Ajker Patrika

পরকীয়া সন্দেহে স্ত্রীকে হত্যা করে লাশ ফ্রিজে রাখেন নজরুল: পুলিশ

‎নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা‎
আপডেট : ১৫ অক্টোবর ২০২৫, ১৬: ১৬
গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম ও জব্দকৃত দা। ছবি: সংগৃহীত
গ্রেপ্তার নজরুল ইসলাম ও জব্দকৃত দা। ছবি: সংগৃহীত

রাজধানীর কলাবাগানে স্ত্রীকে নৃশংসভাবে হত্যার পর লাশ ডিপ ফ্রিজে রেখে স্বামীর পলায়নের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় স্বামী মো. নজরুল ইসলামকে (৫৯) গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) কলাবাগান থানা-পুলিশ। মামলা দায়ের করার ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে পুলিশ জানিয়েছে, স্ত্রী পরকীয়ায় লিপ্ত এবং তাঁর সম্পত্তি হাতিয়ে নিতে চায়—এমন সন্দেহেই তাঁকে হত্যা করেন নজরুল।

গতকাল মঙ্গলবার রাত আনুমানিক ৯টা ১০ মিনিটের দিকে রাজধানীর বংশাল থানার নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশনস বিভাগের উপপুলিশ কমিশনার মুহাম্মদ তালেবুর রহমান এক বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানিয়েছেন।

কলাবাগান থানা সূত্রে জানা যায়, গত রোববার রাত ১১টায় নজরুল ইসলাম কলাবাগান থানার ১ নম্বর লেনের ২৪ নম্বর বাসার ভাড়া করা ৬(বি) ফ্ল্যাটে ফিরে দেখেন ফ্ল্যাটের দরজার তিনটি লকের মধ্যে দুটি খোলা। স্ত্রী তাসলিমা আক্তারের (৪২) প্রতি দীর্ঘদিনের সন্দেহ—পরপুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক ও তাঁর সম্পত্তি হাতিয়ে নেওয়ার ভয় তাঁকে উত্তেজিত করে।

রাত ১২টার দিকে ঘুমন্ত স্ত্রীর মাথায় ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে হত্যা করেন তিনি। এরপর লাশটি গামছা দিয়ে বেঁধে, বিছানার চাদর ও ওড়না দিয়ে মুড়িয়ে বাসার ফ্রিজে লুকিয়ে রাখেন। পরে রক্তমাখা তোশক উল্টিয়ে, মেঝে পরিষ্কার করে এবং নিজের জামাকাপড় ধুয়ে আলামত গোপনের চেষ্টা করেন।

পরদিন সকালে নজরুল ইসলাম তাঁর বড় মেয়ে নাজনীন আক্তারকে জানান, তাদের মা অন্য পুরুষের সঙ্গে পালিয়েছে। এ সময় নাজনীন আক্তার ঘরের দেয়ালে রক্তের দাগ দেখতে পায়। এরপর নজরুল ইসলাম তাঁর দুই মেয়েকে নানার বাড়ি রেখে আসার কথা বলে রাজধানীর আদাবরে তাদের ফুফুর বাসায় রেখে নিজের প্রাইভেটকারে পালিয়ে যান।

পরে এ বিষয়ে সন্দেহ হলে ভুক্তভোগীর ছোট ভাই নাঈম হোসেন ও তাঁর দুই মেয়ে ১৩ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে কলাবাগান থানায় এসে অভিযোগ করেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে কলাবাগান থানা-পুলিশের একটি দল ওই ফ্ল্যাটে উপস্থিত হয়ে দরজার তালা ভেঙে ভেতরে প্রবেশ করে। ‍খোঁজাখুঁজির একপর্যায়ে ঘরের মধ্যে রাখা ডিপ ফ্রিজ খুলে ওপরের অংশ থেকে মাছ-মাংস সরালে চাদর দিয়ে প্যাঁচানো অবস্থায় তাসলিমা আক্তারের মৃতদেহ দেখতে পায় পুলিশ।

পরে ভুক্তভোগীর পরিবারের সদস্য ও সিআইডির ক্রাইম সিন দলের সহায়তায় কলাবাগান থানা-পুলিশ ডিপ ফ্রিজের ভেতর থেকে হাত-পা ও মুখ বাঁধা অবস্থায় ভিকটিমের মৃতদেহ উদ্ধার করে। পরে সুরতহাল প্রতিবেদন প্রস্তুত করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ওই দিন রাতে তাসলিমার ছোট ভাই নাঈম হোসেন বাদী হয়ে কলাবাগান থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।

মামলা দায়েরের পর সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় কলাবাগান থানা-পুলিশ তাসলিমার স্বামী মো. নজরুল ইসলামের অবস্থান শনাক্ত করে। পরে মঙ্গলবার রাতে নবাবপুর রোড এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরে তাঁর দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাত আনুমানিক সাড়ে ১১টার দিকে তাঁর নিজ বাসার ওয়ার্ডরোব হতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ধারালো দা উদ্ধার করা হয়।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, নজরুল ইসলাম ও তাসলিমা আক্তার দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দাম্পত্য কলহ চলছিল। নজরুল ইসলাম অবৈধ সম্পর্কের সন্দেহে স্ত্রীকে প্রতিনিয়ত মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি তিনি ভয় পেতেন, স্ত্রী তাঁর সম্পত্তি ও ব্যাংকে রাখা অর্থ হাতিয়ে নেবেন। এই চরম সন্দেহ ও নিয়ন্ত্রণের মানসিকতা থেকেই এই নৃশংস হত্যাকাণ্ড ঘটে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

যুক্তরাষ্ট্রে প্রভাবশালী ভারতীয় বংশোদ্ভূত প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ গ্রেপ্তার

বিহার নির্বাচন: লড়বেন না প্রশান্ত কিশোর, ‘নিশ্চিত পরাজয়’ দেখছেন বিজেপি জোটের

পায়ে নূপুর দেখে মেয়ের লাশ শনাক্ত করলেন বাবা

প্রাপ্তবয়স্কদের কনটেন্ট চালু করছে চ্যাটজিপিটি, শিশুদের নিরাপত্তা কোথায়

জুলাই সনদে স্বাক্ষর নিয়ে শেষ মুহূর্তে এসে অনিশ্চয়তা, সন্ধ্যায় ‘অতি জরুরি’ বৈঠক

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত