Ajker Patrika

বিশ্বের ১০ বিপজ্জনক বিমানবন্দর

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ২১ জুলাই ২০২৫, ১৪: ৫৯
হুয়ানচো ই. ইয়রাসকুইন বিমানবন্দর, ক্যারিবিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া
হুয়ানচো ই. ইয়রাসকুইন বিমানবন্দর, ক্যারিবিয়া। ছবি: উইকিপিডিয়া

বিমানে ভ্রমণ সাধারণত নিরাপদ। কিন্তু পৃথিবীতে এমন কয়েকটি বিমানবন্দর আছে, যেগুলোতে অবতরণ বা উড্ডয়ন যে কাউকে দমবন্ধ করা অভিজ্ঞতা দিতে পারে। স্বল্প দৈর্ঘ্যের রানওয়ে, পাহাড় ইত্যাদি কারণে সেই বিমানবন্দরগুলো বিপজ্জনক; বিশেষভাবে প্রশিক্ষণ পাওয়া বৈমানিকেরাই সেসব বিমানবন্দরে বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণ করাতে পারেন। পৃথিবীতে এমন ১০টি বিমানবন্দর আছে।

পিটকিন কাউন্টি বিমানবন্দর, যুক্তরাষ্ট্র

পিটকিন কাউন্টি বিমানবন্দর। ছবি: ছবি: উইকিপিডিয়া
পিটকিন কাউন্টি বিমানবন্দর। ছবি: ছবি: উইকিপিডিয়া

এই বিমানবন্দর রকি পর্বতমালায় প্রায় ৭ হাজার ৮০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত। রানওয়ে ছোট, চারপাশে পাহাড় এবং সেখানকার মুহূর্তেই বদলে যাওয়া আবহাওয়া বিমানবন্দরটিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে। সেখানে অবতরণের সময় মুহূর্তের ভুলে বড় বিপদের আশঙ্কা থাকে। পাইলটদের প্রতিটি পদক্ষেপ নিতে হয় নিখুঁতভাবে।

মাদেইরা বিমানবন্দর, পর্তুগাল

মাদেইরা বিমানবন্দর, পর্তুগাল। ছবি: উইকিপিডিয়া
মাদেইরা বিমানবন্দর, পর্তুগাল। ছবি: উইকিপিডিয়া

মাদেইরা দ্বীপে অবস্থিত এই বিমানবন্দর সমুদ্রের ওপর নির্মিত। এর রানওয়ের এক পাশে সমুদ্র, অন্য পাশে পাহাড়। শেষ মুহূর্তে বাতাস দিক বদলে ফেললে অবতরণ খুব কঠিন হয়ে পড়ে সেখানে। এ জন্য বিশেষ প্রশিক্ষণ ছাড়া সেখানে কাউকে বিমান চালানোর অনুমতি দেওয়া হয় না।

কুরচেভেল অল্টিপোর্ট, ফ্রান্স

কুরচেভেল অল্টিপোর্ট, ফ্রান্স। ছবি: উইকিডিপিয়া
কুরচেভেল অল্টিপোর্ট, ফ্রান্স। ছবি: উইকিডিপিয়া

আল্পস পর্বতের মাঝখানে অবস্থিত এই ছোট বিমানবন্দরের রানওয়ে ঢালু। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১ হাজার ৭৬২ ফুট। সেখানে নামলে ভুল করার কোনো সুযোগ নেই—একবার অবতরণের সিদ্ধান্ত নিলে আর ফেরার রাস্তা নেই।

পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুটান

পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুটান। ছবি: উইকিপিডিয়া
পারো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, ভুটান। ছবি: উইকিপিডিয়া

ভুটানের এই বিমানবন্দর সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭ হাজার ৩০০ ফুট ওপরে। তার চারপাশে প্রায় ১৮ হাজার ফুট উঁচু পাহাড়। কোনো রাডার নেই, অর্থাৎ পরিষ্কার দিন ও ভালো আবহাওয়াতেই শুধু সেখানে ফ্লাইট নামতে বা উড়তে পারে। মাত্র ৫০ জন পাইলটের বিশেষ ছাড়পত্র আছে পারো বিমানবন্দরে ফ্লাইট পরিচালনার।

তেনজিং-হিলারি বিমানবন্দর, নেপাল

এভারেস্ট ভ্রমণের প্রধান প্রবেশদ্বার এই বিমানবন্দর পৃথিবীর উল্লেখযোগ্য বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর একটি। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ৯ হাজার ৩৪০ ফুট উঁচুতে অবস্থিত। রানওয়েটি খুবই ছোট ও ঢালু। এর এক পাশে পাহাড়, অন্য পাশে গভীর খাদ। সেখানে আধুনিক ল্যান্ডিং সিস্টেম নেই, সবকিছু নির্ভর করে পাইলটের চোখ ও অভিজ্ঞতার ওপর। আবহাওয়া মুহূর্তেই খারাপ হয়ে যেতে পারে, দেখা দিতে পারে কুয়াশা, বরফ আর ঝোড়ো হাওয়া। এসব অবস্থা বিমানবন্দরটিকে বিপজ্জনক করে তুলেছে।

হুয়ানচো ই. ইয়রাসকুইন বিমানবন্দর, ক্যারিবিয়া

এই বিমানবন্দরের রানওয়ে পৃথিবীর ছোট বাণিজ্যিক রানওয়ে হিসেবে পরিচিত। এর দৈর্ঘ্য মাত্র ১ হাজার ৩১২ ফুট লম্বা। রানওয়ের তিন দিকে সমুদ্রের খাড়া ঢাল, যা অবতরণ ও উড্ডয়নকে করে তোলে অত্যন্ত বিপজ্জনক। সামান্য ভুল হলেই বিমান সোজা সাগরে পড়ে যেতে পারে। এ কারণে সেখানে কেবল ছোট প্রপেলারযুক্ত বিমান চলাচল করে, বড় বা জেট বিমান চলাচলের অনুমতি নেই।

বারা বিমানবন্দর, স্কটল্যান্ড

বিশ্বের একমাত্র বিমানবন্দর, যেখানে সৈকতের বালুর ওপর বিমান অবতরণ করে। এটি স্কটল্যান্ডের একটি দ্বীপে অবস্থিত। সেখানে রানওয়ে হিসেবে ব্যবহার হয় সমুদ্রতট। তবে প্লেন নামতে পারে কেবল তখনই, যখন জোয়ার না থাকে। বালুর ওপর ল্যান্ডিং হওয়ায় পাইলটদের বাড়তি সতর্কতা নিতে হয়। সেখানে কোনো রানওয়ে লাইটিং নেই, তাই রাতে কোনো ফ্লাইট চালানো যায় না।

নারসারসুয়াক বিমানবন্দর, গ্রিনল্যান্ড

দক্ষিণ গ্রিনল্যান্ডের বরফে ঘেরা ফিয়র্ডের মাঝে অবস্থিত। এই বিমানবন্দরের পারিপার্শ্বিক বিরূপ আবহাওয়া পাইলটদের বিমান উড্ডয়ন বা অবতরণ করানোতে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়। সেখানে তুষারঝড় ও হিমশীতল বাতাস যেকোনো সময় পাইলটদের দৃষ্টিসীমা ঝাপসা করে দিতে পারে। নিরাপদে অবতরণ করতে হলে আবহাওয়ার অবস্থা ভালো থাকতে হয়।

সান্তোস দুমঁ বিমানবন্দর, ব্রাজিল

রিও ডি জেনিরোর ঠিক মধ্যখানে অবস্থিত এই বিমানবন্দর পাহাড় ও সমুদ্রের মাঝখানে নির্মিত। সে রানওয়েতে অবতরণ করতে হলে পাইলটদের আঁকাবাঁকা পথে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে বিমান চালাতে হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকা বলে সেখানে হঠাৎ বাতাসের দিক বদল বিপজ্জনক অবস্থা তৈরি করে।

প্রিন্সেস জুলিয়ানা বিমানবন্দর, ডাচ ক্যারিবিয়ান

এটি নেদারল্যান্ডসের অধীন ডাচ ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে অবস্থিত। এটি বিশ্বের বিপজ্জনক বিমানবন্দরগুলোর একটি। বিমানগুলো সৈকতের একদম গা ঘেঁষে উড়ে যায়। এই দৃশ্য দেখার জন্য হাজারো পর্যটক ভিড় করে মাহো বিচে। কিন্তু অনেক সময় এটিই বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। জেট ব্লাস্টের ধাক্কায় অনেকে পড়ে গিয়ে আহত হন।

এসব জায়গায় বিমান পরিচালনা করা পাইলটরা অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও প্রশিক্ষিত। তাঁরা নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও নিরাপত্তামূলক তদারকির মাধ্যমে ফ্লাইট পরিচালনা করেন।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত