্ধে কথা বলেন, তাঁরা (বামপন্থীরা) যেন মুখ খুলতে না পারেন।
এই পুরো ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের ভূমিকা কতটা নিরপেক্ষ ছিল বলে আপনি মনে করেন?
আমার মনে হয়, ডাকসুতে যাঁরা প্রতিনিধি নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁরা একটা বিশেষ দলের আজ্ঞাবহ হয়ে সুচিন্তিতভাবে এ কাজগুলো করছেন। ডাকসুর প্রতিনিধিরা প্রশাসনের ওপর ধারাবাহিকভাবে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন, যাতে প্রশাসন কোনো ভূমিকা না নেয়। এই সুযোগে ছাত্রপ্রতিনিধিরা ভূমিকা গ্রহণ করছেন। এ কারণে আমি এ ঘটনাকে প্রশাসনিক ব্যর্থতা বলব।
ডাকসুর গঠনতন্ত্রে এসব না থাকার পরেও তাঁরা এটা কীভাবে করতে পারলেন। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তা কি এড়াতে পারে?
এই প্রশাসন কিন্তু আরও অনেক কিছু করেনি। তাদের দায়িত্বের কাজ না করার কারণে এখানে অনেক ঘটনা ঘটেছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সাম্য হত্যাকাণ্ড হয়েছে। ওই সময় কিন্তু ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের আসার নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। তা সত্ত্বেও এ ঘটনা ঘটেছে। সেই হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রশাসন করতে পারেনি।
কোনো বহিরাগত ক্যাম্পাসে এসে কোনো নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছে, সে রকম কিছু আমরা শুনিনি। কিন্তু আমরা দেখেছি, বিশ্ববিদ্যালয়েরই একজন কর্মচারী একজন নারী শিক্ষার্থীকে যৌন হয়রানি করেছেন। তাঁর অপরাধের কারণে তাঁকে থানায় পাঠানো হয়েছে। পরবর্তী সময়ে তাঁকে থানা থেকে উদ্ধার করে নিয়ে আসা হয়েছে, তাঁকে ফুলের মালাও পরানো হয়েছে।
এই উদাহরণগুলো থেকে বোঝা যায়, প্রশাসন আসলে কোনো ধরনের অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেয়নি। তার কারণে ঘটনাগুলো বারবার ঘটছে।
গত সরকারের সময় ছাত্রলীগ যে অপকর্মগুলো করেছিল, বর্তমান ডাকসু নেতৃত্ব কি সেদিকে অগ্রসর হচ্ছেন বলে আপনি মনে করেন?
আগে ছাত্রলীগ যা করত, এখনকার ডাকসু প্রতিনিধিরা কম কিছু করছেন না। ক্ষেত্রবিশেষে তাঁরা বেশিই করছেন। এগুলো নিয়ে তাঁদের মধ্যে কোনো অনুশোচনাও নেই। তাঁরা বলছেন, বামপন্থীদের ঠ্যাং ভেঙে দেবেন। যাঁরা ঘটনাগুলোর প্রতিবাদ করছেন, তাঁদেরকে হেয় করছেন। বিভিন্নভাবে তাঁদেরকে অপমান করা ও অপবাদ দেওয়া হচ্ছে।
গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, একটা ভিডিওতে দেখা গেছে, একজন ভবঘুরের ব্যক্তিগত ব্যাগ থেকে জিনিসপত্র বের করার সঙ্গে কনডম পাওয়ার ঘটনাটি প্রচার করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো শিক্ষার্থী কি কারও ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘন করতে পারেন? কিছুদিন আগে আমাদের একজন শিক্ষার্থী অভিযোগ করেছেন, দুই প্রক্টরিয়াল বডির সদস্য তাঁর মোবাইল ফোন চেক করেছেন। এই যে ধারাটা শুরু হয়েছে, তাতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাবে। শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভয়ভীতি ঢোকানো হচ্ছে। শিক্ষার্থীরা স্বাধীনভাবে চলাফেরা করতে পারবেন না।
সময় দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
আজকের পত্রিকাকেও ধন্যবাদ।

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনা
১২ আগস্ট ২০২১
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
২১ মিনিট আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৩১ মিনিট আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেমামুনুর রশীদ

মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী। তেমনি সাম্প্রতিককালে আমরা একটা মৃত্যুর মিছিল দেখছি, যার সূচনা হয়েছে যতীন সরকার থেকে। যতীন সরকার ছিলেন নেত্রকোনার বারহাট্টা গ্রামের একজন ছাপোষা শিক্ষক। দেশ বিভাগের আগে একজন শিক্ষক কেমন ছিলেন, তা সহজে অনুমান করা যায়। কিন্তু তিনি বলেও গেছেন ছাত্রদের এবং কৌতূহলী মানুষদের, সেগুলো পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়, আবার পাঠ্যবই থেকে পড়িয়েছেনও।
তাঁর অনেক মূল্যবান লেখার মধ্যে একটি লেখা, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন।’ এই বইয়ে তিনি দার্শনিকতার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, একটা পুকুরপাড়ে দেখা গেল অনেক মানুষের জটলা, কৌতূহলবশত সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কী হয়েছে?’ উত্তরে একজন এসে বললেন, ‘ঐ যে পুকুরে মাছ ধরছে।’ এর পরের জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কী করছেন?’ উত্তর, ‘আমরা দার্শনিক।’ কথাটা নেত্রকোনার একটি আঞ্চলিক কথা বটে, কিন্তু যতীন সরকার তাকে একটা দার্শনিক অভিধা দিয়েছেন। যিনি দর্শন করেন, তিনি তো দার্শনিক বটেই। পৃথিবীর সব দার্শনিকের দর্শনচিন্তার শিকড় তো সেটাই, কিন্তু তারপর তিনি কী দেখেন? শুধুই কি দেখা, নাকি এই দেখা মানবজাতির অভিজ্ঞতায় নতুন একটা উপাদান হিসেবে যুক্ত হলো, সেটাই দেখার বিষয়। যতীন সরকার লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’। তিনি পাকিস্তানের জন্ম দেখেছিলেন, মৃত্যুও।
তাই তার আনুপূর্বিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভাবনা উপস্থিত করেছিলেন। পাঠক তাতে ঋদ্ধ হয়েছিল। এভাবে কোনো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় কি না, তার ভবিষ্যৎই-বা কী দাঁড়ায়? বরং চিরতরে একটা সাম্প্রদায়িকতার উৎস এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকেই বেগবান করে তোলে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনায় তার উদ্বেগ শুধু নয়, একটা ব্যাখ্যাও আমাদের আলোড়িত করত। প্রায়ই একই সময়ে আরেকজন শিক্ষক, তিনি এসেছেন পশ্চিম বাংলার বর্ধমান ও কলকাতা থেকে—বদরুদ্দীন উমর।
পিতা আবুল হাশিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দেখেছেন কিন্তু ছোটবেলা থেকে পরিবারের অন্য আত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং সেই প্রভাব ছিল সাম্যবাদের পক্ষে। পাকিস্তানের দার্শনিক ভিত্তিটায় তিনি প্রথমেই আঘাত করেন। তাঁর যুগান্তকারী রচনা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ও ‘সংস্কৃতির সংকট’। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটটিতেই যাদের ভাবনায় দেখা দেয়—‘আমরা বাঙালি না মুসলমান’। এই সময়ই তিনি ‘ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামক বইটি লিখেছিলেন। সংকটটা যে তখন শুধু ভাষার ছিল না, সঙ্গে ছিল আরও অনেক ধরনের বাস্তবতা, তা এত সবিস্তারে যুক্তিসহযোগে তাঁর মতো আর কেউ উপস্থাপন করেননি। আমৃত্যু তিনি নিরলসভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ এক ফলক, যাকে স্পর্শ না করে কোনোভাবেই হাঁটা যায় না। সেই পথ, সেই ঘটনার সাক্ষী আরেক লেখক, গবেষক আহমদ রফিক। পেশায় চিকিৎসক। ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী শুধু নন, সংগঠক, নেতা এবং আজীবন ভাষার আলো তিনি ছড়িয়ে গেছেন। লেখক হিসেবে তাঁর দিগন্ত বিস্তৃত, কিন্তু তিনি শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, ভাষার দর্শনেরও প্রবক্তা।
সম্প্রতি এই মৃত্যুর মিছিলে যিনি যুক্ত হয়েছেন, তিনি বয়সে তাঁদের চেয়ে ছোট হলেও ছিলেন দর্শনের ছাত্র। নিজেকে তিনি কখনোই শিক্ষক ভাবতেন না; বরং ছাত্র ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি দর্শনকে ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে একটা দিগন্তে তাঁর বিচরণ তো ছিলই। বিপুলসংখ্যক ছাত্র-অছাত্র-পাঠকের মধ্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটা প্রভাব তৈরি হয়েছিল, যা তাঁর মৃত্যুর পর নানা মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গল্প, নাটক লিখেছেন, অসংখ্য প্রবন্ধের রচয়িতাও। এ দেশে যা একেবারেই দুর্লভ, সেই কাজও তিনি করেছেন। তা হলো চিত্রকলা ও সাহিত্যের সমালোচনা। এ কাজগুলো হয়তো আরও অনেকে করে থাকেন, কিন্তু মনজুরের যে আত্মগত অঙ্গীকার, তা একেবারেই দুর্লভ। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো শিল্পীকে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করার কাজটিও তিনি প্রায় নিয়মিতই করতেন; বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে। তিনি তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন নিয়মিত। সর্বোপরি আধুনিকতায়, চিন্তায়, মননে ও ব্যবহারিক জীবনে সব সময় আধুনিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতেন প্রবলভাবে। আধুনিক মনন একবার গ্রহণ করলে পূর্বাপর তাবৎ জ্ঞানকে একটা পরিশীলিত এবং সময়োপযোগী হিসেবে গ্রহণ করাটা সহজ হয়। সাধারণত মতাদর্শগত জ্ঞান এবং ভাবনা যদি গভীরভাবে মননে প্রোথিত হয়ে যায়, তাহলে মুক্তবুদ্ধিকে ধারণ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।
যতীন সরকার যখন জন্মেছিলেন, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক দর্শন মার্ক্সবাদের প্রভাব সারা বিশ্বে স্পন্দিত হয়েছিল। বস্তুবাদী দর্শনের নিরিখে একধরনের গবেষণালব্ধ এবং যুক্তিতর্কের উপস্থাপনার সময় এসেছিল। বাড়ির পাশেই দেখতে পেয়েছিলেন টংক বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ। সেই সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ—এসব তাঁর চিন্তাকে নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু ওই পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শনের মধ্য দিয়ে একদা আবিষ্কার করলেন, তিনি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। সংখ্যালঘুর সেই জটিল নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর
কথা নিঃসংকোচে লিখে গেছেন এবং প্রগতিশীল রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরও ছিলেন একই সময়ের মানুষ। মার্ক্সবাদের দীক্ষায় তাঁর যৌবন ও উত্তরকাল কেটেছে। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর এতই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কাজ ছেড়ে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার—সবই ছিল তাঁর তুখোড় সমালোচনার ক্ষেত্র। রাজনীতি কখনো দার্শনিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বাইরে চলে যায়। যুক্তি কখনো একপেশে হয়ে
যায়। তিনি একই মতাদর্শের মানুষেরও সমালোচনা করতেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। একটা সমাজে এখন এ রকম মানুষের প্রবল অভাব।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, সংগঠক, সাক্ষী আহমদ রফিক শুধু চিকিৎসক হিসেবেই জীবনটা পার করে দিতে পারতেন। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, নব্বই-ঊর্ধ্ব জীবনে শিক্ষকের পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি সাহিত্যেও মনোনিবেশ করেছিলেন, কিন্তু চিন্তায় ছিলেন প্রগতিশীল। সুদীর্ঘ জীবনে একজন মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যাঁরা লড়াই করেন, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন।
গত ৫৪ বছরের রাজনীতিতে সরকার সমাজের কথা ভাবেনি। রাষ্ট্রও নিরপেক্ষ ও মানবিক হতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রায় ২৪ বছর এবং পরে বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি সময় একটা অগণতান্ত্রিক সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে চলেছে।
তাই সমাজে মূল্যবোধ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই ঘটেনি; বরং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকে করায়ত্ত করার জন্য কালক্ষেপণ করেছে। এই ব্যবস্থায় অর্থ এসে দাঁড়িয়েছে একটা কেন্দ্রস্থলে। সব ক্ষেত্রে পেশাদারি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। সামরিক বাহিনীও ব্যবহৃত হয়েছে এর পাহারাদার হিসেবে। আজকের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা তারই প্রতিফলন। যে সময়ে এই মানুষগুলো লোকান্তরিত হলেন, সে-ও এক অস্থির সময়। তাঁদের মূল্যায়নের জন্য এই সময়টি তেমন সুস্থির সময় নয়। এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য অনাগতকালে কোনো মহৎ মানুষের জন্ম হবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত। অসংখ্য রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বিপুল বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি কী করে নিরাপদ হবে, তার ভাবনা কোথায়?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী। তেমনি সাম্প্রতিককালে আমরা একটা মৃত্যুর মিছিল দেখছি, যার সূচনা হয়েছে যতীন সরকার থেকে। যতীন সরকার ছিলেন নেত্রকোনার বারহাট্টা গ্রামের একজন ছাপোষা শিক্ষক। দেশ বিভাগের আগে একজন শিক্ষক কেমন ছিলেন, তা সহজে অনুমান করা যায়। কিন্তু তিনি বলেও গেছেন ছাত্রদের এবং কৌতূহলী মানুষদের, সেগুলো পাঠ্যপুস্তকের বিষয় নয়, আবার পাঠ্যবই থেকে পড়িয়েছেনও।
তাঁর অনেক মূল্যবান লেখার মধ্যে একটি লেখা, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন।’ এই বইয়ে তিনি দার্শনিকতার সংজ্ঞা নির্ণয় করতে গিয়ে একটি ঘটনার উল্লেখ করেছেন। সেটি হচ্ছে, একটা পুকুরপাড়ে দেখা গেল অনেক মানুষের জটলা, কৌতূহলবশত সেখানে গিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, ‘এখানে কী হয়েছে?’ উত্তরে একজন এসে বললেন, ‘ঐ যে পুকুরে মাছ ধরছে।’ এর পরের জিজ্ঞাসা, ‘আপনারা কী করছেন?’ উত্তর, ‘আমরা দার্শনিক।’ কথাটা নেত্রকোনার একটি আঞ্চলিক কথা বটে, কিন্তু যতীন সরকার তাকে একটা দার্শনিক অভিধা দিয়েছেন। যিনি দর্শন করেন, তিনি তো দার্শনিক বটেই। পৃথিবীর সব দার্শনিকের দর্শনচিন্তার শিকড় তো সেটাই, কিন্তু তারপর তিনি কী দেখেন? শুধুই কি দেখা, নাকি এই দেখা মানবজাতির অভিজ্ঞতায় নতুন একটা উপাদান হিসেবে যুক্ত হলো, সেটাই দেখার বিষয়। যতীন সরকার লিখেছিলেন, ‘পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শন’। তিনি পাকিস্তানের জন্ম দেখেছিলেন, মৃত্যুও।
তাই তার আনুপূর্বিক বিষয়াদি নিয়ে তাঁর ভাবনা উপস্থিত করেছিলেন। পাঠক তাতে ঋদ্ধ হয়েছিল। এভাবে কোনো রাষ্ট্র নির্মাণ করা যায় কি না, তার ভবিষ্যৎই-বা কী দাঁড়ায়? বরং চিরতরে একটা সাম্প্রদায়িকতার উৎস এবং ধর্মের রাজনৈতিক ব্যবহারকেই বেগবান করে তোলে। বাংলাদেশের প্রতিটি ঘটনায় তার উদ্বেগ শুধু নয়, একটা ব্যাখ্যাও আমাদের আলোড়িত করত। প্রায়ই একই সময়ে আরেকজন শিক্ষক, তিনি এসেছেন পশ্চিম বাংলার বর্ধমান ও কলকাতা থেকে—বদরুদ্দীন উমর।
পিতা আবুল হাশিমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন দেখেছেন কিন্তু ছোটবেলা থেকে পরিবারের অন্য আত্মীয়দের দ্বারা প্রভাবিত হয়েছিলেন এবং সেই প্রভাব ছিল সাম্যবাদের পক্ষে। পাকিস্তানের দার্শনিক ভিত্তিটায় তিনি প্রথমেই আঘাত করেন। তাঁর যুগান্তকারী রচনা ‘সাম্প্রদায়িকতা’ ও ‘সংস্কৃতির সংকট’। বাঙালি মুসলমানের আত্মপরিচয়ের সংকটটিতেই যাদের ভাবনায় দেখা দেয়—‘আমরা বাঙালি না মুসলমান’। এই সময়ই তিনি ‘ভাষা আন্দোলন ও তৎকালীন রাজনীতি’ নামক বইটি লিখেছিলেন। সংকটটা যে তখন শুধু ভাষার ছিল না, সঙ্গে ছিল আরও অনেক ধরনের বাস্তবতা, তা এত সবিস্তারে যুক্তিসহযোগে তাঁর মতো আর কেউ উপস্থাপন করেননি। আমৃত্যু তিনি নিরলসভাবে বাংলা ও ইংরেজিতে লিখে গেছেন।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভাষা আন্দোলন এতই গুরুত্বপূর্ণ এক ফলক, যাকে স্পর্শ না করে কোনোভাবেই হাঁটা যায় না। সেই পথ, সেই ঘটনার সাক্ষী আরেক লেখক, গবেষক আহমদ রফিক। পেশায় চিকিৎসক। ভাষা আন্দোলনের সময় ছিলেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্র। ভাষা আন্দোলনের সাক্ষী শুধু নন, সংগঠক, নেতা এবং আজীবন ভাষার আলো তিনি ছড়িয়ে গেছেন। লেখক হিসেবে তাঁর দিগন্ত বিস্তৃত, কিন্তু তিনি শুধু ভাষা আন্দোলন নয়, ভাষার দর্শনেরও প্রবক্তা।
সম্প্রতি এই মৃত্যুর মিছিলে যিনি যুক্ত হয়েছেন, তিনি বয়সে তাঁদের চেয়ে ছোট হলেও ছিলেন দর্শনের ছাত্র। নিজেকে তিনি কখনোই শিক্ষক ভাবতেন না; বরং ছাত্র ভাবতেই অভ্যস্ত ছিলেন। তিনি দর্শনকে ব্যাখ্যা করতে ভালোবাসতেন। সেই সঙ্গে ইংরেজি সাহিত্যের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে একটা দিগন্তে তাঁর বিচরণ তো ছিলই। বিপুলসংখ্যক ছাত্র-অছাত্র-পাঠকের মধ্যে সৈয়দ মনজুরুল ইসলামের একটা প্রভাব তৈরি হয়েছিল, যা তাঁর মৃত্যুর পর নানা মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। তিনি গল্প, নাটক লিখেছেন, অসংখ্য প্রবন্ধের রচয়িতাও। এ দেশে যা একেবারেই দুর্লভ, সেই কাজও তিনি করেছেন। তা হলো চিত্রকলা ও সাহিত্যের সমালোচনা। এ কাজগুলো হয়তো আরও অনেকে করে থাকেন, কিন্তু মনজুরের যে আত্মগত অঙ্গীকার, তা একেবারেই দুর্লভ। স্বপ্রণোদিত হয়ে কোনো শিল্পীকে আলোচনার বিষয়বস্তুতে পরিণত করার কাজটিও তিনি প্রায় নিয়মিতই করতেন; বিশেষ করে তরুণদের নিয়ে। তিনি তরুণদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতেন নিয়মিত। সর্বোপরি আধুনিকতায়, চিন্তায়, মননে ও ব্যবহারিক জীবনে সব সময় আধুনিকতার চর্চাকে উৎসাহিত করতেন প্রবলভাবে। আধুনিক মনন একবার গ্রহণ করলে পূর্বাপর তাবৎ জ্ঞানকে একটা পরিশীলিত এবং সময়োপযোগী হিসেবে গ্রহণ করাটা সহজ হয়। সাধারণত মতাদর্শগত জ্ঞান এবং ভাবনা যদি গভীরভাবে মননে প্রোথিত হয়ে যায়, তাহলে মুক্তবুদ্ধিকে ধারণ করাও কঠিন হয়ে যেতে পারে।
যতীন সরকার যখন জন্মেছিলেন, তখন পৃথিবীর সবচেয়ে আধুনিক দর্শন মার্ক্সবাদের প্রভাব সারা বিশ্বে স্পন্দিত হয়েছিল। বস্তুবাদী দর্শনের নিরিখে একধরনের গবেষণালব্ধ এবং যুক্তিতর্কের উপস্থাপনার সময় এসেছিল। বাড়ির পাশেই দেখতে পেয়েছিলেন টংক বিদ্রোহ, হাজং বিদ্রোহ। সেই সঙ্গে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ভারতীয় গণনাট্য সংঘ—এসব তাঁর চিন্তাকে নিশ্চয় অনুপ্রাণিত করেছিল। কিন্তু ওই পাকিস্তানের জন্ম মৃত্যু দর্শনের মধ্য দিয়ে একদা আবিষ্কার করলেন, তিনি সংখ্যালঘুতে পরিণত হয়েছেন। সংখ্যালঘুর সেই জটিল নিরাপত্তাহীনতা সত্ত্বেও তিনি তাঁর
কথা নিঃসংকোচে লিখে গেছেন এবং প্রগতিশীল রাজনীতিকে প্রভাবিত করেছেন।
বদরুদ্দীন উমরও ছিলেন একই সময়ের মানুষ। মার্ক্সবাদের দীক্ষায় তাঁর যৌবন ও উত্তরকাল কেটেছে। বাম রাজনীতির সঙ্গে সম্পর্ক তাঁর এতই ঘনিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল যে বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকের কাজ ছেড়ে তিনি সার্বক্ষণিক রাজনীতিতে যোগ দিয়েছিলেন। সেই সঙ্গে রাষ্ট্র, সমাজ, সরকার—সবই ছিল তাঁর তুখোড় সমালোচনার ক্ষেত্র। রাজনীতি কখনো দার্শনিকতা ও মুক্তবুদ্ধির চর্চার বাইরে চলে যায়। যুক্তি কখনো একপেশে হয়ে
যায়। তিনি একই মতাদর্শের মানুষেরও সমালোচনা করতেন। কাউকে ছেড়ে কথা বলতেন না। একটা সমাজে এখন এ রকম মানুষের প্রবল অভাব।
ভাষা আন্দোলনের সৈনিক, সংগঠক, সাক্ষী আহমদ রফিক শুধু চিকিৎসক হিসেবেই জীবনটা পার করে দিতে পারতেন। ভাষা আন্দোলন তো বটেই, নব্বই-ঊর্ধ্ব জীবনে শিক্ষকের পেশা ছেড়ে দিয়ে তিনি সাহিত্যেও মনোনিবেশ করেছিলেন, কিন্তু চিন্তায় ছিলেন প্রগতিশীল। সুদীর্ঘ জীবনে একজন মানুষ এক জায়গায় দাঁড়িয়ে যাঁরা লড়াই করেন, তিনি ছিলেন তাঁদেরই একজন।
গত ৫৪ বছরের রাজনীতিতে সরকার সমাজের কথা ভাবেনি। রাষ্ট্রও নিরপেক্ষ ও মানবিক হতে পারেনি। পাকিস্তানের প্রায় ২৪ বছর এবং পরে বাংলাদেশের ১৫ বছরের বেশি সময় একটা অগণতান্ত্রিক সামরিক ব্যবস্থার মধ্যে চলেছে।
তাই সমাজে মূল্যবোধ তৈরি হওয়ার কোনো সুযোগই ঘটেনি; বরং রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতাকে করায়ত্ত করার জন্য কালক্ষেপণ করেছে। এই ব্যবস্থায় অর্থ এসে দাঁড়িয়েছে একটা কেন্দ্রস্থলে। সব ক্ষেত্রে পেশাদারি সম্পর্ক গড়ে উঠতে পারেনি। সামরিক বাহিনীও ব্যবহৃত হয়েছে এর পাহারাদার হিসেবে। আজকের সামগ্রিক বিশৃঙ্খলা তারই প্রতিফলন। যে সময়ে এই মানুষগুলো লোকান্তরিত হলেন, সে-ও এক অস্থির সময়। তাঁদের মূল্যায়নের জন্য এই সময়টি তেমন সুস্থির সময় নয়। এই শূন্যস্থান পূরণ করার জন্য অনাগতকালে কোনো মহৎ মানুষের জন্ম হবে কি না, তা-ও অনিশ্চিত। অসংখ্য রাজনৈতিক দল গড়ে উঠেছে, পাশাপাশি অনেক বিশ্ববিদ্যালয় কিন্তু বিপুল বিশাল জনগোষ্ঠীর আবাসভূমি কী করে নিরাপদ হবে, তার ভাবনা কোথায়?
লেখক: নাট্যব্যক্তিত্ব

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনা
১২ আগস্ট ২০২১
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
১১ মিনিট আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৩১ মিনিট আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই ধারণা ঠিক নয়। জুলাই সনদ নিয়েই নানা ঘটনা ঘটছে দেশবাসীর চোখের সামনে। কিন্তু ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক রাজনীতি-সচেতন মানুষ বা দলের কোনো ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তাই ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে, সেটাই শুধু দেখার বিষয়। মন্তব্য করার মতো পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই ঘটনা বদলে যাচ্ছে।
এ কারণেই বিরামপুরকে বেছে নেওয়া। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা থেকেও আমাদের অসহায়ত্বের খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে। একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু সেখানে আছেন সবে ধন নীলমণি ৩ জন—এই একটি তথ্যই বুঝিয়ে দেয়, কী অবস্থায় রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য খাত। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদের কোনো কমতি নেই, কিন্তু রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলার ৫০০ থেকে ৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। তিনজন চিকিৎসক কীভাবে রোগীদের এই চাপ সামলাচ্ছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, এখানে গাইনি ও স্ত্রীরোগের জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ এলাকার নারীরা কতটা বিপদে আছেন, তা এই একটি তথ্য থেকে ধারণা করা সম্ভব।
সাধারণভাবে কয়েকটি প্রশ্ন এসে ভিড় করে মনে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ কম নয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও অসংখ্য। দেশে বেকারত্বও প্রকট। তাহলে বিরামপুরের মতো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসকের সংকট থাকছে কেন? সময়মতো চিকিৎসক নেওয়া হয় না, নাকি দিনাজপুরে গিয়ে চাকরি করতে হবে—এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনাগ্রহ রয়েছে? সরকারি চাকরিতে চিকিৎসকের অনাগ্রহের কথা ধোপে টেকে না। চাকরিসূত্রে যেকোনো জায়গায় তাঁর পোস্টিং হতে পারে। কিন্তু নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে বড় বড় শহরে থেকে যাওয়ার প্রবণতাও কি রয়েছে সংকটের মূলে? নাকি সরকারি পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ঘাপলা—সেটিও খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটি—এ কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শিক্ষা, বাসস্থানও তো মৌলিক অধিকার, সেটাই-বা কজন পাচ্ছে? আলাদাভাবে তাই স্বাস্থ্যসেবার কথা না বলে জোর দেওয়া যাক রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের দিকে। যাঁরা ক্ষমতায় যান কিংবা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁদের দলীয় ইশতেহারে অনেক দামি দামি কথা লেখা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ২৫ জন জনবলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসকই থাকবেন। অর্থাৎ ইশতেহার আর বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির জন্য কেউই কাজ করবে না।
এই অবস্থাটা নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিরাজ করছে। এটা বদলাতেই হবে।

দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই ধারণা ঠিক নয়। জুলাই সনদ নিয়েই নানা ঘটনা ঘটছে দেশবাসীর চোখের সামনে। কিন্তু ঘটনা কোন দিকে গড়ায়, তা নিয়ে সাধারণ মানুষ তো বটেই, অনেক রাজনীতি-সচেতন মানুষ বা দলের কোনো ধারণা আছে বলে মনে হয় না। তাই ঘটনাপ্রবাহ কোন দিকে টেনে নিয়ে যাবে, সেটাই শুধু দেখার বিষয়। মন্তব্য করার মতো পরিপক্ব হয়ে ওঠার আগেই ঘটনা বদলে যাচ্ছে।
এ কারণেই বিরামপুরকে বেছে নেওয়া। বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বর্তমান অবস্থা থেকেও আমাদের অসহায়ত্বের খানিকটা আঁচ পাওয়া যাবে। একটি চিকিৎসা কেন্দ্রে ২৫ জন চিকিৎসক থাকার কথা, কিন্তু সেখানে আছেন সবে ধন নীলমণি ৩ জন—এই একটি তথ্যই বুঝিয়ে দেয়, কী অবস্থায় রয়েছে আমাদের স্বাস্থ্য খাত। ৫০ শয্যার এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পদের কোনো কমতি নেই, কিন্তু রয়েছেন তিনজন চিকিৎসক। বিরামপুর উপজেলার একটি পৌরসভা, সাতটি ইউনিয়নসহ পাশের বিভিন্ন উপজেলার ৫০০ থেকে ৬০০ রোগীকে প্রতিদিন আউটডোরে এবং প্রায় ৬০ জন ভর্তি রোগীকে ইনডোরে চিকিৎসা দিতে হয়। তিনজন চিকিৎসক কীভাবে রোগীদের এই চাপ সামলাচ্ছেন, সেটা বোধগম্য নয়।
আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয়, এখানে গাইনি ও স্ত্রীরোগের জন্য কোনো চিকিৎসক নেই। অর্থাৎ এলাকার নারীরা কতটা বিপদে আছেন, তা এই একটি তথ্য থেকে ধারণা করা সম্ভব।
সাধারণভাবে কয়েকটি প্রশ্ন এসে ভিড় করে মনে। দেশে সরকারি মেডিকেল কলেজ কম নয়, প্রাইভেট মেডিকেল কলেজও অসংখ্য। দেশে বেকারত্বও প্রকট। তাহলে বিরামপুরের মতো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোয় চিকিৎসকের সংকট থাকছে কেন? সময়মতো চিকিৎসক নেওয়া হয় না, নাকি দিনাজপুরে গিয়ে চাকরি করতে হবে—এ বিষয়ে চিকিৎসকদের অনাগ্রহ রয়েছে? সরকারি চাকরিতে চিকিৎসকের অনাগ্রহের কথা ধোপে টেকে না। চাকরিসূত্রে যেকোনো জায়গায় তাঁর পোস্টিং হতে পারে। কিন্তু নানাভাবে ‘ম্যানেজ’ করে বড় বড় শহরে থেকে যাওয়ার প্রবণতাও কি রয়েছে সংকটের মূলে? নাকি সরকারি পোস্টিংয়ের ক্ষেত্রে রয়ে গেছে ঘাপলা—সেটিও খুঁজে বের করা খুব জরুরি।
মৌলিক অধিকারের মধ্যে স্বাস্থ্যসেবা একটি—এ কথা মনে করিয়ে দেওয়ার কোনো মানে হয় না। শিক্ষা, বাসস্থানও তো মৌলিক অধিকার, সেটাই-বা কজন পাচ্ছে? আলাদাভাবে তাই স্বাস্থ্যসেবার কথা না বলে জোর দেওয়া যাক রাজনৈতিক অভিপ্রায়ের দিকে। যাঁরা ক্ষমতায় যান কিংবা যাওয়ার জন্য রাজনীতি করেন, তাঁদের দলীয় ইশতেহারে অনেক দামি দামি কথা লেখা থাকে, কিন্তু বাস্তবতা বলছে, ২৫ জন জনবলের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩ জন চিকিৎসকই থাকবেন। অর্থাৎ ইশতেহার আর বাস্তবতার মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরির জন্য কেউই কাজ করবে না।
এই অবস্থাটা নানাভাবে বিভিন্ন জায়গায় বিরাজ করছে। এটা বদলাতেই হবে।

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনা
১২ আগস্ট ২০২১
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
১১ মিনিট আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
২১ মিনিট আগে
এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
১ দিন আগেসম্পাদকীয়

এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
পর্যটন এই জীববৈচিত্র্যকে ম্লান করে দেওয়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। লাউয়াছড়া বনের অভ্যন্তরের অনেকটা পথে গাড়ি ঢুকতে পারে। বনের মধ্যে গাড়ি চলছে—এটা কোনো সুসংবাদ হতে পারে না। গাড়ি প্রবেশে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। কীভাবে এই গাড়িওয়ালারা অনুমতি নিয়ে লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করেন, তা জানা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজারে অবস্থিত লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে বেঁচে থাকার কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের একটি জরিপে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকার কথা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। কিন্তু এখন এত ধরনের উদ্ভিদ, পাখি ও প্রাণী কেন দেখা যায় না, সে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। যাঁদের ওপর এদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, তাঁরা আদতে কী করছেন, তা জানতে হবে না?
তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগ একটি খাঁটি কথা বলেছে। তাদের মতে, অতিরিক্ত পর্যটকের হট্টগোল, গাড়ি ও ট্রেনের আওয়াজ এবং জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রাণীরা লোকালয় থেকে একটু দূরে চলে যায়। এসব কারণে প্রাণী কম দেখা যায় বনে। এ ছাড়া পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।
শেষ কথাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।’ এ তো খুবই সত্যভাষণ। যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন? এই বনের ঘনত্বের কারণে একসময় বনের ভেতর সূর্যের আলো সরাসরি পড়ত না। সেই ঘনত্ব কমে গেল কেন? কেন বনের সর্বত্র মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছে? বন বিভাগ কি জানে না, পশুর চারণক্ষেত্রে মানুষের অবাধ আনাগোনা পশু-পাখির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়? আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই বনে প্রাণীদের খাদ্যসংকট। পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকলে এই বনে পশু-পাখি কেন থাকবে? পশুদের জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য চা-বাগানের কীটনাশক মেশানো পানিও অনেকটা দায়ী, যার কারণে ছড়ায় পানি খেতে আসা প্রাণীরা মারা পড়ে।
লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। যে কারণে বনের এই দুর্দশা, তার প্রতিটির সমাধান করার উপায় বন বিভাগের জানা আছে। সেগুলো মেনে চললে লাউয়াছড়ায় বসবাসকারী পশু-পাখি ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারবে। একই সঙ্গে প্রকৃতিকে বাঁচানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব যদি আন্তরিকতা থাকে। সরকারি কাজে সে রকম আন্তরিকতা কি একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে? না হয়ে থাকলে তার প্রমাণ দেওয়া হোক।

এখন নাকি বানর আর শূকরের পালকেই দেখা যায় লাউয়াছড়ায়। বিরল প্রজাতির অনেক পাখি ও প্রাণী বাস করত এই সংরক্ষিত বনে। কিন্তু সেসব লুপ্ত হয়ে যাচ্ছে। বনটিকে নিজেদের অভয়ারণ্য বলে হয়তো ভাবতে পারছে না তারা।
পর্যটন এই জীববৈচিত্র্যকে ম্লান করে দেওয়ার একটি কারণ বলে মনে করছেন অনেকে। লাউয়াছড়া বনের অভ্যন্তরের অনেকটা পথে গাড়ি ঢুকতে পারে। বনের মধ্যে গাড়ি চলছে—এটা কোনো সুসংবাদ হতে পারে না। গাড়ি প্রবেশে নিশ্চয়ই কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। কীভাবে এই গাড়িওয়ালারা অনুমতি নিয়ে লাউয়াছড়ায় প্রবেশ করেন, তা জানা প্রয়োজন।
মৌলভীবাজারে অবস্থিত লাউয়াছড়াকে জাতীয় উদ্যান বলা হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু জাতীয় উদ্যান হিসেবে বেঁচে থাকার কোনো ব্যবস্থাই রাখা হয়নি। আজকের পত্রিকায় প্রকাশিত রিপোর্ট থেকে জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালের একটি জরিপে লাউয়াছড়া জাতীয় উদ্যানে ৪৬০ প্রজাতির দুর্লভ উদ্ভিদ ও প্রাণী থাকার কথা। এর মধ্যে ১৬৭ প্রজাতির উদ্ভিদ, ৪ প্রজাতির উভচর, ৬ প্রজাতির সরীসৃপ, ২৪৬ প্রজাতির পাখি ও ২০ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ছিল। কিন্তু এখন এত ধরনের উদ্ভিদ, পাখি ও প্রাণী কেন দেখা যায় না, সে প্রশ্ন তো তুলতেই হবে। যাঁদের ওপর এদের রক্ষণাবেক্ষণের ভার, তাঁরা আদতে কী করছেন, তা জানতে হবে না?
তবে এ ব্যাপারে বন বিভাগ একটি খাঁটি কথা বলেছে। তাদের মতে, অতিরিক্ত পর্যটকের হট্টগোল, গাড়ি ও ট্রেনের আওয়াজ এবং জনসংখ্যা বাড়ার কারণে প্রাণীরা লোকালয় থেকে একটু দূরে চলে যায়। এসব কারণে প্রাণী কম দেখা যায় বনে। এ ছাড়া পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।
শেষ কথাটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ‘পর্যটন আর বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ একসঙ্গে রক্ষা করা কঠিন।’ এ তো খুবই সত্যভাষণ। যদি সেটাই সত্য হয়ে থাকে, তাহলে এই বাড়াবাড়ির বিরুদ্ধে তারা ব্যবস্থা নেয় না কেন? এই বনের ঘনত্বের কারণে একসময় বনের ভেতর সূর্যের আলো সরাসরি পড়ত না। সেই ঘনত্ব কমে গেল কেন? কেন বনের সর্বত্র মানুষ অবাধে ঢুকে পড়ছে? বন বিভাগ কি জানে না, পশুর চারণক্ষেত্রে মানুষের অবাধ আনাগোনা পশু-পাখির জন্য স্বস্তিদায়ক নয়? আরও ভয়ংকর ব্যাপার হলো, এই বনে প্রাণীদের খাদ্যসংকট। পর্যাপ্ত খাদ্য না থাকলে এই বনে পশু-পাখি কেন থাকবে? পশুদের জীবনের বারোটা বাজিয়ে দেওয়ার জন্য চা-বাগানের কীটনাশক মেশানো পানিও অনেকটা দায়ী, যার কারণে ছড়ায় পানি খেতে আসা প্রাণীরা মারা পড়ে।
লাউয়াছড়ার জীববৈচিত্র্য ফিরিয়ে আনার জন্য কোনো বাড়তি পদক্ষেপের প্রয়োজন নেই। যে কারণে বনের এই দুর্দশা, তার প্রতিটির সমাধান করার উপায় বন বিভাগের জানা আছে। সেগুলো মেনে চললে লাউয়াছড়ায় বসবাসকারী পশু-পাখি ও উদ্ভিদ বেঁচে থাকতে পারবে। একই সঙ্গে প্রকৃতিকে বাঁচানো এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ করা সম্ভব যদি আন্তরিকতা থাকে। সরকারি কাজে সে রকম আন্তরিকতা কি একেবারেই দুর্লভ হয়ে গেছে? না হয়ে থাকলে তার প্রমাণ দেওয়া হোক।

সমুদ্র বিজয়ের পর বাংলাদেশের সমুদ্রসীমা আয়তনে বেড়ে ১ লাখ ১৮ হাজার ৮১৩ বর্গকিলোমিটার দাঁড়িয়েছে। যে সীমানা বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য বিশেষ একটি টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে কাজে দিচ্ছে। যা ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ (নীল সমুদ্র অর্থনীতি) জোন নামে খ্যাত। ‘ব্লু ওশান ইকোনমি’ হচ্ছে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সম্ভাবনা
১২ আগস্ট ২০২১
মোশাহিদা সুলতানা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাকাউন্টিং বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তিনি ত্রৈমাসিক পত্রিকা ‘সর্বজনকথা’র প্রকাশক এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত। সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস থেকে চা-দোকানি, ভবঘুরে ও হকার উচ্ছেদের কারণ এবং প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে তিনি...
১১ মিনিট আগে
মানুষের জীবনের একটা অনিবার্য পরিণতি—মৃত্যু, সে এক প্রাকৃতিক বিষয়। যেমন মেঘ, বৃষ্টি, সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত—যার ওপর মানুষের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই, তেমনই। কিন্তু কিছু মানুষের মৃত্যু হলে আমরা বলে থাকি, একটা শূন্যতার সৃষ্টি হলো, যে শূন্যতা দেখা যায় না, কিন্তু অনুভব করি আমরা বহু দিন, বহু বর্ষ, বহু শতাব্দী।
২১ মিনিট আগে
দেশে বড় বড় কত ঘটনা ঘটে চলেছে, অথচ সেদিকে চোখ না রেখে দিনাজপুরের বিরামপুর নিয়ে কেন সম্পাদকীয় লিখতে হবে, তার একটা ব্যাখ্যা থাকা দরকার। দেশের রাজনীতিতে প্রতিটি মুহূর্তেই জন্ম নিচ্ছে নতুন বাস্তবতা। একটি রাজনৈতিক দলকে এই মুহূর্তে মনে হচ্ছে অন্য এক দলের সঙ্গে জোট করতে আগ্রহী, পর মুহূর্তেই দেখা যাচ্ছে, সেই
৩১ মিনিট আগে