Ajker Patrika

উজ্জ্বল এক নাম উদীচী

অমিত রঞ্জন দে, সহসম্পাদক, উদীচী
উজ্জ্বল এক নাম উদীচী

আমরা দাঁড়িয়ে আছি স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে। আর মাত্র কয়েক দিন পর বিজয়েরও সুবর্ণজয়ন্তী। স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরু থেকে বিজয় অর্জনের প্রতি পরতে পরতে জড়িয়ে রয়েছে সাংস্কৃতিক সংগ্রাম।

মাতৃভূমিকে মুক্ত করে একটি স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় জনগণের হাতে হাত রেখে শিল্পী-কর্মীরাও লড়াইয়ে অবতীর্ণ হন। নতুন দিনের উপযোগী গান, নাটক, কবিতা রচনা করে সাংস্কৃতিক প্রেরণার সঙ্গী হিসেবে পূর্ব বাংলার প্রতিটি গ্রামগঞ্জে, কলকারখানায় ছড়িয়ে পড়েন সংস্কৃতিকর্মীরা। তাঁদের ব্যাপক অংশগ্রহণ এবং শিল্পিত প্রতিরোধ এক উজ্জ্বল উদাহরণের সৃষ্টি করে, যা দেশের অযুত মানুষকে অনুপ্রাণিত করেছিল। তাই তো রাজনৈতিক সংগ্রাম ও সাংস্কৃতিক সংগ্রামের হাত ধরাধরি করেই রচিত হয়েছে দেশের মুক্তিকামী মানুষের স্বাধীনতার সোপান। সাধারণ মানুষ, কুলি-মজুর-তাঁতি, শিল্পী-সাহিত্যিক-বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক সবার মিলিত চেষ্টায় স্বাধীনতার সূর্যটা আমাদের হয়েছে। সংস্কৃতির এই সংগ্রামে উজ্জ্বল একটি নাম উদীচী। পাকিস্তানি শাসন-শোষণের বিরুদ্ধে যখন ফুঁসে উঠছিল বাংলার আপামর মানুষ। একটি কালজয়ী গণ-অভ্যুত্থান যখন উঁকিঝুঁকি মারতে থাকে, ঠিক সে রকম একটা সময়ে ঢাকা তথা গোটা বঙ্গদেশের গণসংগীতের অন্যতম পথিকৃৎ ও বিশিষ্ট সাংবাদিক ঔপন্যাসিক সত্যেন সেনের নেতৃত্বে ঢাকায় প্রতিষ্ঠিত হয় উদীচী শিল্পীগোষ্ঠী (২৯ অক্টোবর, ১৯৬৮)। আজ উদীচীর ৫৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। জন্মের পর থেকেই উদীচীর কর্মীরাও কখনো সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে, কখনো প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নসহ দেশ এবং দেশের মানুষ যখনই সংকটময় অবস্থার মধ্যে পড়েছে, তখনই গণসংগীত, গণনাটক, আবৃত্তি, নৃত্যকে অবলম্বন করে মানুষকে পথ চলতে প্রেরণা জুগিয়েছে, সাহস জুগিয়েছে। স্বাধীনতার পর দেশীয় দখলদার-মজুতদার-মুনাফাখোর, কালোবাজারিরা যখন বিনষ্ট করতে চেয়েছে দেশের সম্মান, আপন স্বার্থে বিকিয়ে দিতে চেয়েছে দেশের সম্পদ, তখনো তার বিরুদ্ধে গণমানুষের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন উদীচীর শিল্পীরা গেয়ে উঠেছেন গণসংগীত। উজ্জীবিত হয়েছে সাধারণ মানুষ। পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে স্বার্থান্বেষী মহল।

প্রগতিশীল রাজনৈতিক-সাংস্কৃতিক দলগুলোর ধারাবাহিক কার্যক্রম ও চর্চার দৈন্যের কারণে এসব সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী গোষ্ঠী বারবার ফিরে ফিরে আসছে। সাংস্কৃতিক অবক্ষয় গোটা জাতিকে অন্ধকারে নিমজ্জিত করছে এবং শান্তিপ্রিয় মানুষের জীবনমানের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি করছে।

অমানবিকতার দাপটে মানুষের মনুষ্যত্ব দিন দিন লোপ পাচ্ছে। হারিয়ে যাচ্ছে বিবেক। বিবেকহীন পাষণ্ড মানুষরূপী দানবগুলো একে একে কেড়ে নিচ্ছে আমাদের স্নেহ-প্রেম-মায়া-মমতার মতো সুকুমার বৃত্তিগুলো। এদের নিষ্ঠুর নিষ্পেষণে হারিয়ে যাচ্ছে সব অর্জন। ধর্মান্ধতা-কূপমণ্ডূকতা জেঁকে বসেছে সমাজের অস্থিমজ্জায়। দুঃশাসন ও দুর্বৃত্তায়নের দাপটে মানবিক মূল্যবোধ নিভৃতচারী হয়ে পড়েছে।

এ রকম একটা হতশ্রী অবস্থার শ্রী ফেরাতে পারে সংস্কৃতি। একটি উন্নত সাংস্কৃতিক বোধসম্পন্ন জাতি গঠনের বিকল্প রাস্তা খোলা নেই। জনগণের যে ব্যাপকতর সাংস্কৃতিক সংগ্রাম রয়েছে, লোকজ সংস্কৃতি ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রয়েছে, তার বিকাশ ঘটানো। প্রয়োজন মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সমকালীন শিল্প-সাহিত্যের গবেষণা এবং উন্নয়নে কাজ করা; যা মানুষের মনোজগতে মানবিকতা, বিজ্ঞানমনস্কতা, কল্যাণমুখী বিশ্বমানস, দেশাত্মবোধ ও প্রগতিশীল দৃষ্টিভঙ্গি গঠনে ভূমিকা রাখবে। চারদিকে যে হতাশা বিরাজ করছে তা কাটিয়ে তুলতে মানুষকে উজ্জীবিত করবে; যা উদীচী তার জন্মলগ্ন থেকেই সেই ধারাবাহিকতা অব্যাহত রেখেছে। এসব লড়াইয়ে অংশ নিয়ে যশোর-নেত্রকোনাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রাণ বিসর্জন দিয়েছে উদীচীর অগণিত শিল্পীকর্মী। তবু তারা থামেনি, থামবে না কখনো। অব্যাহত থাকবে তার এ দ্রোহী পথচলা। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

‘আমরা মরে গেলাম ঋণের দায়ে আর খাওয়ার অভাবে’, চিরকুটে লেখা

বাংলাদেশ শুল্কমুক্ত আমদানির ঘোষণা দিতেই ভারতে হু হু করে বাড়ছে চালের দাম

এপিএসের বেতন ১ বছরে বেড়েছে ১৮ বছরের সমান

ফেসবুকে ছাত্রলীগ নেতার ‘হুমকি’, রাবিতে ১৫ আগস্টের কনসার্টে যাচ্ছে না আর্টসেল

পাবনায় প্রবাসীর স্ত্রীকে নিয়ে এএসআই উধাও, থানায় শ্বশুরের জিডি

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত