Ajker Patrika

কারাগারে বন্দীর চাপ, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ

রাসেল মাহমুদ, ঢাকা
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১২: ০৯
কারাগারে বন্দীর চাপ, ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার। ছবি: সংগৃহীত

আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর হত্যা, গুম, হামলাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের গ্রেপ্তার অভিযান শুরু হয়। এ ছাড়া আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে আনতে সারা দেশে এখনো বিশেষ অভিযানে প্রতিদিন এক-দেড় হাজার আসামিকে গ্রেপ্তার করছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। এসব আসামিকে পাঠানো হচ্ছে কারাগারে। এতে বন্দীদের চাপ বাড়ছে কারাগারে। ফলে ধারণক্ষমতার দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে কারাগারে।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের ৭০টি কারাগারের বন্দী ধারণ-ক্ষমতা ৪৩ হাজার ১৫৭ জন। ১ জুলাই এসব কারাগারে বন্দী ছিল ৭২ হাজার ১০৫ জন। অর্থাৎ ধারণক্ষমতার প্রায় দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে কারাগারগুলোতে। সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে। ৪ হাজার ৫৯০ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বন্দী রয়েছে ৭ হাজার ৯৮৭ জন।

গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ছাত্র-জনতার ওপর হামলা, হত্যাসহ বিভিন্ন অভিযোগে শতাধিক সাবেক মন্ত্রী-সংসদ সদস্যসহ সাবেক সচিব, সাবেক বিচারপতি, সেনা ও নৌ কর্মকর্তা, পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিসহ আওয়ামী লীগ ও তার সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ ছাড়া সাজাপ্রাপ্ত আসামিসহ বিভিন্ন মামলা ও ওয়ারেন্টভুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তার করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, দেশের বিভিন্ন কারাগারে বন্দীদের মধ্যে পুরুষ ৬৯ হাজার ৪৩৮, নারী ২ হাজার ৬৬৭ জন। এর মধ্যে সাজাপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছে ১৮ হাজার ৪২৬ জন। এসবের মধ্যে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দী রয়েছে ২ হাজার ৬০২ জন। এ ছাড়া যুদ্ধাপরাধী হিসেবে গ্রেপ্তার ও সাজাপ্রাপ্ত, নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জেএমবি ও অন্যান্য সংগঠনের আসামিরাও কারাবন্দী হিসেবে রয়েছে।

কারা অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ঢাকা বিভাগে ১৮টি কারাগার রয়েছে। এসব কারাগারে ১৩ হাজার ৫৮২ জন বন্দীকে জায়গা দেওয়ার কথা। কিন্তু বর্তমানে বন্দী রয়েছে ২৫ হাজার ৫৯৮ জন। এর মধ্যে কেরানীগঞ্জে ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ৫৯০ জন বন্দীর। সেখানে এখন রয়েছে ৭ হাজার ৯৮৭ জন। ২ হাজার ধারণক্ষমতার গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার-২-এ বন্দী রয়েছে ৩ হাজার ৩৬৩ জন। ১ হাজার ধারণক্ষমতার কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগারেও দ্বিগুণ বন্দী রয়েছে। কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দী ২ হাজার ৫৩২ জন। ৫৪০ জন ধারণক্ষমতার নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৩৩৫ জন। এ ছাড়া মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারে ধারণক্ষমতার প্রায় তিন গুণ বন্দী রয়েছে। ২০০ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বর্তমানে বন্দী রয়েছে ৫৪৫ জন।

চট্টগ্রাম বিভাগে ১১টি কারাগার রয়েছে। এর মধ্যে দুটি কেন্দ্রীয় কারাগার। কারাগারগুলোর ৬ হাজার ৯৫০ জন ধারণক্ষমতা থাকলেও বর্তমানে বন্দী রয়েছে ১৪ হাজার ৬৭২ জন। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বন্দী রয়েছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। ১ হাজার ৮৫৩ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে তিন গুণ বেশি কারাবন্দী রয়েছে। কারাগারটিতে বন্দীর সংখ্যা বর্তমানে ৫ হাজার ১৪৭ জন। এ ছাড়া মাত্র ৮৩০ জন ধারণক্ষমতার কক্সবাজার জেলা কারাগারে বন্দী রয়েছে ২ হাজার ৪৩৬ জন।

রাজশাহী বিভাগের ৮টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ৪ হাজার ১৭৯ জন। কারাগারগুলোতে বর্তমানে বন্দী রয়েছে ৯ হাজার ২২৭ জন। এর মধ্যে ধারণক্ষমতার দেড় গুণ বেশি কারাবন্দী রয়েছে বগুড়া জেলা কারাগারে। ৭২৩ জন ধারণক্ষমতার কারাগারটিতে বন্দী রয়েছে ১ হাজার ৭৩০ জন।

বরিশাল বিভাগের ৬টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৯১৩ জন। বর্তমানে এই ছয়টি কারাগারে রয়েছে ২ হাজার ৯১৩ জন বন্দী। ময়মনসিংহ বিভাগের ৪টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ১ হাজার ৮০৩ জন হলেও বন্দী রয়েছে ৪ হাজার জন। খুলনা বিভাগের ১০টি কারাগারে ৫ হাজার ৬৯ জন ধারণক্ষমতায় বন্দী রয়েছে ৬ হাজার ৫৭২ জন। সিলেট বিভাগের ৫টি কারাগারে ৪ হাজার ৪৮২ জন ধারণক্ষমতার মধ্যে বন্দী রয়েছে ৪ হাজার ৫৪০ জন। রংপুর বিভাগের ৮টি কারাগারের ধারণক্ষমতা ৫ হাজার ১৭৯ জন। বর্তমানে বন্দী ৪ হাজার ৮৪৫ জন।

কারাগারগুলো বলছে, বন্দীর সংখ্যা বাড়লে জেলকোড অনুযায়ী কারাবন্দীদের সুযোগ-সুবিধায় ঘটতি পড়ে। ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি থাকায় বিভিন্ন রোগে ভোগে বন্দীরা। স্ক্যাবিস, হাড়ক্ষয়সহ বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় ভোগে তারা। ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সহকারী সার্জন মো. মেহেদী হাসান আজকের পত্রিকাকে বলেন, কারাবন্দীদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমস্যা দেখা যায় ত্বকের। স্ক্যাবিস ধরনের রোগে বেশি ভোগে তারা। এ ছাড়া দীর্ঘ মেয়াদে হাড়ের ক্ষয়, হার্টের রোগসহ বিভিন্ন রোগ দেখা দিতে পারে। তবে কারা ব্যবস্থাপনায় বন্দীদের সার্বক্ষণিক চিকিৎসাসেবা দেওয়া হয়।

ধারণক্ষমতার চেয়ে কারাগারে বন্দীর সংখ্যা বেশি হওয়ার বিষয়ে কারা অধিদপ্তরের সহকারী কারা মহাপরিদর্শক মো. জান্নাত-উল ফরহাদ বলেন, বিভিন্ন মামলায় গ্রেপ্তার ও সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের আদালতের নির্দেশে কারাগারে রাখা হয়। কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে দ্বিগুণ বন্দী থাকে। তবে সব কারাগারেই বন্দীর সংখ্যা বেশি, তা নয়। কোনো কোনো কারাগারে ধারণক্ষমতার চেয়ে বন্দীর সংখ্যা কমও রয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত