Ajker Patrika

ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য সফরের আগেই শেষ মার্কিন জিম্মি মুক্তি দেবে হামাস

অনলাইন ডেস্ক
মার্কিন জিম্মি ২১ বছর বয়সী ইদান। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল
মার্কিন জিম্মি ২১ বছর বয়সী ইদান। ছবি: টাইমস অব ইসরায়েল

আগামী মঙ্গলবার মধ্যপ্রাচ্যে পা রাখতে যাচ্ছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এর ঠিক আগে আগে ইসরায়েল-আমেরিকান জিম্মি ইদান আলেকজান্ডারকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে হামাস। ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী এই গোষ্ঠীটি জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি চুক্তি প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গাজায় এখন বেঁচে থাকা জিম্মিদের মধ্যে ইদানই শেষ মার্কিন নাগরিক।

তেল আবিবে জন্ম নেওয়া ইদান আলেকজান্ডারের বেড়ে ওঠা যুক্তরাষ্ট্রের নিউ জার্সিতে। ২১ বছর বয়সী এই যুবক গাজা সীমান্তে একটি বিশেষ পদাতিক ইউনিটে কর্মরত ছিলেন। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলার সময় তাঁকে আটক করা হয়।

হিসাব অনুযায়ী, সে সময় হামাস যে ২৫১ জনকে জিম্মি করে, তাদের মধ্যে ৫৯ জন এখনো গাজায় রয়েছে। তবে ধারণা করা হচ্ছে, এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২৪ জন বেঁচে আছে।

ইদানকে মুক্তি দেওয়ার সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে হামাস আরও জানায়, ৭০ দিন ধরে গাজায় ইসরায়েলি অবরোধ রয়েছে। কোনো ধরনের ত্রাণ বা মানবিক সহায়তা ঢুকতে দিচ্ছে না ইসরায়েল। মানবিক সহায়তা প্রবেশের চুক্তি সহজ করতে এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।

হামাসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বিবিসিকে জানান, চুক্তির বিষয়ে কাতারে এক মার্কিন প্রশাসনিক কর্মকর্তার সঙ্গে সরাসরি আলোচনা চলছে।

আলোচনার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট একজন জ্যেষ্ঠ ফিলিস্তিনি কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্যে আগমনের আগে ‘সদিচ্ছার নিদর্শন’ হিসেবে হামাস এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তিনি আরও জানান, ইদানের মুক্তির প্রক্রিয়া চূড়ান্ত করতে স্থানীয় সময় আজ সোমবার ভোরে হামাস ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আরেকটি বৈঠক নির্ধারিত হয়েছে। মুক্তি কার্যক্রমের সময় ইসরায়েলি সামরিক তৎপরতা এবং আকাশ অভিযান সাময়িকভাবে স্থগিত রাখা প্রয়োজন।

এদিকে নিজের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে আলেকজান্ডারের মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। তিনি এটিকে ‘অসাধারণ খবর’ এবং ‘সদিচ্ছার প্রকাশ’ বলে উল্লেখ করেছেন।

হামাস এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, যুদ্ধবিরতি অর্জন এবং গাজায় খাদ্য, ওষুধসহ অন্য সামগ্রী প্রবেশের সুযোগ তৈরির প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে ইদানকে মুক্তি দেওয়া হচ্ছে। গাজা ৭০ দিন ধরে সম্পূর্ণ অবরোধের মধ্যে রয়েছে। এ অবস্থায় যুদ্ধের অবসান ঘটাতে একটি চূড়ান্ত চুক্তিতে পৌঁছাতে আগ্রহী তারা।

এদিকে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র হামাসের এই সিদ্ধান্তের বিষয়ে তাদের অবহিত করেছে। নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে জানায়, হামাসের এই পদক্ষেপকে তারা ‘মার্কিনিদের প্রতি আন্তরিকতা সদিচ্ছার প্রকাশ’ হিসেবে বিবেচনা করছে। এটির মাধ্যমে আরও জিম্মিদের মুক্তি নিয়ে আলোচনার পথ খুলবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বিবৃতিতে আরও বলা হয়, ইসরায়েলের নীতি হলো—‘যুদ্ধের সব লক্ষ্য অর্জনের অঙ্গীকারের ভিত্তিতে, সংঘর্ষ চলাকালে আলোচনা করা হবে।’

হামাস আগেও বলেছে, তারা কেবল সেই চুক্তিতেই সম্মত হবে, যা যুদ্ধের অবসান নিশ্চিত করবে। তবে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার এই শর্ত প্রত্যাখ্যান করেছেন।

মিসর ও কাতার এক যৌথ বিবৃতিতে জানিয়েছে, ইদানকে মুক্তি দেওয়ার জন্য হামাসের সম্মতি ‘আলোচনার টেবিলে ফিরে আসার পথে একটি উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ’।

হামাস ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে ইদানকে মুক্তি নিয়ে আলোচনা এমন একসময় চলছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসনের মধ্যে নেতানিয়াহুর অবস্থান নিয়ে বাড়তে থাকা অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে। এদিকে, অভ্যন্তরীণভাবে নেতানিয়াহুও চাপের মুখে আছেন। রাজনৈতিক স্বার্থে তিনি যুদ্ধ দীর্ঘায়িত করছেন বলে অভিযোগ অনেকের।

তবে ট্রাম্পের সফর শেষ হওয়ার আগে কোনো চুক্তি না হলে হামাসের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান আরও জোরদার করা হবে বলে হুমকি দিয়েছে ইসরায়েল।

ইসরায়েলি কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, পরবর্তী সামরিক অভিযানের পরিকল্পনায় পুরো ভূখণ্ড দখলে রাখা, ফিলিস্তিনিদের দক্ষিণে জোরপূর্বক স্থানান্তর এবং বেসরকারি কোম্পানির মাধ্যমে ত্রাণ বিতরণের পরিকল্পনা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। জাতিসংঘ ও এর মানবিক সহযোগীরা এই পরিকল্পনার বিরোধিতা করেছে। তারা বলেছে, এটি ত্রাণকে ‘অস্ত্রায়নের’ পথে নিয়ে যাবে, যা মেনে নেওয়া হবে না।

ইসরায়েল গাজায় ৭০ দিন ধরে সব ধরনের খাদ্য, ওষুধ এবং অন্যান্য মানবিক সহায়তার প্রবেশ বন্ধ রেখেছে। সাহায্য সংস্থাগুলো বলছে, এটি মূলত অভুক্ত রাখার নীতি, যা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, চলতি বছরের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত শিশুদের মধ্যে প্রায় ১০ হাজার শিশুকে তীব্র পুষ্টিহীনতায় ভুগতে হচ্ছে। খাবারের দাম বেড়েছে ১৪০০ শতাংশ পর্যন্ত।

গত মার্চের মাঝামাঝি সময়ে ইসরায়েল আবারও গাজায় বিমান হামলা ও সামরিক অভিযান শুরু করে। হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, নতুন করে শুরু হওয়া হামলায় এ পর্যন্ত ২ হাজার ৭২০ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন।

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ জন নিহত হন এবং ২৫০ জনের বেশি মানুষকে জিম্মি করা হয়। এর জবাবে ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় ৫২ হাজার ৮২৯ জন নিহত হয়েছেন বলে হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত