Ajker Patrika

সরকারি গুদামে খাদ্যের রেকর্ড মজুতে স্বস্তি

  • ধান, চাল ও গমের মজুত দাঁড়িয়েছে ২০.৭৩ লাখ টনে
  • গত বছর এ সময়ে মজুত ছিল ১৬ লাখ টনের মতো
  • নিরাপত্তার জন্য ৩০ লাখ টন মজুতের পরামর্শ কৃষি অর্থনীতিবিদের
রোকন উদ্দীন, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১২: ০৫
সরকারি গুদামে খাদ্যের রেকর্ড মজুতে স্বস্তি

বোরোর সংগ্রহ আশানুরূপ হওয়ার দেশের সরকারি গুদামে খাদ্যদ্রব্যের মজুত এখন সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে। সরকারি গুদামগুলোতে গতকাল মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) পর্যন্ত ধান, চাল ও গম—এই তিন ধরনের খাদ্যের মজুত দাঁড়িয়েছে রেকর্ড ২০ লাখ ৭৩ হাজার টনে।

বিশ্লেষকেরা এই মজুতকে ভালো লক্ষণ হিসেবে দেখছেন। কারণ, এটি যেকোনো আপৎকালীন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সহায়ক হবে। পর্যাপ্ত মজুতের কারণে মধ্যস্বত্বভোগীরা দাম বাড়ানোর চেষ্টা করলে সরকার বাজারে সরবরাহ বাড়িয়ে দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারবে বলেও মনে করছেন তাঁরা।

আর সরকারি কর্মকর্তারা বলছেন, এখনো বোরো সংগ্রহের দুই দিন বাকি। এই সময়ের মধ্যে সংগ্রহ আরও বাড়বে। এবার বোরো ধান ও চালের সংগ্রহ ১৫ লাখ টন ছাড়িয়ে যেতে পারে; যা নিরাপদ খাদ্য মজুত গড়তে সহায়ক হবে।

খাদ্য মন্ত্রণালয়ের ২৯ জুলাইয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকারি গুদামে মোট খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ২০ লাখ ৭৩ হাজার ২৬৩ টন। এর মধ্যে চালের পরিমাণ ১৮ লাখ ১৯ হাজার ৫১২ টন। এ ছাড়া ১ লাখ ২১ হাজার ৩০৮ টন ধান এবং ১ লাখ ৭৫ হাজার টন গম মজুত রয়েছে।

এর আগে দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ খাদ্য মজুত ছিল ২০২২ সালের জানুয়ারিতে। ওই সময় সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্যের মজুত ছিল ১৯ লাখ ৮৫ হাজার টন। গত বছরের এ সময়ে সরকারি খাদ্য মজুতের পরিমাণ ছিল ১৬ লাখ টনের মতো।

খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো. আবুল হাছানাত হুমায়ুন কবীর বলেন, ‘আমরা ভালো একটা মজুত গড়ে তুলেছি। বোরোতে আমরা ১৪ লাখ টনের বেশি সংগ্রহ করব। চলতি অর্থবছর সরকারিভাবে ৪ লাখ টন চাল আমদানির জন্য আমরা সরকারের অনুমোদন নিয়ে রেখেছি। পরিস্থিতি অনুযায়ী আমদানির সিদ্ধান্ত নেব।’ বোরো সংগ্রহ চলমান থাকায় মজুত আরও বাড়বে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, বাজার নিয়ন্ত্রণে সরকার তার মজুত ব্যবহার করে। খোলাবাজারে বিক্রি (ওএমএস), খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি, টিসিবির মাধ্যমে বিতরণসহ বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির মাধ্যমে খাদ্যশস্য বিতরণ করে সরকার। এতে খাদ্যের বাজার অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে থাকে। সরকারের হাতে যত বেশি মজুত থাকবে, সরকার তত বেশি সফলভাবে বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ব্যবসা ও বিপণন বিভাগের অধ্যাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বর্তমান মজুতকে ভালো বললেও নিরাপত্তার জন্য সংগ্রহ আরও বাড়ানোর পরামর্শ দেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনো একটা মৌসুমে উৎপাদনে সমস্যা হলে ব্যাকআপ দেওয়ার জন্য ৩০ থেকে ৩২ লাখ টন খাদ্যের মজুত থাকতে হয়। এটি দেশের ৩ থেকে ৪ মাসের খাদ্যের মজুত। আমরা এখনো জানি না, আমন মৌসুমের উৎপাদন কেমন হবে।’

তবে চাইলেও এতটা মজুত গড়ে তোলা সম্ভব নয়। কারণ, দেশে সরকারি গুদামগুলোতে খাদ্যশস্য মজুতের বর্তমান সক্ষমতা মাত্র ২২ দশমিক ৫ লাখ টন।

সরকারের অভ্যন্তরীণ বাজার থেকে ধান, চাল সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম হলো বোরো মৌসুম। সরকার চলতি বোরো মৌসুমে মোট প্রায় ১৮ লাখ টন খাদ্য সংগ্রহের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছিল। এর মধ্যে সাড়ে ৩ লাখ টন ধান, ১৪ লাখ টন সেদ্ধ চাল ও ৩৫ হাজার টন আতপ চাল। গত ১৪ এপ্রিল থেকে বোরো সংগ্রহ শুরু হয়েছে, চলবে ৩১ জুলাই পর্যন্ত। সে হিসাবে বোরো সংগ্রহের মাত্র দুই দিন বাকি রয়েছে। যদিও কর্মকর্তারা বলছেন, এটি চলমান প্রক্রিয়া। অভ্যন্তরীণ সংগ্রহ না থাকলেও প্রয়োজনে আমদানি করা হবে।

মঙ্গলবার পর্যন্ত (২৯ জুলাই) বোরোতে মোট ১৪ লাখ ৪৬ হাজার ৪১৪ টন ধান ও চাল সংগ্রহ করেছে সরকার। এর মধ্যে ধান ৩ লাখ ৭৬ হাজার ৯৯২ টন। বাকিটা চাল।

বাজারে এ মুহূর্তে চালের দাম কিছুটা বাড়তি রয়েছে। সরকারি ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) হিসাবে বর্তমানে সরু চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা কেজি, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১৫ শতাংশ বেশি। মাঝারি মানের চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা কেজি, যা গত বছরের এই সময়ের তুলনায় ১৬ শতাংশ বেশি।

তবে খাদ্য অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা বলছেন, আগস্টের মাঝামাঝি চালু হচ্ছে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি। এরপর চালের দাম কমতির দিকে যাবে। একই সঙ্গে বেসরকারিভাবে চাল আমদানি উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে আগ্রহীদের কাছ থেকে আবেদন আহ্বান করেছে খাদ্য মন্ত্রণালয়। এটিও চালের বাজারকে সহনীয় পর্যায়ে আনতে সহায়তা করবে বলে মনে করছেন তাঁরা।

খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সংগ্রহ বিভাগ) মো. মনিরুজ্জামান বলেন, ‘বোরো সংগ্রহ চলছে, আরও দুই লাখ টন চাল আসবে। আমরা ভালো একটা মজুত গড়ে তুলেছি। আগামী ১৫ আগস্ট থেকে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি শুরু হবে। ১৫ টাকা দরে ৫৫ লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে ৩০ কেজি করে চাল দেওয়া হবে। খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলবে নভেম্বর পর্যন্ত। তখন চালের বাজার আবার কমতির দিকে যাবে।’

আরও খবর পড়ুন:

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত