Ajker Patrika

পশ্চিমবঙ্গের চিড়িয়াখানা থেকে উধাও অর্ধশতাধিক প্রাণী ‘আম্বানিদের চিড়িয়াখানায়’

অনলাইন ডেস্ক
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর চিড়িয়াখানার মূল ফটক। ছবি: সংগৃহীত
পশ্চিমবঙ্গের আলিপুর চিড়িয়াখানার মূল ফটক। ছবি: সংগৃহীত

ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে শত শত প্রাণী রহস্যজনকভাবে উধাও হয়ে যাওয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনায় কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেছে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা। তাদের দাবি, চিড়িয়াখানায় নথিভুক্ত প্রাণীর সংখ্যা ৬৭২ থেকে কমে ৩৫১-তে দাঁড়িয়েছে, অর্থাৎ ৩২১টি প্রাণীর খোঁজ নেই।

এই অভিযোগের মধ্যেই নতুন করে আরও ৫১টি প্রাণী ভিনরাজ্যের একটি বেসরকারি রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানোর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়েও থানায় অভিযোগ করা হয়েছে। সেভ ওয়াইল্ড অ্যানিমেলস অব আলিপুর জু ম্যান্ড আওয়ার নেচার (স্বজন) নামে একটি প্রাণী অধিকার সংস্থা বিষয়টি নিয়ে সরব হয়েছে। এর মধ্যে সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমে বলা হয়েছে, আলিপুর চিড়িয়াখানার ৫১টি প্রাণী গুজরাটের জামনগরের বনতারায় আম্বানিদের ব্যক্তিগত ‘চিড়িয়াখানা’য় স্থানান্তর করা হয়েছে।

মামলাকারী সংস্থার অভিযোগ, এই গরমিল শুধু এক বছরের নয়, ৩০ বছর ধরেই চলছে। তারা আদালতের কাছে অন্তত দশ বছরের সমস্ত হিসাব খতিয়ে দেখার আবেদন জানিয়েছে। আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস জানিয়েছে, এই ঘটনার জেরে কেন্দ্রও নড়েচড়ে বসেছে; সেন্ট্রাল জু অথোরিটির একটি প্রতিনিধি দল আলিপুর চিড়িয়াখানা পরিদর্শনে আসার কথা। রাজ্য চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষও বৈঠকে বসছে।

রাজ্য বন দপ্তর ও চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ অবশ্য এই বিস্ময়কর উধাওয়ের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে এটিকে গণনার ভুল বলে দাবি করেছে। তাদের মতে, কেন্দ্রীয় সংস্থাকে পাঠানো তথ্য সঠিক ছিল, বরং কেন্দ্রের পক্ষ থেকেই রিপোর্টে ভুল সংখ্যা প্রকাশ করা হয়েছে, যা সংশোধনের আবেদনও করা হয়েছিল।

তবে মামলাকারী সংস্থা এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ আরও গুরুতর: পশুর সংখ্যা কমিয়ে চিড়িয়াখানার কিছু জমি ‘অপ্রয়োজনীয়’ হিসেবে দেখিয়ে বিক্রি করার ছক কষা হচ্ছে। কেউ কেউ আবার অদৃশ্য হয়ে যাওয়া এই প্রাণীগুলোর পাচার হওয়ার সম্ভাবনার কথাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না।

বন্যপ্রাণী ও চিড়িয়াখানা রক্ষার লক্ষ্যে গড়ে ওঠা নাগরিক আন্দোলনের কর্মী মহালয়া চট্টোপাধ্যায় ই-মেইল করে থানায় অভিযোগ করেছেন, আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে ৫১টি প্রাণী অন্য রাজ্যের একটি বেসরকারি রিহ্যাব সেন্টারে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগপত্রে তিনি উল্লেখ করেছেন, ২০২৩-২৪ সালের আলিপুর চিড়িয়াখানার বার্ষিক প্রতিবেদনে কলকাতা থেকে ৫১টি প্রাণী বেসরকারি রিহ্যাব সেন্টারে স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন, বন্যপ্রাণী সুরক্ষা আইনের অধীনে প্রাণী বিক্রি নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও কেন ঐতিহাসিক আলিপুর চিড়িয়াখানা থেকে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কিলোমিটার দূরে একটি বেসরকারি কেন্দ্রে প্রাণী পাঠানো হলো, যেখানে আলিপুর চিড়িয়াখানাতেই প্রাণী পালনের চমৎকার সুবিধা রয়েছে?

মহালয়া চট্টোপাধ্যায় আরও অভিযোগ করেন, বেসরকারি রিহ্যাব সেন্টার কর্তৃপক্ষ অধিগ্রহণের কোনো বিবরণ প্রকাশ করেনি এবং সেন্ট্রাল জু অথোরিটিও ২০২৪-২৫ সালের প্রাণী বিধিবদ্ধ তালিকাতে ওই বেসরকারি রিহ্যাব সেন্টারে প্রাণীর সংখ্যা বা অধিগ্রহণ বিষয়ে তথ্য প্রকাশ করেনি, যা আইনত অপরাধ। তিনি এটিকে আলিপুর চিড়িয়াখানার বন্যপ্রাণী নিয়ে সন্দেহজনক কার্যকলাপের ইঙ্গিত হিসেবে দেখছেন।

মহালয়া চট্টোপাধ্যায় তাঁর অভিযোগে দাবি করেছেন, কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ এবং পশ্চিমবঙ্গ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ কর্তৃক প্রকাশিত বিধিবদ্ধ রেকর্ড থেকে স্পষ্ট, ২০১৭ সাল থেকে আজ পর্যন্ত বিপুলসংখ্যক প্রাণী নিখোঁজ হয়েছে। এর মধ্যে ২০১৭ সালের ১ এপ্রিল প্রাণীর সংখ্যা ছিল ১ হাজার ১৮৬, যা কমে ৯১০ হয়েছে; পশ্চিমবঙ্গ চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের তালিকায় মৃত্যু বা স্থানান্তরিত প্রাণীর সংখ্যা ছাড়া ৩০২টি প্রাণী নিখোঁজ রয়েছে; ২০২০ সালের ১ এপ্রিলের উদ্বোধনী স্টকের তুলনায় ৩১ মার্চ ২০২০ তারিখে ৭৮৩টি প্রাণীর শেষ স্টক রাতারাতি ৭৫৬-তে নেমে আসে; একই দিনের ডব্লিউবিজেডএ-এর অধীনে আলিপুর চিড়িয়াখানার রিপোর্টে প্রায় ৫৬টি প্রাণী নিখোঁজ হওয়ার ইঙ্গিত রয়েছে; ২০২২ সালের ১ এপ্রিল ৫৯টি বিরল প্রাণী নিখোঁজ হয়েছে; ৩১ মার্চ ২০২৪ তারিখে আলিপুর চিড়িয়াখানার তথ্যে প্রাণীর সংখ্যা ছিল ৮৮৪টি, যেখানে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে ৬৭২টি; আশ্চর্যজনকভাবে, পরের দিন অর্থাৎ ১ এপ্রিল ২০২৪ তারিখে কেন্দ্রীয় চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষের রিপোর্ট অনুসারে, খোলা প্রাণীর সংখ্যা মাত্র ৩৫১টি হয়ে ওঠে, যার অর্থ রাতারাতি প্রায় ৫৩৩ থেকে ৩৫১টি প্রাণী নিখোঁজ ছিল।

পশুপ্রেমীরা এবং নাগরিক সমাজের কর্মীরা এই ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের মতে, চিড়িয়াখানায় প্রাণী বাঁচানোর বদলে যদি প্রাণী ‘উধাও’ হয়ে যায়। এটি অত্যন্ত গুরুতর বিষয় এবং এর যথাযথ তদন্ত হওয়া জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তির দিনে এনসিপির শীর্ষ ৫ নেতা হঠাৎ কক্সবাজারে কেন

জাপায় নতুন মোড়: আনিসুল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, বহিষ্কৃতদের পুনর্বহাল

জুলাই ঘোষণাপত্র: গণ-অভ্যুত্থানের দলিলে যা যা রয়েছে

২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারতের শুল্ক অনেক বাড়িয়ে দেব: ট্রাম্পের হুমকি

যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন ভিসা পেতে লাগতে পারে ১১ লাখ টাকার জামানত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত