Ajker Patrika

জলদস্যুদের হাতে জিম্মি জাহাজ সোমালিয়া উপকূলের কাছে, মুক্তিপণ দাবি করেনি কেউ

সবুর শুভ, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২৪, ১২: ৪৮
Thumbnail image

বাংলাদেশি পতাকাবাহী জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ সোমালিয়ার জলদস্যুদের কবলে পড়ার ৪৬ ঘণ্টা পেরিয়ে গেলেও মুক্তিপণের জন্য এখনও কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে জাহাজটি সোমালিয়া গ্যারাচাদ উপকূল থেকে মাত্র ২০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল বলে বাংলাদেশ মার্চেন্ট মেরিন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাখাওয়াত হোসেন জানান। তবে জাহাজে থাকা কোন নাবিকের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি।

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার সকাল ১০টা ৫০ মিনিটে স্যাটেলাইট ট্র্যাকিংয়ে এমভি আবদুল্লাহর এই অবস্থান শনাক্ত হয়েছে। এই হিসেবে সোমালি ডাকাতদের ডেরায় নোঙ্গর করতে আর মাত্র ২ ঘণ্টা সময় লাগবে। জাহাজ নোঙ্গর করার পরই শুরু হবে মুক্তিপণের দেনদরবার।’  

এর আগে জাহাজটি বুধবার (১৩ মার্চ) বাংলাদেশ সময় সন্ধ্যা ৬টা ৪০ মিনিটে জাহাজটি সোমালিয়া উপকূল থেকে ১৭০ নটিক্যাল মাইল দূরে অবস্থান করছিল। ১২ ঘন্টার মধ্যে জাহাজটি ৯৮ নটিক্যাল মাইল পাড়ি দেয়। জাহাজটি জলদস্যুদের কবলে পড়ার পর থেকে ধীরগতিতে চলছিল। কিন্তু বুধবার বিকেল থেকে জাহাজের গতি বেড়ে যায়। জোয়ারের কারণে গতি বেড়েছে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

চট্টগ্রামের শিল্পগ্রুপ কবির গ্রুপের মালিকানাধীন এসআর শিপিংয়ের জাহাজটি কয়লা নিয়ে আফ্রিকার দেশ মোজাম্বিক থেকে ১৯ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে পৌঁছানোর কথা ছিল। কিন্তু মঙ্গলবার (১২ মার্চ) বেলা দেড়টার দিকে ভারত মহাসাগরে ২৩ নাবিকনহ জাহাজটি সোমালিয়ান জলদস্যুদের কবলে পড়ে। 

জাহাজটি দস্যুদের কবলে পড়ার পর সেদিনই অডিও বার্তা ও মোবাইল ফোন কথোপোকথনের মাধ্যমে নাবিকদের সঙ্গে শিপিং কোম্পানি ও আত্মীয়স্বজনদের যোগাযোগ হয়। জলদস্যুরা সবার ফোন কেড়ে নেওয়ায় যতটুকু যোগাযোগ ছিল তাও বন্ধ হয়ে যায়। মুক্তিপণের জন্যও দস্যুদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা হয়নি। সব মিলে জিম্মি নাবিকদের নিরাপত্তা নিয়ে চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে নাবিকদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা চরমে উঠেছে।

জাহাজটি জিম্মি করার দুদিন পেরোতে চললেও মুক্তিপণের জন্য দস্যুদের তরফ থেকে কোনো যোগাযোগ হয়নি বলে জানিয়েছেন কেএসআরএমের মুখপাত্র মো. মিজানুল ইসলাম। 

আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার (১২ মার্চ) যতক্ষণ পযর্ন্ত নাবিকদের সাথে আমাদের যোগাযোগ হয়েছিল, নাবিকরা নিজেদের ও জাহাজের অবস্থান সম্পর্কে আমাদের অবহিত করেছেন। দস্যুদের পক্ষ থেকে কেউ এখনো যোগাযোগ করেনি। আমরা সবসময়  নাবিকদের পাশে আছি।’

তিনি বলেন, ‘এর আগেও ২০১০ সালে আমাদের একটি জাহাজ সোমালি দস্যুদের কবলে পড়েছিল। শেষতক ২৬ নাবিকদের আমরা অক্ষত অবস্থায় উদ্ধার করেছি। ওই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমরা এবারও ইনশাল্লাহ নাবিকদের মুক্ত করে আনব।’

জলদস্যুদের পক্ষ থেকে কোনো যোগাযোগ করা না হলেও ৫ মিলিয়ন বা ৫০ লাখ ডলারেরর মুক্তপণ দাবির একটি তথ্য গণমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তবে সেই তথ্যকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে দিয়েছেন মিজানুল ইসলাম। 

তিনি বলেন, এমভি আবদুল্লাহর ২৩ নাবিককে উদ্ধারে জাহাজের মালিকপক্ষ বারবার দস্যুদের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করলেও সাড়া মেলেনি এখনো। এ অবস্থায় দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে ৫ মিলিয়ন ডলার মুক্তিপণ চাইছে জলদস্যুরা— এমন দাবি ভিত্তিহীন।

গত মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বেলা দেড়টায় মোজাম্বিকের মাপুতু বন্দর থেকে সংযুক্ত আরব আমিরাতে যাওয়ার পথে ‘এমভি আবদুল্লাহ’ জাহাজটিতে উঠে নিয়ন্ত্রণ নেয় সোমালিয়ার জলদস্যুরা। জাহাজটিতে ৫৫ হাজার টন কয়লা রয়েছে। জাহাজে থাকা ২৩ নাবিকের সবাই বাংলাদেশি। জাহাজটি চট্টগ্রামের কবির গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান এস আর শিপিং লিমিটেডের মালিকানাধীন। কব্জায় নেওয়ার পর জাহাজের সব নাবিককে একটি কেবিনে আটকে রেখেছে জলদস্যুরা। জাহাজের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সোমালিয়ার দিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। 


আরও পড়ুন:–

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত