Ajker Patrika

অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিচার দ্রুত করতে হবে, আইনজীবীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২৩, ১৮: ৪০
অগ্নি-সন্ত্রাসীদের বিচার দ্রুত করতে হবে, আইনজীবীদের সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী

‘অগ্নি-সন্ত্রাসীদের অনেকে আন্ডারগ্রাউন্ডে ছিল, এখন আন্দোলনের সুযোগ। আমরা বাধা দিচ্ছি না। একে একে সকলে সামনে আসছে। অপরাধীরা যেন যথাযথ সাজা পায় এবং দ্রুত যেন এদের বিচার শেষ হয়’ সেই আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ‘বিচারহীনতা যেন না চলে, ন্যায়বিচার যেন মানুষ পায়।’ 

আজ শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আয়োজিত আইনজীবী মহাসমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান। 

অগ্নি-সন্ত্রাসীদের সঙ্গে জড়িতদের বিচার দ্রুত শেষ করতে আইনজীবীসহ সরকারি কর্মকর্তাদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এরা এত অন্যায় করেছে। এদের বিচারকাজ কেন দ্রুত হবে না। এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে। কারণ, অন্যায়কে প্রশ্রয় দিলে এরা বাড়বে।’ 

আইনজীবী ও বিচারকের ওপর বিএনপি-জামায়াত হামলা করেছিল উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে বিএনপি-জামায়াত এ দেশে মানুষের ওপর আক্রমণ করে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালায়। জঙ্গিবাদ সৃষ্টি করে তাদের লেলিয়ে দেয়। অবশ্যই তাদের বিচার বাংলাদেশে হতে হবে।’ 

বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দাভাব যাচ্ছে না উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘অর্থনৈতিক মন্দার হাত থেকে বাংলাদেশও রেহাই পায়নি। তবে আমরা প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, নিষেধাজ্ঞা-পাল্টা নিষেধাজ্ঞা, সেই সঙ্গে নতুন করে প্যালেস্টাইনের ওপর হামলা হয়েছে। হাসপাতালে হামলা করে নারী-শিশুদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এর ফলে আবারও বিশ্বব্যাপী তেল ও জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে। আজকে উন্নত দেশগুলো হিমশিম খাচ্ছে।’ 
 
রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আইনজীবী মহাসমাবেশরিজার্ভ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন, ‘আজকে অনেকে আছে রিজার্ভ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। অথচ জাতির পিতা ১৯৭২ সালে যখন শাসনভার হাতে নেন তখন কোনো রিজার্ভ মানি ছিল না। কোনো মুদ্রা ছিল না। কোনো খাদ্য ছিল না।’ 

সরকারপ্রধান বলেন, ‘জাতির পিতার হাত ধরে বাংলাদেশের বিচার কাঠামোর গোড়াপত্তন ঘটে। জাতির পিতা আইনজীবীদের কল্যাণ ফান্ড করে দিয়ে যান। জাতির পিতা আমাদের যে পদক্ষেপ দিয়ে গেছেন, আমরা সেই পথ ধরে চলি।’ 
 
জেলায় জেলায় আইনজীবীদের জন্য ভবন নির্মাণে সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী। এ ক্ষেত্রে তিনি আইনজীবীদের পক্ষ থেকে ফান্ড গঠনেরও আহ্বান জানান। একই সঙ্গে আইনজীবীদের নিজ নিজ জেলায় প্লট বরাদ্দের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান সরকারপ্রধান। তিনি বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের বেনাভোলেন্ট ফান্ডে ৩০ কোটি টাকা অনুদান দেওয়ার ঘোষণা দেন। 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আইনের শাসন বিচার পাওয়ার অধিকার প্রতিটি মানুষ যেন পায়, সেই ব্যবস্থা আমরা করেছি। বিচারব্যবস্থার মান উন্নয়নে আমরা অবকাঠামোগত উন্নয়ন করি।’ 

তিনি বলেন, ‘জুডিশিয়ারি যাতে স্মার্ট হয়, সে জন্য প্রতিটি আইন ডিজিটালাইজড করা, রায়গুলো ডিজিটালাইজড করা, ইংরেজি রায়গুলো যাতে বাংলায় অনুবাদ হয়—সেটা যেন অনলাইনে পরিচালিত হয়, মানুষ যাতে দেখতে পারে—সেটা চাই।’ 
 

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক চেতনার দেশ। এই দেশে হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিষ্টান প্রত্যেকে যার যার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে। এ ক্ষেত্রে কেউ কারও ধর্মের ওপর আঘাত হানবে না। বাংলাদেশে এ ধরনের ঘটনা যাতে কোনো রকম না ঘটে শেষ দিকে সবার বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।’ 
 
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশের মানুষের মানবাধিকার সুরক্ষিত থাকুক, ন্যায়বিচার নিশ্চিত হোক। আমাদের মতো যেন ৩৫ বছর না লাগে বিচার পাওয়ার (বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বিচার)। সেই জন্য দ্রুত বিচার যাতে সম্পন্ন হয় সেই আহ্বান করছি।’ 
 
আইনজীবীদের মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যেখানে অন্যায় দেখবেন, অবশ্যই সেই অন্যায়কারীরা যথাযথ সাজা পায় তার জন্য আপনারা শুধু প্র্যাকটিস করলে হবে না, মানুষের পাশে দাঁড়াবেন।’ 

২০০৭ সালে জরুরি অবস্থার সময় গ্রেপ্তার হওয়ার কথা উল্লেখ করে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনা তাঁর নামে চলা মামলায় পক্ষে দাঁড়ানোর জন্য আইনজীবীদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান। 

তৎকালীন সরকার একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়েছিল উল্লেখ করে আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, ‘প্রতিনিয়ত কোর্টে আনত, যেভাবে যন্ত্রণা দিত। কিন্তু আমি কখনো মাথা নোয়াইনি। আমার ভয়ভীতি ছিল না। কারণ, আমি জানি, আমি কোনো অন্যায় করিনি। মিথ্যাভাবে মামলা দেওয়া হয়েছে। তারপরেও আইনজীবীরা, উচ্চ আদালতে প্র্যাকটিস করেন তাঁরাও গেছেন আমার পাশে দাঁড়াতে। সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই।’ 

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য দেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের আহ্বায়ক ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন, সদস্যসচিব শেখ ফজলে নূর তাপস, অ্যাটর্নি জেনারেল আবু মোহাম্মদ আমিন উদ্দিন, বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস চেয়ারম্যান সৈয়দ রেজাউর রহমান, আওয়ামী লীগের আইনবিষয়ক সম্পাদক নজিবুল্লাহ হিরু। স্বাগত বক্তব্য দেন আইনসচিব মো. গোলাম সারওয়ার। 

এর আগে বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের নবনির্মিত ১৫তলা ভবনের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত