Ajker Patrika

ডিয়ার ডুয়ার্স

সজল জাহিদ
আপডেট : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৫: ৫৪
ডিয়ার ডুয়ার্স

প্রকৃতি আর রোমাঞ্চকে একসঙ্গে ঘুঁটে দেখতে পছন্দ করেন যাঁরা, তাঁদের সঙ্গে কথা আছে কিছু। কেউ যদি এমন একটা জায়গায় চলে যেতে পারেন, যেখানে একই সঙ্গে পাওয়া যেতে পারে গভীর অরণ্য, বাঘ-সাপ-হাতির শরীর হিম করা উপস্থিতি, অগণিত ময়ূরের ডাক, হাজার টিয়ার কলকাকলি, সবুজের সমুদ্রসম মন মাতানো চা-বাগান! আর যদি সঙ্গে থাকে শীতের আমেজ, হিম শীতের মধ্যরাতে ক্যাম্পফায়ার, তবে কেমন হয়?

একই সঙ্গে চা-বাগান, অরণ্য, ময়ূরের ঝাঁক, বাঘ আর শীতের রোমাঞ্চকর আমেজ পাওয়ার একদম প্যাকেজ ভ্রমণের জন্য ভারতের উত্তরবঙ্গ, আরও বিশেষ করে বললে ডুয়ার্সের কথা বলা যায় অনায়াসে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বুড়িমারী বা চ্যাংড়াবান্ধা বর্ডার দিয়ে ভারতে প্রবেশের মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যেই পৌঁছে যাওয়া যায় ডুয়ার্সের ঘন অরণ্যে। মাত্র এক ঘণ্টায় আপনি হারিয়ে যাবেন চা-বাগানের সবুজ সমুদ্রে, নীলকণ্ঠ ময়ূরের ঝাঁক দেখে আনন্দের আতিশয্যে হয়ে যেতে পারেন বাক্‌হারা! অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হবে শত শত টিয়ার ঝাঁকের দিকে। আর যদি ভাগ্য হয় ভীষণ সুপ্রসন্ন, তাহলে দেখা মিলেও যেতে পারে লেপার্ড, হাতি বা অন্য কারও সঙ্গে।

বাংলাদেশ অংশ থেকে বিস্তৃত ডুয়ার্সের সবচেয়ে কাছের অংশ হলো জলপাইগুড়ির লাটাগুড়ির ডুয়ার্সের অংশ। বর্ডার পার হয়ে লোকাল বাসে মাত্র এক ঘণ্টার মধ্যে সেখানে পৌঁছে যাওয়া যায়। জঙ্গলের কাছে পথে যেতে যেতে শুরুতেই মন ভালো করে দেবে সবুজে ছাওয়া দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান। যাঁরা পড়তে পছন্দ করেন আর ওপার বাংলার সাহিত্যের সঙ্গে পরিচিত, তাঁদের জন্য রোমাঞ্চের শুরুটা হয় এখান থেকেই। সমরেশ মজুমদারের বহু লেখায় যে জলপাইগুড়ি আর তার চা-বাগানের বর্ণনা পড়েছেন, তা এবার বাস্তবে এবং নিজের চোখে দেখার অদ্ভুত শিহরণ আপনাকে শিহরিত করবেই!

চা-বাগানের আগমনী আনন্দে বুঁদ থেকে হুট করেই ঢুকে পড়বেন চারদিকে শালগাছের আকাশছোঁয়া আর পাহাড়ি নদীর কলকল ধ্বনির অরণ্যে। মূল সড়কের পাশে না থেকে অটোকে বলে চলে যেতে পারেন একটু ভেতরের কোনো রিসোর্ট বা হোমস্টেতে, যেখানে আপনি একই সঙ্গে হয়তো পেয়ে যাবেন চা-বাগান, অদূরেই হয়তো গরুমারা রিজার্ভ ফরেস্ট, পাশেই বয়ে চলেছে অগভীর পাহাড়ি মূর্তি বা নেওরা নদী আর রয়েছে শীতে কাঁপন ধরানো শিরশিরে বাতাস।

দুপুরটা রিসোর্টের বারান্দায় অলস কাটিয়ে দলবল নিয়ে হাঁটতে যেতে পারেন কাছের চা-বাগানে বা অদূরের ঘন বনের আশপাশে। যেখানে নিশ্চিতভাবেই অগণিত বানর, নীলকণ্ঠ ময়ূরের দল দেখা যাবে কাছে-দূরে সবখানেই! ময়ূরের ডাক, পাখির ঝাঁক, বনমোরগ আর নানা রকম বন্য পাখির কলকাকলি আপনাকে বিমোহিত করে তুলবে। সন্ধ্যা নাগাদ রিসোর্টে ফিরে না এলে বুনো লেপার্ডের শিকার হয়ে যেতে পারেন যেকোনো সময়ই! তাই সন্ধ্যা হতেই নিরাপদ আশ্রয়ে ফিরে আসা বাধ্যতামূলক।

রাতে প্রাণ আর পেট ভরে খেতে পারেন নানা রকম মুখরোচক খাবার, যেমন আপনার ইচ্ছে বা রুচি। রাতভর আয়োজন করতে পারেন ক্যাম্পফায়ার আর বারবিকিউর। গভীর বনের পাশের ঘন সবুজ চা-বাগানের মাঝে রাতভর প্রিয়জনের সঙ্গে আড্ডার মজা অন্য কোথাও পাওয়া মুশকিল। সঙ্গে চলতে পারে কৈশোরের স্মৃতিচারণা, নানা রকম মজার অভিজ্ঞতার ভাগাভাগি, আগামী দিনের নানা রকম রোমাঞ্চকর পরিকল্পনার অদলবদল। ঘুমে জাগরণের বাকি রাত কাটিয়ে খুব সকালে বেরিয়ে পড়তে পারেন গভীর অরণ্যের নিখাদ রোমাঞ্চের খোঁজে। অবশ্যই দল বেঁধে, জঙ্গল চেনেজানে বা বোঝে এমন স্থানীয় কাউকে সঙ্গে নিয়ে। সঙ্গে অবশ্যই রাখবেন শুকনো খাবার, পানি, হালকা কাপড়।

ডুয়ার্স অঞ্চলে প্রায় ১৬৩টি চা-বাগান আছে।ধীরে ধীরে, চুপিসারে, গল্প কথায় মশগুল না হয়ে নীরবে ঢুকে পড়ুন আর গভীরে চলে যান বনের। যতটা মনে আর সাহসে কুলোয়। বনের গভীরতা, অচেনা পাখির সুর, ময়ূরের ঝাঁক, নানা রকম পশুপাখির ডাক, শুকনো পাতা ঝরার শব্দ আর গভীর বনে রোদ-ছায়ার লুকোচুরি খেলা আপনাকে এক অন্য ভুবনে নিয়ে যাবে—এ কথা বলাই যায়।

যদি ভাগ্য ভালো থাকে, তবে বাঘ বা বন্য হাতির দেখা মিলে গেলেও যেতে পারে। তা না হলেও বাইসন, লেপার্ড, বন্য শূকর—এসবের দেখা মেলে অহরহই। দল বেঁধে বনে ঘুরে ঘুরে ক্লান্ত হলে হ্যামক ঝুলিয়ে নিতে পারেন বিশ্রাম বা বসতে পারেন শুকনো পাতাঝরা বনে অথবা কোনো গাছের শিকড়ে। তবে সাবধান থাকতে হবে অজগর, রাজ গোখরো বা বন্য বিষাক্ত সাপ থেকে! এই সবকিছু মিলে অল্প সময়ে আর স্বল্প খরচে ঝামেলাহীনভাবে খুব সহজেই ঘুরে আসতে পারেন ওপার বাংলার উত্তর থেকে, নিখাদ অরণ্য আর পাহাড়ঘেরা ডুয়ার্স থেকে।

জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে বা বাসে যেতে পারেন কোচবিহার। পুরোনো এই শহরের রাজকীয় আভিজাত্য এখনো আপনার মন ভুলিয়ে দেবে। এখান থেকে যেতে পারেন আলিপুরদুয়ার ছাড়িয়ে জয়ন্তী পাহাড়ে। দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান, প্রাচীন জনপদ আর বক্সাটাইগার রিজার্ভ ফরেস্ট আপনাকে মাতিয়ে রাখবে।

যেভাবে যাবেন
আকাশপথে কলকাতা হয়ে জলপাইগুড়ি যাওয়া যায়। নইলে পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা বা লালমনিরহাটের বুড়িমারী সীমান্ত পার হয়ে খুব সহজে যাওয়া যায় ভারতীয় অংশের উত্তরবঙ্গে। জলপাইগুড়ি যেতে চাইলে বাংলাবান্ধা আর কোচবিহারের দিকে যেতে চাইলে বুড়িমারী সীমান্ত বেছে নেওয়া ভালো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মামলার আসামিসহ বিএসইসির ২২ কর্মকর্তাকে বরখাস্তের সিদ্ধান্ত

‘ভারতে ঢুকে’ পাকিস্তানি সেনাদের গুলি, সীমান্তে সংঘাত গড়াল ষষ্ঠ দিনে

অভিনেতা সিদ্দিককে মারধর করে থানায় সোপর্দ, ছিঁড়ে ফেলা হয় পরনের পোশাক

এনবিআর চেয়ারম্যানের কক্ষের সামনে কর্মকর্তাদের অবস্থান

ঐকমত্য কমিশনের সদস্যদের তেলের বরাদ্দ ২৫০ থেকে বেড়ে ৫০০ লিটার

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত