Ajker Patrika

১৫ ত্রাণকর্মী–চিকিৎসককে হত্যা: এক কমান্ডারের ওপর দায় চাপাল ইসরায়েল

অনলাইন ডেস্ক
ইসরায়েলি হামলায় নিহত প্যারামেডিকের মুঠোফোনে পাওয়া ভিডিওর স্থিরচিত্র। ছবি: বিবিসি
ইসরায়েলি হামলায় নিহত প্যারামেডিকের মুঠোফোনে পাওয়া ভিডিওর স্থিরচিত্র। ছবি: বিবিসি

গাজায় ১৫ জন জরুরি ত্রাণকর্মী এবং চিকিৎসকের মৃত্যুর জন্য কিছু সদস্যের পেশাগত ব্যর্থতাকে দায়ী করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী আইডিএফ। এতগুলো মানুষের জীবন শেষ করার পেছনে তাদের সাফাই—কমান্ড সংক্রান্ত ভুল বোঝাবুঝি এবং কিছু সেনার আদেশ লঙ্ঘনের কারণে এমন ঘটেছে। তবে, হামলায় নিহতদের মধ্যে ৬ জন হামাস সদস্য বলেও দাবি করেছে আইডিএফ।

বিবিসির প্রতিবেদনে অনুযায়ী, গত মাসের এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে আইডিএফের ভাষ্য—ওই ঘটনায় কেউ সামারি এক্সিকিউশনের শিকার হননি।

আন্তর্জাতিক আইনের অধীনে যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও কোনো ব্যক্তি আত্মসমর্পণের অধিকার রাখেন। কিন্তু তাঁকে আত্মসমর্পণের সুযোগ না দিয়ে তাৎক্ষণিকভাবে হত্যা করা হলে সেটিকে সামরিক এক্সিকিউশন বলে। যা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন।

এ ঘটনার তদন্তের দায়িত্বে থাকা আইডিএফের মেজর জেনারেল ইয়োভ হার ইভেন সাংবাদিকদের জানান, ওই গাড়িবহরে থাকা ৬ জরুরি কর্মী হামাসের সদস্য ছিলেন, সেটি নিশ্চিত হয়েই ইসরায়েলি সেনারা হামলা চালিয়েছে। ওই ৬ জনের নামও শিগগিরই প্রকাশ করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।

আইডিএফের তদন্ত প্রতিবেদন অনুযায়ী, খুবই প্রতিকূল এবং বিপজ্জনক একটি এলাকায় ওই হামলার ঘটনা ঘটে। গাড়িগুলো খুব দ্রুত গতিতে এবং সন্দেহজনকভাবে এগোচ্ছিল। এ ছাড়া, অঞ্চলটিতে যথেষ্ট আলো ছিল না। যেকারণে ওই অঞ্চলে দায়িত্বে থাকা কমান্ডার বুঝতে পারেননি যে সেখানে একটি অ্যাম্বুলেন্স ছিল। ফলে, সেটি তাঁর কাছে হুমকি হিসেবে প্রতীয়মান হয়। আর এ কারণেই হামলার নির্দেশ দেন তিনি। আইডিএফের রিপোর্টে বলা হয়েছে, এ ঘটনার সামগ্রিক দায়ভার ওই কমান্ডারকে নিতে হবে এবং তিনি এর জন্য উপযুক্ত সাজাও পাবেন। এরই মধ্যে অসম্পূর্ণ এবং ভুল প্রতিবেদন দেওয়ার সঙ্গে জড়িত এক ডেপুটি কমান্ডারকে বরখাস্ত করা হয়েছে বলেও জানানো হয় প্রতিবেদনে।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এই তদন্ত প্রতিবেদনকে অগ্রহণযোগ্য আখ্যা দিয়েছে আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন রেড ক্রিসেন্ট। তাদের অভিযোগ—প্রকৃত সত্যকে আড়াল করে মাঠপর্যায়ের একজন কমান্ডারের ওপর দোষ দিয়ে দায় এড়ানোর চেষ্টা করছে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

এর আগে, আইডিএফ দাবি করেছিল, গাড়িটির গতিবিধি সন্দেহজনক ছিল। এমনিতেই অঞ্চলটি অন্ধকার ছিল, তার ওপর গাড়িটি নাকি হেডলাইট না জ্বালিয়ে চলছিল। এ ছাড়া, গাড়িটি ওই অঞ্চল দিয়ে যাওয়ার আগে আইডিএফের অনুমতিও নেয়নি বলেও অভিযোগ তোলে তারা। পরে, গাড়িতে থাকা এক ব্যক্তির সেলফোন উদ্ধারের পর দেখা যায়, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর এসব দাবি সত্য নয়। গাড়িটি হেডলাইট জ্বালিয়েই চলছিল। চালু ছিল জরুরি সংকেতও। এ ছাড়া, গাড়িতে থাকা প্রত্যেকের পরনে হাই ভিউ জ্যাকেটও ছিল।

ভিডিও প্রকাশ্যে আসার পর এই হত্যাকাণ্ডকে ‘ভুল’ বলে স্বীকার করে আইডিএফ।

গত ২৩ মার্চ জাতিসংঘের এক ত্রাণকর্মীসহ ১৫ জরুরি সেবাকর্মী এবং চিকিৎসকের গাড়িবহরে হামলা চালায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর সদস্যরা, এতে প্রাণ হারান ১৫ জনই। এর আগে এক প্রতিবেদনে বিবিসি জানায়, ওই হত্যাকাণ্ডের সময় ইসরায়েলি সেনারা ১০০ টিরও বেশি গুলি ছুড়েছে। এর মধ্যে কিছু গুলি মাত্র ১২ মিটার (৩৯ ফুট) দূর থেকে করা হয়েছে। একটি সেলফোনে ধারণ করা ভিডিওর ফরেনসিক অডিও বিশ্লেষণে উঠে আসে এসব তথ্য।

এর আগে, গত বছরের এপ্রিলেও ইসরায়েলি বর্বরতা শিকার হয়ে নিহত হন ওয়ার্ল্ড সেন্ট্রাল কিচেনের সাত কর্মী। তখনো সামরিক বাহিনী দুই কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করে দায় সারে ইসরায়েলি কর্তৃপক্ষ।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত