Ajker Patrika

আনসারদের গ্রেপ্তার ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব বাতিল হচ্ছে

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৬ অক্টোবর ২০২৩, ১৯: ২৩
Thumbnail image

প্রস্তাবিত আইনে আনসার বাহিনীকে অপরাধী গ্রেপ্তার, দেহ তল্লাশি ও মালামাল জব্দের ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে—এই প্রস্তাব বাতিলের সুপারিশ করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটি। এর পরিবর্তে আনসার ব্যাটালিয়নের সামনে অপরাধের ক্ষেত্রে ‘ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা’ নেওয়ার বিধান যুক্ত করার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। আগামী সপ্তাহে এই বিল সংসদে উত্থাপিত হওয়ার কথা রয়েছে। 

গত ২৩ অক্টোবর ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩’ সংসদে তোলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। বিলটি পরীক্ষা করে তিন দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়। আজ বৃহস্পতিবার বিলটি নিয়ে বৈঠক করে সংসদীয় কমিটি। সেখানে বিলের ৭ ও ৮ ধারাসহ কয়েকটি ক্ষেত্রে কিছু সংশোধনী আনার সুপারিশ করা হয়। 

বৈঠক শেষে সংসদীয় কমিটির বৈঠক শেষে সভাপতি বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘ঐকমত্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিলের ৮ ধারা বাদ হবে না। সেখানে ১৮৯৮ সালের ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হয়েছে।’ 

আটক ও তল্লাশির যে বিষয়টি বিলে রয়েছে, সংসদীয় কমিটির সুপারিশে তা থাকছে না বলেও জানান কমিটির সভাপতি। 

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৮ ধারায় আনসার ব্যাটালিয়নকে আটক ও তল্লাশির ক্ষমতা দেওয়ার প্রস্তাব করা হয়েছে। বিলে বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমোদনক্রমে অপরাধীকে আটক করে অবিলম্বে পুলিশের কাছে সোপর্দ করবে এবং ক্ষেত্রমতো জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট অথবা দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আটক ব্যক্তির দেহ তল্লাশি; কোনো স্থানে প্রবেশ ও তল্লাশি এবং মালামাল জব্দ করতে পারবে।’ 

বিলের এই ধারায় সংশোধনী আনার সুপারিশ করেছে সংসদীয় কমিটি। এই ধারায় বলা হয়েছে, ‘কোনো ব্যাটালিয়ন সদস্যের সামনে সংঘটিত অপরাধের ক্ষেত্রে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ 

বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, বিষয়টি নিয়ে যখন কথা হয় তখন আনসার ব্যাটালিয়নের পক্ষ থেকে ক্ষমতা বলবৎ রাখার পক্ষে মত দেওয়া হয়। কিন্তু সেখানে উপস্থিত থাকা পুলিশের কর্মকর্তারা বিরোধিতা করেন। আনসারকে ফৌজদারি কার্যবিধি ১৮৯৮ অনুযায়ী ক্ষমতা দেওয়ার পক্ষে মতামত দেওয়া হয়। পরে সেটিতে একমত পোষণ করে কমিটি। 

ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী, আনসাররা বিশেষ প্রয়োজনে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে বিনা পরোয়ানায় কাউকে আটক করতে পারবে। 

সংসদে উত্থাপিত বিলের ৭ ধারায় আনসার ব্যাটালিয়নের দায়িত্বের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, জননিরাপত্তামূলক কোনো কাজে সরকার বা সরকারের অনুমোদনক্রমে সরকারি কোনো কর্তৃপক্ষের চাহিদা অনুযায়ী দায়িত্ব সম্পাদন করবে।

সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এখানে সংশোধনী আনার প্রস্তাব করা হয়েছে। বলা হয়েছে, ‘দায়িত্ব পালনে সহায়তা করবে’। 

সংসদে উত্থাপিত বিলে আনসার বাহিনীতে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড উল্লেখ করা হয়েছে। সংসদীয় কমিটি এ ক্ষেত্রে ‘মৃত্যুদণ্ড’ বাদ দেওয়ার সুপারিশ করেছে। 

আনসার বাহিনীকে তল্লাশি ও আটকের ক্ষমতার বিধান যুক্ত করে সংসদে বিলটি ওঠার পর ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। পরদিনই স্বরাষ্ট্র ও আইনমন্ত্রী গণমাধ্যমকে জানায়, চূড়ান্ত বিলে এ ধরনের বিধান থাকবে না।

সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ‘আনসার ব্যাটালিয়ন বিল, ২০২৩ এবং ‘বাংলাদেশ পুলিশ (অধস্তন কর্মচারী) কল্যাণ তহবিল বিল, ২০২৩’ পরীক্ষা করে প্রতিবেদন প্রদান সংক্রান্ত বিস্তারিত আলোচনা হয়। এ ছাড়া, পরীক্ষা–নিরীক্ষা করে কতিপয় সংযোজন, সংশোধন ও পরিমার্জনের পর বিলটি জাতীয় সংসদে পাসের উদ্দেশ্যে সংশোধিত আকারে উত্থাপনের জন্য সুপারিশ করা হয়। 

কমিটির সভাপতি বেনজীর আহমেদের সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও অংশ নেন—কমিটির সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন, হাবিবর রহমান, সামছুল আলম দুদু, পীর ফজলুর রহমান, নূর মোহাম্মদ, সুলতান মোহাম্মদ মনসুর আহমদ, সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল এবং রুমানা আলী।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত