Ajker Patrika

ভোটের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা

  • আগামীকাল ঘোষণা হবে গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া তরুণদের নতুন দল।
  • নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হলে বিএনপি জিতবে, মনে করেন বিশ্লেষকেরা।
  • তরুণদের দল রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনবে বলে প্রত্যাশা।
অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৮: ১৭
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

শেখ হাসিনার স্বৈরশাসনের বিদায়ঘণ্টা বাজানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জাতীয় নাগরিক কমিটির সঙ্গে এক হয়ে নতুন রাজনৈতিক দল প্রতিষ্ঠা করছেন। ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে তাদের এই নতুন দল গঠন দেশের রাজনীতি নতুন মাত্রা যোগ করেছে। ভোটের মাঠে বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীর পাশাপাশি নতুন রাজনৈতিক শক্তির উত্থান নিয়ে আগ্রহ আছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকদেরও।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনই এখন রাজনীতির প্রধান আলোচনা। সেই নির্বাচনে এখন পর্যন্ত ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। ভোট দূরে থাক, রাজনীতির আলোচনা থেকেই অনেকটা দূরে আছে জাতীয় পার্টি। এই অবস্থায় নতুন দলই আগ্রহের কেন্দ্রে চলে এসেছে।

জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া ছাত্রনেতাদের নতুন রাজনৈতিক দলের আত্মপ্রকাশ হতে যাচ্ছে কাল শুক্রবার। এদিনই আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন এই দলের নাম, নেতৃত্ব ও কমিটি ঘোষণার কথা রয়েছে। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে সামনের সারিতে থাকা ছাত্রনেতারাই নতুন রাজনৈতিক দলের শীর্ষ পদগুলোয় আসছেন। নতুন দলের নেতৃত্ব দিতে এরই মধ্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টার পদ থেকে সরে গেছেন নাহিদ ইসলাম। সব ঠিক থাকলে এই দলের আহ্বায়ক হতে যাচ্ছেন তিনিই। সদস্যসচিব পদে সমঝোতার ভিত্তিতে এই পদে আখতার হোসেনের নাম অনেকটাই চূড়ান্ত। তিনি এখন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্যসচিব। দলের মুখ্য সংগঠক ও মুখপাত্র পদে দেখা যেতে পারে সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহকে।

পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে ভোটের মাঠে নতুন দলটি কতটা প্রভাব বিস্তার করবে, সে নিয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনা চলছে নানা মহলে। এরই মধ্যে এ নিয়ে বিভিন্ন জরিপও হয়েছে।

গত ১৫ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চালানো ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক জরিপে দেখা যায়, ৩৮ শতাংশ মানুষ তখন পর্যন্ত কাকে ভোট দেবেন বা ভোট দেবেন কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেননি। যাঁরা ভোট দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, সেই বাকি ৬২ শতাংশ মানুষের মধ্যে ৪০ শতাংশ মানুষ বলেছেন, গণ-অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া শিক্ষার্থীরা যদি রাজনৈতিক দল গঠন করেন, সেই দলকে তাঁরা ভোট দেবেন। এ ছাড়া ১৬ শতাংশ বিএনপিকে, ১১ শতাংশ বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীকে এবং ৯ শতাংশ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগকে, ৩ শতাংশ মানুষ অন্যান্য ইসলামি দল ও ১ শতাংশ জাতীয় পার্টিকে ভোট দেওয়ার কথা জানিয়েছেন। অবশ্য এই জরিপ নিয়ে মতভিন্নতা রয়েছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, প্রতীকনির্ভর বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনে খুব বেশি ব্যতিক্রম না হলে মার্কা দেখেই ভোট দেন ভোটাররা। আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ মাঠে না থাকলেও তার বিপরীতে জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন কিংবা ছাত্রদের নতুন দলের নতুন প্রতীকে ভোটার জোয়ার বইয়ে দেবেন, এর সম্ভাবনা খুব কম। নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও বিশ্বাসযোগ্য হলে বিএনপিকে হারিয়ে অন্য কোনো দলের সরকার গঠনের সম্ভাবনাও কম। বিএনপিও তা-ই মনে করে।

গত সোমবার খুলনা মহানগরীর সম্মেলনে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেন, ‘দেশের অধিকাংশ মানুষ মনে করে, দেশে যদি সঠিক ও সুষ্ঠু নির্বাচন হয়, তাহলে বিএনপি সরকার গঠন করার দায়িত্ব পাবে।’

তবে ক্ষমতা থেকে দূরে থেকেও তরুণদের নতুন দল রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন আনতে পারবেন, এমনটাই আশা করছেন অনেকেই।

আগামী নির্বাচনে নতুন দলের প্রভাব কেমন হবে, জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ আজকের পত্রিকাকে বলেন, দেশের মানুষ চেনা প্রতীকে ভোট দিতে অভ্যস্ত। সে ক্ষেত্রে নতুন একটি দল ভোটে এসে বিরাট কিছু করে ফেলবে, এটা ভাবার সুযোগ নেই। তাদের আগে ভিত্তি তৈরি করতে হবে, মানুষের আস্থা অর্জন করতে হবে। এরপর মানুষ ঠিক করবে তাদের ভোট দেবে কি না।

তবে ভিন্নমত দিয়ে বিশ্লেষকদের কেউ কেউ মনে বলছেন, দেশের মানুষ যদি মনে করে, তারা তিনটি দলকে দেখেছে, সেনাশাসনও দেখেছে। তারা এবার পরিবর্তন চায়, তরুণ নেতৃত্ব যদি সেই পরিবর্তনের আকাঙ্ক্ষা সত্যিই জনমনে গেঁথে দিতে পারে, তাহলে হয়তো নতুন কিছু ঘটতে পারে।

এমন সম্ভাবনার কথা বলছেন নতুন দলের উদ্যোক্তারাও। তাঁদের একজন সারোয়ার তুষার বলেন, আগের হিসাব এবার বদলে গেছে। অনেক নতুন ভোটার ভোট দেবেন, সামনের নির্বাচনে অনেক কিছুই হতে পারে।

সারোয়ার তুষার বলেন, ‘আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি আছে। যে নির্বাচনই হোক, সে নির্বাচনে সফলতা পাব বলে আমরা আশাবাদী।’ তবে সময়টা এক বছর হলে নির্বাচন প্রস্তুতির জন্য ভালো হতো বলে জানান এই উদ্যোক্তা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত