Ajker Patrika

ফ্যাশন শিল্প, মাছের চামড়া এবং তিন ফরাসি তরুণের গল্প 

মইনুল হাসান 
Thumbnail image

বেঞ্জামা, গোথিয়ে ও ইমানুয়েল তিন বন্ধু। বছর চারেক আগে, বয়স তখনো ৩০ হয়নি, কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ডিগ্রি লাভ করেছেন। আগে থেকেই ঠিক করে রেখেছিলেন জীবন ও জীবিকার প্রয়োজনে যা কিছু করবেন, তা হতে হবে সৃজনশীল ও পরিবেশবান্ধব। 

বেঞ্জামা ঠিক করলেন মাছের চামড়া নিয়ে কাজ করবেন। কেননা, এই চামড়ার গঠন, বিন্যাস ও নমনীয়তা পশুর চামড়ার চমৎকার বিকল্প হতে পারে। বন্ধু গোথিয়েকে এ কথা বলতেই তিনিও খুব উৎসাহিত হলেন। এই দুজনের সঙ্গে যোগ দিলেন আরেক বন্ধু ইমানুয়েল। 

স্যামন মাছের ট্যান করা চামড়াগোথিয়ের বাবার গ্যারেজে তিনজনে দিনের পর দিন একটানা পরিশ্রম করে ক্রোমিয়াম লবণ ছাড়া উদ্ভিজ্জ উপাদান প্রক্রিয়াজাত, অর্থাৎ ট্যান করার উপায় উদ্ভাবন করতে সমর্থ হলেন। ট্যান করার পর দেখা গেল এসব চামড়ার গুণগত মান মোটেই কম নয়। একই পুরুত্বের পশু চামড়ার চেয়ে বেশ কয়েক গুণ টেকসই এবং চমৎকার নমনীয় এই মাছের চামড়া। 

তিনজনে মিলে ২০১৮ সালে ফ্রান্সের লিয়ন নগরীতে প্রতিষ্ঠা করেন ফ্রান্সের প্ৰথম মাছের চামড়ার ট্যানারি, পোশাক ও ফ্যাশন স্টার্টআপ, নাম ‘ইকতিওস’ (ICTYOS)। 

স্যামন মাছের ট্যান করা চামড়ারেস্তোরাঁগুলোর ফেলে দেওয়া স্যামন, ট্রাউট ও স্টার্জন মাছের চামড়া সংগ্রহ করে এখানে প্রতিবছর ১০ থেকে ২০ টন মাছের চামড়া প্রক্রিয়াজাত করা হয়। এ ছাড়া তাদের পছন্দের তালিকায় অন্যান্য মাছের চামড়াও আছে। ট্যান করতে সময় লাগে দুই থেকে তিন সপ্তাহ। একটি মাঝারি আকারের স্যামন মাছের ট্যান করা চামড়ার মূল্য পড়বে ৩০ থেকে ৪০ ইউরো। 

নান্দনিক সব রঙের মাছের চামড়ার জনপ্রিয়তা ও চাহিদা দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে কোমরের বেল্ট, ঘড়ির বেল্ট, মেয়েদের হাতব্যাগ, জুতা ইত্যাদির জন্য নামকরা সব ব্র্যান্ডের চাহিদা মেটাতে ‘ইকতিওস’-এর সিও বেঞ্জামা মালাত্রায় বেশ ব্যস্ত সময় পার করছেন। তিনি জানিয়েছেন, মাছের চামড়া পশুর চামড়ার ওপর চাপ কমাবে। বিশেষ করে বিলুপ্তপ্রায় বিরল সরীসৃপ রক্ষা পাবে। বড় কথা, মাছের চামড়াকে আর বর্জ্য বলা যাবে না। এখন তা গুণগত মানে উন্নত, সস্তা এবং পরিবেশবান্ধব ফ্যাশন শিল্পের একটি অবিচ্ছেদ্য অংশ। একান্ত অধ্যবসায়ে এই তিন তরুণ তাঁদের স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন। 

মইনুল হাসান: ফ্রান্সপ্রবাসী লেখক

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত