Ajker Patrika

আজ ফিলিস্তিনি কারাবন্দী দিবস

অনলাইন ডেস্ক
ছবি: আল জাজিরা
ছবি: আল জাজিরা

আজ ফিলিস্তিনি কারাবন্দী দিবস। প্রতিবছর ১৭ এপ্রিল ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দীদের প্রতি সম্মান ও সমবেদনা জানানোর পাশাপাশি ইসরায়েলি দখলদারির বিরুদ্ধে প্রতিবাদস্বরূপ পালিত হয় বিশেষ এই দিবস।

১৯৭৪ সালে ১৭ এপ্রিল ইসরায়েলি কারাগার থেকে প্রথমবারের মতো মুক্তি পান মাহমুদ বকর হিজাজি নামের এক ফিলিস্তিনি বন্দী। পরে প্রতিবছর ফিলিস্তিনি বন্দীকে সম্মান জানাতে ও ইসরায়েলের চলমান গ্রেপ্তার এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন তুলে ধরার জন্য এদিনটি নির্ধারিত হয়।

কারাবন্দী অধিকার সংস্থা আদ্দামির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ইসরায়েল ও অধিকৃত পশ্চিম তীরের কারাগারে বন্দী আছেন প্রায় ১০ হাজার ফিলিস্তিনি। এই বন্দীদের মধ্যে ৩ হাজার ৪৯৮ জনকে কোনো অভিযোগ ছাড়াই আটকে রাখা হয়েছে, কোনো ধরনের বিচারও করা হয়নি, ৪০০ জন শিশু, ২৭ জন নারী এবং ২৯৯ জন যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করছেন।

এই তথাকথিত ‘প্রশাসনিক আটকাদেশ’-এর আওতায় নারী, শিশুসহ অনেককে ছয় মাস মেয়াদি আটকাদেশে রাখা যায়। তবে এটি বারবার নবায়নযোগ্য এবং সবচেয়ে বিতর্কিত যে বিষয়টি তা হলো, যে তথ্যের ভিত্তিতে বন্দীকে আটক করা হয়েছে, তা বন্দী বা তাঁর আইনজীবীকেও দেখানো হয় না।

ইসরায়েলই বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে শিশুদের সামরিক আদালতে বিচার করা হয় এবং সেখানে তাদের মৌলিক অধিকারের বিষয়ে একদমই আন্তরিকতা দেখানো হয় না। শিশু অধিকার বিষয়ক সংস্থা ‘ডিফেন্স ফর চিলড্রেন প্যালেস্টাইন’-এর তথ্য অনুযায়ী, প্রতিবছর ৫০০ থেকে ৭০০ ফিলিস্তিনি শিশুকে ইসরায়েলি সামরিক আদালতে তোলা হয়—এসব শিশুর বেশির ভাগেরই বয়স মাত্র ১৩-এর নিচে। এসব শিশুর বিরুদ্ধে সবচেয়ে সাধারণ অভিযোগ হলো—পাথর ছোড়া। ইসরায়েলি আইন অনুযায়ী এর শাস্তি সর্বোচ্চ ২০ বছর কারাদণ্ড। তবে, ইসরায়েলি কারাগারে তারা কোনো ধরনের বিচার ছাড়াই এর চেয়ে বেশি বছর আটক থাকে।

কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার তথ্য অনুসারে, ইসরায়েলি কারাগারে এখনো আটক আছে ৪ শতাধিক শিশু। যাদের বেশির ভাগই বিচারপূর্ব বন্দী—অর্থাৎ, এখনো কোনো দোষ প্রমাণ হয়নি।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর থেকে ২০২৫ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ফিলিস্তিনি রাজনৈতিক বন্দীর সংখ্যা দ্বিগুণ হয়েছে। ৭ অক্টোবর ২০২৩ সালের আগে ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দী ছিল ৫ হাজার ২৫০, দেড় বছরে যা বেড়ে হয়েছে প্রায় ১০ হাজার। এই সময়ে ইসরায়েল নতুন করে প্রায় ৩০ হাজার ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে। আর হামাসের সঙ্গে বন্দী বিনিময়ের চুক্তি অনুযায়ী ইসরায়েলি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়েছেন ২ হাজারের সামান্য বেশি ফিলিস্তিনি বন্দীকে। এর মানে দাঁড়ায়, প্রতি একজন মুক্তিপ্রাপ্ত বন্দীর বিপরীতে ১৫ জনকে নতুন করে আটক করা হয়েছে।

এই বছরের শুরুতে হওয়া সর্বশেষ যুদ্ধবিরতির সময়, ইসরায়েলের কারাগারে বন্দী ছিল ১৫ হাজার গাজাবাসী। যাদের মধ্যে মুক্তি পেয়েছে মাত্র ৭৩৯ জন ফিলিস্তিনিকে। এর মধ্যে ৩৩৭ জন উত্তর গাজার বাসিন্দা, ২২৭ জন গাজা সিটির বাসিন্দা এবং ১৫১ জন খান ইউনিসের বাসিন্দা। অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের মাত্র ৬৫২ জন মুক্তি পেয়েছেন। যাঁদের মধ্যে ১১৮ জন রামাল্লার, ১১১ জন হেবরনের ও ৭৯ জন নাবলুসের বাসিন্দা। বিপরীতে নতুন করে আটক করা হয়েছে প্রায় সাড়ে ১৪ হাজার পশ্চিম তীর বাসিন্দাকে।

দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় ইসরায়েল মুক্তি দেয় মোট ১ হাজার ৭৯৩ জন ফিলিস্তিনিকে, বিনিময়ে হামাস মুক্তি দেয় ৩৮ জন ইসরায়েলি বন্দীকে, যার মধ্যে ৮টি মরদেহও ছিল।

ইসরায়েলের এই আটক নীতি বহু দশক ধরে ফিলিস্তিনিদের জীবনকে গভীরভাবে প্রভাবিত করছে। ফিলিস্তিনি বন্দী ও সাবেক বন্দীদের কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, ১৯৬৭ সাল থেকে প্রায় ১০ লাখ ফিলিস্তিনিকে আটক করেছে ইসরায়েলি বাহিনী—যা ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ। গড়ে বলতে গেলে, প্রতি পাঁচজন ফিলিস্তিনির মধ্যে একজন কখনো না কখনো আটক হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত