উপসম্পাদকীয়
হেনরি কিসিঞ্জার যদি চীন বা রাশিয়ার কূটনীতিক হতেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম হিটলার, আইখম্যানদের সঙ্গেই তাঁর নাম উচ্চারণ করত এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে তাঁর বিচার করে বহু আগে ফাঁসির আদেশ দিত বা চাইত!
কিসিঞ্জার একজন মার্কিন বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিক। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৬৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকায় জন্ম না হলেও তাঁকে সে দেশের একজন সেরা সন্তান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই কিসিঞ্জারই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালাতে থাকেন। কম্বোডিয়া ও লাওসে ভিয়েতনামযুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন, ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানের নৃশংসতায় মদদদানের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার দেশে যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্র রাজনীতিকে শিল্পের মর্যাদা এবং প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়েছে—এর প্রধান কারিগর এই হেনরি কিসিঞ্জার। হাজার অপরাধ করেও পশ্চিমা শক্তির মিডিয়ায় তিনি হয়ে রইলেন পবিত্র আত্মা। বিশ্বে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে কিসিঞ্জারের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই।
এই খলনায়ক কিসিঞ্জারকেই ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও বিতর্কিত কাজটি সেদিন করা হলো। এই কিসিঞ্জার ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনই ভিয়েতনামের মাটিকে তামা বানিয়েছিলেন, ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছিলেন। শান্তিতে তাঁকে দেওয়া সেই পুরস্কারে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় তিনি ১৯৭৫ সালে এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু ধামাধরা নোবেল কমিটি তা গ্রহণ করেনি।
তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কিসিঞ্জার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটা বিজ্ঞ ও দূরদর্শী মন্তব্য করেছিলেন এবং ইউক্রেনকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্য নিউইয়র্ক টাইমস সমর্থন করে সম্পাদকীয় লিখেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের উচিত হবে রাশিয়া যে অঞ্চল দখল করে নিয়েছে, সেই জায়গা রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়ে হলেও এ যুদ্ধ শেষ করা।’ ‘রাশিয়াকে অপমান-অবমাননাকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়ার পরিণতি পশ্চিমের জন্যই’ ভালো হবে না। সঙ্গে সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া কিন্তু ইউরোপেরই অংশ, এটি যেন কোনোভাবে অস্বীকার করা বা ভুলে যাওয়া না হয়।
কিসিঞ্জারের কথা ছিল সোজা, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে দুই পক্ষ যে যে অবস্থায় ভূমিতে আগে ছিল, সেটিকে স্থিতাবস্থার লাইন মেনে দুই পক্ষই যেন সেই সীমার মধ্যে নিজেকে ফিরিয়ে নেয় এবং এই ভিত্তিতে চুক্তি ও এর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তা আগামী দুই মাসের মধ্যেই।’ তাঁর এই মন্তব্যে বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাস্তবতা সেদিকেই যাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
যা-ই হোক, বিশ্বের দেশে দেশে অসংখ্য অপকর্মের হোতা শতবর্ষী এই মার্কিন কূটনীতিক কিসিঞ্জারকে কখনোই কোনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি নিজেও কখনো বিভিন্ন দেশে তাঁর অপকর্ম ও গণহত্যার জন্য অনুশোচনাবোধ করেননি। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে নানাবিধ অন্যায় কর্মকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ আছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিনা বিচারে, বিনা শাস্তিতে বীরের মর্যাদা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন, বিশ্বের লক্ষ-কোটি মানুষের সঙ্গে আমার মনেও ক্ষোভ-ঘৃণা থেকেই গেল।
মঞ্জুরে খোদা টরিক, লেখক, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
হেনরি কিসিঞ্জার যদি চীন বা রাশিয়ার কূটনীতিক হতেন তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা সংবাদমাধ্যম হিটলার, আইখম্যানদের সঙ্গেই তাঁর নাম উচ্চারণ করত এবং আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে তাঁর বিচার করে বহু আগে ফাঁসির আদেশ দিত বা চাইত!
কিসিঞ্জার একজন মার্কিন বুদ্ধিজীবী ও কূটনীতিক। ১৯৭৩ থেকে ১৯৭৭ সাল পর্যন্ত তিনি যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন। এ ছাড়া ১৯৬৯ থেকে ২০২০ পর্যন্ত মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। আমেরিকায় জন্ম না হলেও তাঁকে সে দেশের একজন সেরা সন্তান হিসেবে বিবেচনা করা হয়।
এই কিসিঞ্জারই সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে ব্যর্থ প্রমাণ করতে কৃত্রিম খাদ্যসংকট সৃষ্টি করেন এবং বলেন, বাংলাদেশ হচ্ছে একটি তলাবিহীন ঝুড়ি। বাংলাদেশবিরোধী তৎপরতা চালাতে থাকেন। কম্বোডিয়া ও লাওসে ভিয়েতনামযুদ্ধের সম্প্রসারণ, চিলি ও আর্জেন্টিনায় সামরিক অভ্যুত্থানে সমর্থন, ইন্দোনেশিয়ার রক্তক্ষয়ী অভিযান এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানের নৃশংসতায় মদদদানের অভিযোগ আছে তাঁর বিরুদ্ধে।
এশিয়া, আফ্রিকা, লাতিন আমেরিকার দেশে যুদ্ধ, মানবাধিকার লঙ্ঘন, হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্র রাজনীতিকে শিল্পের মর্যাদা এবং প্রাতিষ্ঠানিকতা দিয়েছে—এর প্রধান কারিগর এই হেনরি কিসিঞ্জার। হাজার অপরাধ করেও পশ্চিমা শক্তির মিডিয়ায় তিনি হয়ে রইলেন পবিত্র আত্মা। বিশ্বে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, জাতীয় মুক্তি ও স্বাধীনতার সংগ্রামে কিসিঞ্জারের কোনো ইতিবাচক ভূমিকা নেই।
এই খলনায়ক কিসিঞ্জারকেই ১৯৭৩ সালে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। নোবেল পুরস্কারের ইতিহাসে সবচেয়ে ঘৃণ্য ও বিতর্কিত কাজটি সেদিন করা হলো। এই কিসিঞ্জার ও প্রেসিডেন্ট নিক্সনই ভিয়েতনামের মাটিকে তামা বানিয়েছিলেন, ধ্বংসযজ্ঞে মেতেছিলেন। শান্তিতে তাঁকে দেওয়া সেই পুরস্কারে বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সমালোচনা হওয়ায় তিনি ১৯৭৫ সালে এই পুরস্কার ফিরিয়ে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলেন, কিন্তু ধামাধরা নোবেল কমিটি তা গ্রহণ করেনি।
তবে জীবনের শেষ প্রান্তে এসে কিসিঞ্জার রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে একটা বিজ্ঞ ও দূরদর্শী মন্তব্য করেছিলেন এবং ইউক্রেনকে একটা পরামর্শ দিয়েছিলেন। তাঁর সেই মন্তব্য নিউইয়র্ক টাইমস সমর্থন করে সম্পাদকীয় লিখেছিল। তিনি বলেছিলেন, ‘ইউক্রেনের উচিত হবে রাশিয়া যে অঞ্চল দখল করে নিয়েছে, সেই জায়গা রাশিয়ার কাছে ছেড়ে দিয়ে হলেও এ যুদ্ধ শেষ করা।’ ‘রাশিয়াকে অপমান-অবমাননাকর অবস্থার মধ্যে ফেলে দেওয়ার পরিণতি পশ্চিমের জন্যই’ ভালো হবে না। সঙ্গে সঙ্গে মনে করিয়ে দেন, রাশিয়া কিন্তু ইউরোপেরই অংশ, এটি যেন কোনোভাবে অস্বীকার করা বা ভুলে যাওয়া না হয়।
কিসিঞ্জারের কথা ছিল সোজা, ‘রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর আগে দুই পক্ষ যে যে অবস্থায় ভূমিতে আগে ছিল, সেটিকে স্থিতাবস্থার লাইন মেনে দুই পক্ষই যেন সেই সীমার মধ্যে নিজেকে ফিরিয়ে নেয় এবং এই ভিত্তিতে চুক্তি ও এর বাস্তবায়ন করতে হবে এবং তা আগামী দুই মাসের মধ্যেই।’ তাঁর এই মন্তব্যে বিশ্বে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কিন্তু বাস্তবতা সেদিকেই যাচ্ছে। মার্কিন প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায় থেকে এমন ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে।
যা-ই হোক, বিশ্বের দেশে দেশে অসংখ্য অপকর্মের হোতা শতবর্ষী এই মার্কিন কূটনীতিক কিসিঞ্জারকে কখনোই কোনো বিচারের মুখোমুখি হতে হয়নি। তিনি নিজেও কখনো বিভিন্ন দেশে তাঁর অপকর্ম ও গণহত্যার জন্য অনুশোচনাবোধ করেননি। অথচ তাঁর বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ অনেক দেশে নানাবিধ অন্যায় কর্মকাণ্ডের তথ্যপ্রমাণ আছে। একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি বিনা বিচারে, বিনা শাস্তিতে বীরের মর্যাদা নিয়ে দুনিয়া থেকে বিদায় নিলেন, বিশ্বের লক্ষ-কোটি মানুষের সঙ্গে আমার মনেও ক্ষোভ-ঘৃণা থেকেই গেল।
মঞ্জুরে খোদা টরিক, লেখক, গবেষক ও রাজনীতি বিশ্লেষক
আবদুল হাই তাঁর জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে তুলে ধরেছেন ঈদের উৎসব কীভাবে সময়ের সঙ্গে বদলে গেছে। আগে ঈদ ছিল আন্তরিকতা, ভাগাভাগি ও আত্মত্যাগের প্রতীক; আজ তা হয়ে উঠেছে প্রদর্শন, প্রতিযোগিতা ও বাহ্যিক আয়োজনের উৎসব। লেখক আক্ষেপ করেন, এখন ঈদের চেয়ে বেশি গুরুত্ব পাচ্ছে ‘কন্টেন্ট’, গরুর নাম, ব্যানার আর মোবাইল ক্যাম
৩০ মিনিট আগে২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট উপস্থাপন করা হয়েছে এক বিশেষ রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে, যেখানে একটি অভ্যুত্থানোত্তর অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্বে রয়েছে এবং পুরো রাষ্ট্রযন্ত্র একধরনের অস্থিরতা, অনিশ্চয়তা ও বৈষম্যের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। আশা করা হয়েছিল, অরাজনৈতিক সরকারের বাজেটে
১ দিন আগেসংবাদপত্রের পাতায় প্রকাশিত কোনো কোনো শিরোনাম ও সংবাদ বিশেষ আগ্রহ নিয়ে পড়তে চান পাঠক। আজকের পত্রিকায় ৩১ মে প্রকাশিত প্রধান শিরোনাম, ‘৬ মাসের টানাটানিতে ভোট’ শীর্ষক সংবাদটি সম্পর্কে আমাকে একজন সম্পাদক ফোন করে প্রশংসা করলেন। আমি বুঝতে পারলাম শিরোনামটি যথেষ্ট প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। ভোট নিয়ে জনগণের আগ
২ দিন আগেঈদ—এই শব্দটির সঙ্গে অগণিত মানুষের হৃদয়ে যে অনুভব জাগে, তা আনন্দ, উৎসব আর মিলনের। ঘরে ঘরে নতুন জামা, সুস্বাদু খাবার, কোলাকুলি আর রঙিন খুশির চিত্র যেন ঈদের অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে সেই পরিচিত দৃশ্যের বাইরে যে একটা বড় প্রশ্ন থেকে যায়, তা হলো—ঈদ কি সবার জন্য একরকম? ঈদের দিন কি সকলের মুখেই সমান হাসি? ঈদের আনন
২ দিন আগে