Ajker Patrika

৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

শাহ আলম খান, ঢাকা 
আপডেট : ০৩ আগস্ট ২০২৫, ১৩: ১৯
৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

আলোচিত ঢাকা-ওয়াশিংটন শুল্ক আলোচনার আনুষ্ঠানিক পর্ব আপাতত শেষ হলেও একটি প্রশ্ন এখন অনেক মহলে ঘুরপাক খাচ্ছে, এই চুক্তি বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থের সঙ্গে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ? হিসাব-নিকাশের পর এ থেকে বাংলাদেশের আসলে কতটা লাভ বা ক্ষতি হবে? আপাতদৃষ্টিতে বাংলাদেশ ট্রাম্পের ঘোষিত ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্কের বিপরীতে ছাড় পেয়েছে ১৫ শতাংশ পর্যন্ত। এতে ব্যবসায়ীরা তাৎক্ষণিকভাবে স্বস্তি প্রকাশ করলেও রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিশ্লেষকেরা এত সহজভাবে দেখছেন না। বিষয়টি নিয়ে তাঁরা নানা উদ্বেগ জানিয়েছেন।

আজকের পত্রিকা একাধিক দেশি-বিদেশি সূত্র এবং চুক্তির প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত দায়িত্বশীলদের সঙ্গে সরাসরি আলাপ ও বিভিন্ন ফোরামে তাঁদের আনুষ্ঠানিক-অনানুষ্ঠানিক মন্তব্যের ভিত্তিতে একটি ধারণা তৈরির চেষ্টা করেছে। এই প্রক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমঝোতার মূল লক্ষ্য, দর-কষাকষির ধরন ও বিষয়বস্তু, কার স্বার্থ কতটা থাকল ইত্যাদি কিছুটা স্পষ্ট হয়েছে।

বিশ্লেষণে বেরিয়ে এসেছে, যুক্তরাষ্ট্রের দিক থেকে এই চুক্তির মূল চালিকাশক্তি ছিল চারটি লক্ষ্য:

১. বাংলাদেশে মার্কিন পণ্যের প্রবেশ আরও সহজ করতে বাংলাদেশের আরোপিত উচ্চ শুল্কহার কমানো এবং অশুল্ক বাধাগুলো দূর করা।

২. বাংলাদেশ ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যে ওয়াশিংটনের প্রতিকূলে যে ঘাটতি রয়েছে, তার সমাধান করা।

৩. লক্ষ্য নিজেদের কৃষিপণ্য রপ্তানি বৃদ্ধি। বিশেষ করে সয়াবিন, গম, ডাল, তুলা ও ভুট্টার মতো মার্কিন কৃষিপণ্য যাতে নগদ অর্থে আমদানি হয়, সে বিষয়ে চাপ স্পষ্ট।

৪. যুক্তরাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিকে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার চাপ থেকে সুরক্ষা দিতে চায়। এ জন্য চুক্তির মাধ্যমে বিশ্ববাজারের প্রতিযোগী পণ্যের বিরুদ্ধে সুবিধা প্রতিষ্ঠা করা তাদের অন্যতম লক্ষ্য।

অন্তর্বর্তী সরকার যুক্তরাষ্ট্রের এই চার চাওয়া মেনে নিয়েছে। একই সঙ্গে কৌশলগত উপায়ে তা সাধ্যমতো মোকাবিলার চেষ্টা করেছে। যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে, দেশে গম বা সয়াবিনের মতো পণ্যের অভ্যন্তরীণ চাহিদা বিপুল বলে বাণিজ্যের ব্যবধান কমাতে মার্কিন কৃষিপণ্য হতে পারে বড় হাতিয়ার।

মূলত এই চার দফার ভিত্তিতে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশসহ অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনায় বসে, যার অন্যতম পূর্বশর্ত ছিল ‘নন-ডিসক্লোজার অ্যাগ্রিমেন্ট (এনডিএ), অর্থাৎ চুক্তির আলোচনার কোনো অংশই প্রকাশযোগ্য নয়।

সীমা আরোপ করে বাংলাদেশ দিয়েছে তিন পাল্টা শর্ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশ কৌশলী অবস্থান থেকে তিনটি মৌলিক সীমা নির্ধারণ করে আলোচনা এগিয়ে নিয়েছে।

১. শুরুতে বলা হয়, তারা একটি অন্তর্বর্তী সরকার, তাই এই চুক্তি ভবিষ্যৎ সরকারের ওপর বাধ্যতামূলক হতে পারে না। এ কারণে চুক্তিতে একটি পর্যালোচনার ধারা (রিভিউ ক্লজ) যুক্ত করা হয়েছে।

২. বাংলাদেশ তার বাস্তব সক্ষমতার বাইরে কোনো প্রতিশ্রুতি দেয়নি এবং যুক্তরাষ্ট্রকে তা মেনে নিতে হয়েছে।

৩. চুক্তিটি পুরোপুরি দ্বিপক্ষীয় হওয়ার জোরালো শর্ত দিয়েছিল বাংলাদেশ। ট্রাম্প প্রশাসন বাংলাদেশসহ বিশ্বের ৬৯টি দেশের জন্য নতুন শুল্কহার ঘোষণা করার পর জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মো. খলিলুর রহমান ও বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন যে বক্তব্য দেন, তা আজকের পত্রিকার পাওয়া অন্যান্য সূত্রের তথ্যের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ।

বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, ‘চুক্তির প্রাথমিক খসড়ায় যেসব প্রস্তাব পরোক্ষভাবে দেশের স্বার্থবিরোধী হতে পারত, সেসব ইস্যু থেকে আলোচনার মাধ্যমে আমরা বের হয়ে এসেছি। চূড়ান্ত খসড়ায় যা রয়েছে, তার কোনো কিছুই পালনের অযোগ্য বা ক্ষতিকর নয়।’

গোপনীয়তার প্রশ্নে অবস্থান

জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা খলিলুর রহমান বলেন, ‘মার্কিনিদের সঙ্গে যে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছে, তার জন্য যে এনডিএ করতে হয়েছে, তা শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বের প্রতিটি দেশকে করতে হয়েছে। এটা আন্তর্জাতিকভাবে প্রতিষ্ঠিত কূটনৈতিক চর্চা।’

তবে চুক্তি স্বাক্ষরের পর যুক্তরাষ্ট্রের সম্মতিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটি জনসমক্ষে প্রকাশ করার প্রস্তাব দেওয়া হবে। খলিলুর রহমান বলেন, ‘চুক্তিটি সম্পাদিত হলে একটি যৌথ বিবৃতি দেওয়া হবে এবং পরে স্বচ্ছতার স্বার্থে আমরা তা যুক্তরাষ্ট্রকে প্রকাশ করতে অনুরোধ করব।’

বিমান কেনার আগ্রহ দেখিয়েছে বাংলাদেশ

চুক্তির বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র বোয়িং কোম্পানির ২৫টি উড়োজাহাজ কেনার চাপ দিয়েছে কি না, এই গুঞ্জনের জবাবে বাণিজ্য উপদেষ্টা একে ‘একতরফা গুজব’ আখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, বিমান কেনার বিষয়টি তুলেছে বাংলাদেশ। বোয়িং গত বছর মাত্র ১২টি উড়োজাহাজ বানিয়েছে। এই সক্ষমতায় বাংলাদেশ চাইলেও তারা ২০৩৭ সালের আগে প্রথম উড়োজাহাজটি সরবরাহ করতে পারবে না।

বাস্তবায়ন এখন আসল প্রশ্ন

কর্মকর্তারা বলছেন, চুক্তিটি বাস্তবায়নযোগ্য কি না, তা নির্ভর করবে বাংলাদেশের নিজেদের সক্ষমতার ওপর। ‘২০ শতাংশ শুল্ক সুবিধা নেওয়া কি কেবল কাগজেই থাকবে, নাকি বাংলাদেশ তা কাজে লাগাতে পারবে, এটাই এখন প্রশ্ন।’ বলেছেন এক জ্যেষ্ঠ বাণিজ্য কর্মকর্তা।

এই চুক্তির সুফল পেতে হলে বাংলাদেশকে নিজের উৎপাদনশীলতা বাড়াতে হবে, রপ্তানিতে বৈচিত্র্য আনতে হবে এবং নীতিগত কাঠামোয় স্থায়িত্ব বজায় রাখতে হবে।

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

শতকোটি টাকার পাওনা বকেয়া রেখেই ‘দেশ ছাড়লেন’ ফ্লাইট এক্সপার্টের মালিকেরা

‘অনিয়ম হয়নি’ বলায় এলজিইডি কর্মচারীকে পিটুনি

৪ দাবি নিয়ে মার্কিন চাপ, বাংলাদেশের সায় ৩ শর্তে

দলীয় প্রধান আসবেন, তাই পুলিশ এনে খোলা হলো কার্যালয়ের তালা

যেভাবে চীনা ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ভারতের অত্যাধুনিক যুদ্ধবিমান ভূপাতিত করে পাকিস্তান

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত