Ajker Patrika

নতুন কর্মসূচির প্রস্তুতিতে বন্দর ব্যবহারকারীরা

  • ব্যবসায়ীদের বিরোধিতা অব্যাহত।
  • কার্যকারিতা স্থগিতের অপেক্ষায় বন্দর ব্যবহারকারীরা।
  • যৌক্তিক মাশুলকাঠামো নির্ধারণে পর্যালোচনা কমিটি গঠনের দাবি।
 আবু বকর ছিদ্দিক, চট্টগ্রাম
ফাইল ছবি
ফাইল ছবি

ব্যবসায়ীদের তীব্র বিরোধিতার মধ্যেই চট্টগ্রাম বন্দরে বহুল আলোচিত বর্ধিত মাশুল কার্যকর হয়েছে। বুধবার থেকে এই নতুন হার অনুযায়ী বন্দর ফি আদায় শুরু হয়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম বন্দরের সচিব ও মুখপাত্র ওমর ফারুক। তিনি জানান, গত মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাত ১২টার পর থেকে বন্দরে অবস্থানরত জাহাজ ও পণ্যের ওপর নতুন মাশুল আদায় শুরু হয়।

তবে এই আদায় শুরু হলেও সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অনড় অবস্থানে রয়েছেন বন্দর ব্যবহারকারীরা। তাঁদের দাবি, বন্দর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত অযৌক্তিক ও অন্যায্য। তাঁরা এখনো আশায় আছেন যে প্রধান উপদেষ্টা বিষয়টিতে হস্তক্ষেপ করবেন এবং পুনর্বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত স্থগিত করবেন। এ দাবিতে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরাম ও চট্টগ্রাম চেম্বার ১৪ অক্টোবর প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় ও মুখ্য সচিবের কাছে চিঠি পাঠিয়েছে।

এদিকে চট্টগ্রাম পোর্ট ইউজার্স ফোরামের আহ্বায়ক ও চট্টগ্রাম চেম্বারের সাবেক সভাপতি আমীর হুমায়ুন মাহমুদ চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘আমরা আশাবাদী যে প্রধান উপদেষ্টা বন্দর কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত স্থগিত করবেন।’ এ সময় কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার দপ্তর থেকে কোনো সাড়া না পেলে আমরা নতুন কর্মসূচির ঘোষণায় যেতে বাধ্য হব।’

বন্দর ব্যবহারকারীদের মতে, প্রায় ৪১ শতাংশ মাশুল বৃদ্ধি দেশের আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের ওপর সরাসরি চাপ সৃষ্টি করবে। তাঁরা মনে করেন, রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো প্রতিষ্ঠান হিসেবে চট্টগ্রাম বন্দরকে ‘কস্ট-বেইজড ও সার্ভিস-ওরিয়েন্টেড’ মডেলে পরিচালিত হওয়া উচিত, যেখানে রাজস্ব নয়—সেবাই হবে মূল লক্ষ্য।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের অর্থ ও হিসাব বিভাগের প্রধান কর্মকর্তা মো. আবদুস শাকুর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন মাশুল বৃদ্ধির ঘোষণা দেওয়া হয়। এরপর সরকারি প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী ১৫ অক্টোবর থেকে ২৩টি খাতে বর্ধিত মাশুল আদায় শুরু হয়। এতে খরচ বেড়েছে সর্বোচ্চ ৪১ শতাংশ পর্যন্ত। সিদ্ধান্তের আগে এশিয়ার ১০টি এবং বিশ্বের আরও ১৭টি বন্দরের মাশুলকাঠামো পর্যালোচনা করে স্পেনের পরামর্শক প্রতিষ্ঠান আইডম।

অস্বাভাবিক মাশুল বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১২ অক্টোবর র‍্যাডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউতে ব্যবসায়ীদের এক সমন্বয় সভায় বক্তারা বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর একটি রাষ্ট্রীয় সেবা প্রতিষ্ঠান, বাণিজ্যিক লাভকেন্দ্রিক নয়। রাজস্ব বৃদ্ধির যুক্তিতে মাশুল বাড়ানো ব্যবসাবান্ধব সিদ্ধান্ত হতে পারে না।

প্রধান উপদেষ্টার কাছে পাঠানো চিঠিতে পোর্ট ইউজার্স ফোরাম উল্লেখ করেছে, গত কয়েক দশকে বন্দরের সার্ভিস ফি, হ্যান্ডলিং চার্জ, পাইলটেজ, ডেমারেজসহ বিভিন্ন খাতে ধারাবাহিকভাবে মাশুল বেড়েছে। এখন আবার বড় পরিসরে মাশুল বাড়ানো হলে তা সরাসরি আমদানি-রপ্তানির খরচ বাড়াবে এবং আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা দুর্বল করবে।

ফোরাম আরও জানায়, বিদ্যমান মাশুলকাঠামো থেকেই বন্দর কর্তৃপক্ষ নিজস্ব অর্থায়নে আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে এবং তাদের সংরক্ষিত তহবিলেও পর্যাপ্ত অর্থ রয়েছে। ফলে বর্তমান পরিস্থিতিতে মাশুল বৃদ্ধির যৌক্তিকতা নেই।

চিঠিতে বলা হয়, মাশুল বৃদ্ধির ফলে কনটেইনার হ্যান্ডলিং, স্টোরেজ ও পরিবহন ব্যয় বাড়বে, যা রপ্তানি খাতের জন্য মারাত্মক চাপ তৈরি করবে। এ অবস্থায় নতুন মাশুল বাস্তবায়ন আপাতত স্থগিত রেখে বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবি জানানো হয়েছে।

ফোরাম প্রস্তাব করেছে, প্রধান উপদেষ্টার উদ্যোগে স্থানীয় শিপিং এজেন্ট, আমদানি-রপ্তানিকারক, জাহাজ মালিক ও ব্যবসায়ী সংগঠনগুলোর মতামত নিয়ে একটি পর্যালোচনা কমিটি গঠন করা হোক, যাতে যৌক্তিক ও বাস্তবভিত্তিক মাশুলকাঠামো নির্ধারণ সম্ভব হয়।

এরই মধ্যে ব্যবসায়ী মহলে আলোচনা চলছে, যদি দ্রুত কোনো ইতিবাচক সাড়া না আসে, তবে বন্দর ব্যবহারকারীরা নতুন কর্মসূচির পথে হাঁটবেন, যা দেশের বাণিজ্যচক্রে নতুন অস্থিরতা ডেকে আনতে পারে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

আসামি গ্রেপ্তারে র‍্যাবকে ভুল তথ্য, বগুড়া ডিবির ওসিসহ ৩ কর্মকর্তা প্রত্যাহার

গাজায় ৮ জনকে প্রকাশ্যে গুলি করে মারল হামাস

সব ‘নোট অব ডিসেন্ট’ স্পষ্ট থাকবে জুলাই সনদে, সেটাই যাবে গণভোটে: সালাহউদ্দিন আহমদ

দয়া করে বিভাজন সৃষ্টি করবেন না, দেশকে বাঁচান: মির্জা ফখরুল

স্কুলছাত্রীর মৃত্যুতে স্তব্ধ মালয়েশিয়া, কাঠগড়ায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম

এলাকার খবর
Loading...

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত