Ajker Patrika

পরাজয়ের আগে গোপনে বুদ্ধিজীবী হত্যাযজ্ঞ

এ আর চন্দন, ঢাকা
আপডেট : ১৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০১: ১০
Thumbnail image

একাত্তরের ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই পরাজয় সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। ৬ ডিসেম্বর থেকে ভারতীয় মিত্রবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ শুরু করলে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে একের পর এক হানাদার ঘাঁটির পতন হতে থাকে। ভারতীয় সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের এক মুখপাত্র অবশ্য       ৫ ডিসেম্বরই মন্তব্য করেছিলেন, ‘বাংলাদেশে আমাদের অভিযানের সাফল্যের একটা বড় সুবিধা হলো যে মুক্তিবাহিনী আগেই বহু এলাকা মুক্ত করে রেখেছে।’

১৪ ডিসেম্বর মিত্রবাহিনী ফরিদপুর থেকে মধুমতী নদী পেরিয়ে ঢাকার পথে অনেক দূর এগিয়ে আসে। যৌথ বাহিনীর আরেকটি অংশ উত্তর দিক থেকে ঢাকায় ঢোকার পথে টঙ্গীর তুরাগপাড়ে পাকিস্তানি বাহিনীর মুখোমুখি হয়। যৌথ বাহিনীর একটি ব্রিগেড চন্দ্রা হয়ে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসতে থাকে। যৌথ বাহিনীর সর্বশেষ অংশ ডেমরা দিয়ে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ দখল করে ঢাকার দিকে এগিয়ে আসে। এদিন হানাদারমুক্ত হয় সিরাজগঞ্জ, শাহজাদপুর, উল্লাপাড়া, কেশবপুর, মোরেলগঞ্জ, শেরপুর, শিবগঞ্জ, তাড়াইল, আক্কেলপুর, পাঁচবিবি, নবীনগর, সাভার, কালিয়াকৈর, গজারিয়া, মির্জাপুর, কাউখালী, চিলমারী, দোহাজারী, নাজিরহাট ও সান্তাহার।

পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডের কমান্ডার যে নাজুক চিত্র সেনা সদর দপ্তরকে অবহিত করেছিলেন, তার পরিপ্রেক্ষিতে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট এদিন গোপন বার্তায় (নম্বর জি-০০১৩) জেনারেল নিয়াজিকে নিজ বিবেচনায় প্রয়োজন মনে করলে আত্মসমর্পণের অনুমতি দেন। (সূত্র: হামুদুর রহমান কমিশন রিপোর্ট) যুদ্ধ শেষে বাঙালি যখন বিজয়ের উল্লাসে উদ্বেলিত, তখনো রাজধানীর শত শত মানুষের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার শেষ ছিল না। কারণ, দুদিন আগেই ব্ল্যাক আউট আর কারফিউয়ের মধ্যে তাদের স্বজনদের বাড়ি থেকে তুলে নেয় মুখোশধারী হায়েনারা। ঘুটঘুটে অন্ধকারের মধ্যে যাঁদের তুলে নেওয়া হয়, তাঁরা ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রথিতযশা সাংবাদিক, চিকিৎসক, প্রকৌশলী। দেশের ওই মেধাবী সন্তানেরা আর ফিরে আসেননি। বিজয়ের দুদিন পর ঢাকার রায়েরবাজারে সন্ধান মিলল একটি বধ্যভূমির। এ বিষয়ে ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর নিউইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানি সেনা ও তাদের স্থানীয় সহযোগীরা প্রায় ৩০০ বুদ্ধিজীবীকে ধরে নিয়ে যায়, যাঁদের মধ্যে ১২৫ জন চিকিৎসক, অধ্যাপক, লেখক ও শিক্ষকের লাশ পাওয়া গেছে ঢাকার শহরতলির এক বধ্যভূমিতে। পরে পত্রিকাটিতে ফক্স বাটারফিল্ড লিখেছেন, কালো সোয়েটার ও খাকি প্যান্ট পরা আলবদর সদস্যরাই যুদ্ধের শেষ তিন রাতে বুদ্ধিজীবীদের তুলে নিয়ে যায়। ধরা পড়া আলবদর সদস্যরা পরে জানিয়েছে, স্বাধীনতা ও সেকুলার রাষ্ট্র গড়ার আন্দোলনের সমর্থক বাঙালি সব বুদ্ধিজীবীকে নির্মূল করাই ছিল তাদের লক্ষ্য। (নিউইয়র্ক টাইমস, ৩ জানুয়ারি ১৯৭২)পরাজয় নিশ্চিত জেনে বাঙালি জাতিকে মেধাশূন্য করার চক্রান্তে মেতে ওঠে পাকিস্তানি বাহিনী ও তার স্থানীয় দোসররা। দ্য সানডে টাইমসে ১৯৭১ সালের ১৯ ডিসেম্বর এক প্রতিবেদনে বলা হয়, নিবিড় পরিকল্পনার আওতায় বাঙালি এলিট নিধনের অংশ হিসেবে এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত