Ajker Patrika

বইয়ের স্টল, আড্ডার মঞ্চ

শরীফ নাসরুল্লাহ, ঢাকা
Thumbnail image
স্টলে পছন্দের বই খুঁজছেন কয়েক তরুণী। গতকাল সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অমর একুশে বইমেলা প্রাঙ্গণে। ছবি: আজকের পত্রিকা

একটি স্টলে বই দেখছিলেন চার তরুণ। একজনের হাতে হুমায়ূন আহমেদের বই। একজন জাপানি কোনো বই আছে কি না খুঁজছেন। তাঁদের আরেক বন্ধু চাইলেন কোরিয়ান সাহিত্যের বই। এই তরুণদের সঙ্গে আলাপে জানা গেল, কোরিয়ান চলচ্চিত্র, টিভি সিরিজ দেখে কোরীয় বইয়ের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছেন তাঁরা।

অমর একুশে বইমেলায় নানা রকমের বইয়ের পসরা সাজিয়েছেন প্রকাশকেরা। নানা ধরনের পাঠক খুঁজছেন ভিন্ন ধরনের বই। বইমেলায় আসা পাঠকদের সঙ্গে কথা বলে এমনটাই জানা গেল। রাশাদ হোসেন বুয়েটের শিক্ষার্থী। তাঁর পছন্দ অতিপ্রাকৃত উপন্যাস। বললেন, বাংলাদেশে অতিপ্রাকৃত উপন্যাস ওইভাবে তেমন ভালো পাইনি। অনুবাদই ভরসা।

বইমেলা শুধু বইয়ের বিকিকিনি নয়; চলে লেখক-পাঠকদের আড্ডাও। একটি সাংস্কৃতিক আবহ তৈরি হয়। মেলার শুরু থেকেই মূল মঞ্চে থাকছে আলোচনা। প্রতিদিনই একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর আলোচনা করেন বক্তারা।

গতকাল বইমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় ‘কুমুদিনী হাজং জুইলী তারা, তারালা জুই’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এ বিষয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন পাভেল পার্থ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মতিলাল হাজং ও পরাগ রিছিল। সভাপতিত্ব করেন আবু সাঈদ খান।

পাভেল পার্থ বলেন, ‘ঔপনিবেশিক জুলুমবিরোধী কৃষক আন্দোলনের এক সংগ্রামী নেত্রী কুমুদিনী হাজং। তিনি ঔপনিবেশিক শাসন, বৈষম্য, সার্বভৌমত্ব, আত্মপরিচয়, ন্যায্য মজুরি, কৃষি, ভূমি, অরণ্য কিংবা সমাজ রূপান্তরের প্রশ্নগুলো জারি রেখে লড়াই চালিয়ে গেছেন। কুমুদিনী হাজং ঔপনিবেশিক জুলুম, যুদ্ধ, মহামারি, দাঙ্গা, দখল, লুণ্ঠন, পরিবেশ-গণহত্যা ও কর্তৃত্ববাদী ইতিহাসের সাক্ষী।’

সভাপতির বক্তব্যে আবু সাঈদ খান বলেন, ‘রাজনৈতিক ধারার বাইরেও নানা জনবিদ্রোহ, জন-আন্দোলন আমাদের জাতীয় মুক্তি-সংগ্রামকে সমৃদ্ধ ও বেগবান করেছিল। টংক আন্দোলনও ছিল সে রকমই একটি; যার অন্যতম সংগ্রামী নেত্রী ছিলেন কুমুদিনী হাজং।’

বইমেলার লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন কবি আতাহার খান, কথাসাহিত্যিক পাপড়ি রহমান। গ্রন্থ উন্মোচন মঞ্চে এখন পর্যন্ত কোনো মোড়ক উন্মোচিত হয়নি। মঞ্চে বসে দুজন পাঠককে গল্প করতে দেখা গেছে। এখন পর্যন্ত সেখানে কোনো মোড়ক উন্মোচন করা হয়নি। বাংলা একাডেমি কর্তৃপক্ষ বলছে, দুজন রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন। রোববার নাগাদ কিছুটা অপ্রস্তুত ছিল মঞ্চ। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি পুরোপুরি শেষ করতে পারেনি কাজ। যাঁরা রেজিস্ট্রেশন করেছেন তাঁরা আজ আসেননি। এখন পর্যন্ত মোড়ক উন্মোচনের জন্য কেউ রেজিস্ট্রেশন করেননি।

নতুন বইয়ের খোঁজ
গতকালও মেলায় বেশ কিছু নতুন বই এসেছে। শব্দশিল্প নিয়ে এসেছে শিল্পী ফাহমিদা নবীর বই ‘ফাহমিদা নবীর ডায়েরি’। বইটি নিয়ে বইয়ের মুখবন্ধে ফাহমিদা নবী লিখেছেন, ‘লিখতে ভালো লাগে সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার বাবার লেখা, কথার ভঙ্গি, গান গাইবার অনুভব আমাকে অনুপ্রাণিত করত। আম্মাকে দেখতাম বই পড়ত, ডায়েরি লিখত, ভীষণ ভালো লাগত। আমিও লেখার চেষ্টা করতাম, করছি।’

যাত্রাশিল্পী মিলন কান্তি দে এবার আত্মজীবনী ‘আমি যে এক যাত্রাওয়ালা’ নিয়ে এসেছেন। এটি বের করেছে নবান্ন প্রকাশনী।

আফসার ব্রাদার্স নিয়ে এসেছে ওয়াসি আহমেদের অনুবাদের বই ‘টেন্ডার ইজ দ্য ফ্লেশ’। উপন্যাসটির লেখক আগুস্তিনা বাস্তেরিকা। তাঁর জন্ম ১৯৭৪ সালে আর্জেন্টিনার বুয়েনস এইরেসে। তিনি এ পর্যন্ত তিনটি উপন্যাস লিখেছেন; টেন্ডার ইজ দ্য ফ্লেশ, মাস্টার আ’লা নিনা এবং দ্য আনওয়ার্দি।

ঐতিহ্য নিয়ে এসেছে আজিমা মেলিতা ও মারিয়াম মাফির বই ‘রুমির গভীর প্রেমালাপ’। এটি অনুবাদ করেছেন আনোয়ার হোসেইন মঞ্জু।

গতকাল মেলায় তুলনামূলক পাঠক কম এসেছেন। তবে বিক্রি মোটামুটি ভালো ছিল। অন্যধারার বিক্রয়কর্মী জয়ন্ত হালদার সাগর বলেন, ‘পাঠক কম আজ। তবে বিক্রি হচ্ছে। দিন যত বাড়বে তত পাঠক বেশি আসবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত