Ajker Patrika

‘এত দিন কাঁদতে পারিনি, আজ আমি কাঁদব’

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৬ আগস্ট ২০২৪, ১২: ৫৪
Thumbnail image

‘আজকে নাকি বিজয় আসিছে। কিন্তু আমার বাপ তো আর আইসবে না’—মুঠোফোনে এতটুকু বলে আর এগোতে পারলেন না মনোয়ারা বেগম। অপর প্রান্ত থেকে চাপা কান্নার শব্দ ভেসে এল। মনোয়ারা বেগম ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়া প্রথম শিক্ষার্থী আবু সাঈদের মা। 

গত ১৬ জুলাই রংপুরে কোটা আন্দোলনের সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আবু সাঈদ (২৫)। নিরস্ত্র এই শিক্ষার্থীর ওপর পুলিশের গুলি ছোড়ার ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে সারা দেশ, বেগবান হয় আন্দোলন। ফলে গণ-অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সোমবার সরকারের পতন ঘটে। 

সন্তানের আত্মত্যাগের বিনিময়ে পাওয়া এই অর্জনকে বিজয় হিসেবে দেখছেন বৃদ্ধ এই মা। তাঁর আশা, পরবর্তী সরকারপ্রধান হিসেবে যিনিই আসুন না কেন, তারা যেন আন্দোলন ঘিরে ঘটে যাওয়া প্রতিটি হত্যার বিচার করে। একই রকম দাবি আন্দোলনে অন্যান্য নিহতের পরিবারের সদস্যদের। তাদের প্রত্যাশা, দেশে যেন বৈষম্য না থাকে। মানুষ যেন শান্তিতে থাকতে পারে। 

আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান আলী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের আত্মত্যাগের কারণে যে পতন হইসে, এ কারণে আমরা গর্বিত। কিন্তু ভাই হারাবার শোক আমাদের রয়ে যায়। আমাদের চাওয়া, আন্দোলনে যাওয়ার কারণে ছাত্রলীগের যে নেতা আমার ভাইকে থাপ্পড় দিয়েছিল, গলা টিপে ধরছিল, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। যে পুলিশের গুলিতে আমার ভাইয়ের মৃত্যু ঘটেছে, সেই পুলিশের ফাঁসি চাই। যার হুকুমে গুলি হয়েছে, আমরা তার ফাঁসি চাই। শেখ হাসিনা বাংলাদেশ থেকে পালিয়ে যে দেশেই যাক, তার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’ 

সব আবর্জনা পরিষ্কার হোক, তাহলেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে: মুগ্ধর বাবা

 ‘পানি লাগবে কারও, পানি, পানি?’—গত ১৮ জুলাই রাজধানীর উত্তরা আজমপুরে ঠিক এভাবেই পানির কেস হাতে ক্লান্ত শিক্ষার্থীদের মাঝে পানি বিতরণ করছিলেন মীর মাহফুজুর রহমান মুগ্ধ। টিয়ার গ্যাসের কারণে চোখ জ্বালাপোড়া করা সত্ত্বেও তৃষ্ণার্তদের খুঁজে পানি দিচ্ছিলেন তিনি। ঠিক তখন আন্দোলনকারীদের ওপর আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালালে একটি গুলি মুগ্ধর কপালে লাগে। হাসপাতালে নেওয়ার আগেই মারা যান তিনি। 

মুগ্ধর বাবা মুস্তাফিজুর রহমান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সরকারের পতন হয়েছে। কিন্তু বিজয় তখন আসবে, যখন সমস্ত বৈষম্য দূর হবে। আমার সন্তান মারা গেছে। তাঁর আত্মত্যাগ সার্থক হবে, যদি দেশের সমস্ত আবর্জনা পরিষ্কার হয়, আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব বজায় থাকে, স্বাভাবিক অবস্থা ফিরে আসে, দেশ সুন্দরভাবে চলে। সব যদি দূর হয়, তবেই আমার ছেলের আত্মা শান্তি পাবে।’ 

এত দিন কাঁদতে পারিনি, আজ আমি কাঁদব: প্রিয়র মা 

কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে গত ১৯ জুলাই রাজধানীর গ্রিন রোডে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান তরুণ আলোকচিত্রী তাহির জামান প্রিয়। তাঁর মা সামসি আরা জামান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘দেশ স্বাধীন হয়েছে। আমার সন্তানেরা স্বাধীন করেছে। যখন স্বাধীন হয়েছে শুনলাম, তখন থেকে আমি আমার সন্তানকে খুঁজে বেড়াচ্ছি।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘আমি এ কদিন কাঁদতে পারিনি। সাঈদ চত্বর ঘুরে এসে আমি নিজেকে ঘরের মধ্যে বন্দী করেছি, যেন আমি কাঁদতে পারি। আমাদের সন্তানেরা প্রাণ দিল, যার ফলে এই জয়। আমি খুবই আনন্দিত।’ 

আন্দোলনে নিহত প্রতিটি হত্যার বিচার চেয়ে এই মা বলেন, ‘আমার সন্তানকে যেভাবে গুলি করেছে, আমি আমার সন্তান হত্যার বিচার চাই। যারা আমার এতগুলো সন্তানকে মেরেছে, আমি আমার প্রত্যেক সন্তান হত্যার বিচার চাই। আমি এত বাচ্চার মৃত্যু দেখেছি। আমার ছেলের জন্য আমি এত দিন কাঁদতে পারিনি, আজ আমি কাঁদব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত