Ajker Patrika

ভারতীয় নার্স নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত হলো যেভাবে

অনলাইন ডেস্ক
ভারতের সর্বোচ্চ সুন্নি ধর্মীয় নেতা শেখ আবুবকর আহমদ। ছবি: পিটিআই
ভারতের সর্বোচ্চ সুন্নি ধর্মীয় নেতা শেখ আবুবকর আহমদ। ছবি: পিটিআই

ভারতের সর্বোচ্চ সুন্নি ধর্মীয় নেতা শেখ আবুবকর আহমদের হস্তক্ষেপে ইয়েমেনে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত নার্স নিমিষা প্রিয়ার শাস্তি সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়েছে। ২০১৭ সালে এক ইয়েমেনি নাগরিককে হত্যার দায়ে নিমিষার মৃত্যুদণ্ড নির্ধারিত ছিল আজ বুধবার, ১৬ জুলাই। তবে শেষ মুহূর্তে কূটনৈতিক ও ধর্মীয় আলোচনার মাধ্যমে ইয়েমেনি আদালত তাঁর শাস্তি স্থগিত করেন।

কে এই শেখ আবুবকর আহমদ

শেখ আবুবকর আহমদ, যিনি কানথাপুরম এ পি আবুবকর মুসলিয়ার নামেও পরিচিত। ২০১৯ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি অল ইন্ডিয়া তানজিম উলামা-ই-ইসলাম কর্তৃক ‘গ্র্যান্ড মুফতি অব ইন্ডিয়া’ হিসেবে মনোনীত হন। তিনি কেরালার কোঝিকোড়ের কানথাপুরমে জন্মগ্রহণ করেন এবং গত কয়েক দশকে ইসলামি শিক্ষা, সমাজকল্যাণ ও ধর্মীয় নেতৃত্বে অসাধারণ ভূমিকা পালন করছেন।

তিনি প্রতিষ্ঠা করেছেন মারকাযু সাকাফাথিস সুন্নিয়্যাহ (জামিয়া মার্কায), যা কেরালায় অবস্থিত একটি বৃহৎ ইসলামি শিক্ষা ও সমাজসেবা প্রতিষ্ঠান। তিনি অল ইন্ডিয়া সুন্নি জামিয়্যাথুল উলামা এবং সামসতা কেরালা জমিয়্যাথুল উলামার সাধারণ সম্পাদক হিসেবেও দায়িত্ব পালন করছেন। আন্তর্জাতিক মঞ্চে জাতিসংঘ ও ইউনেসকোর মতো সংস্থার আলোচনায়ও অংশ নিয়েছেন তিনি।

কেরালার নিমিষা প্রিয়া একজন নার্স, তিনি ২০১৭ সালে ইয়েমেনের নাগরিক তালাল আবদু মাহদিকে হত্যার দায়ে গ্রেপ্তার হন। এই অপরাধের শাস্তি হিসেবে ইয়েমেনের ইসলামভিত্তিক আইনে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয় তাঁকে। বিষয়টি নিয়ে ভারতের মানবাধিকারকর্মীরা ব্যাপক প্রচারণা চালান। কেরালার কংগ্রেস এমএলএ চান্ডি উম্মেন গ্র্যান্ড মুফতির হস্তক্ষেপ চান। তাঁর মাধ্যমে ইসলামি আইনের ‘দিয়া’ (রক্তমূল্য) ব্যবস্থার আওতায় ক্ষমা প্রার্থনার উদ্যোগ নেওয়া হয়।

গ্র্যান্ড মুফতি শেখ আবুবকর আহমদ ইয়েমেনের প্রখ্যাত সুফি আলেম শেখ হাবিব ওমর বিন হাফিজের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ইসলামিক আইন অনুযায়ী, হত্যার শিকার ব্যক্তির পরিবার চাইলে নির্দিষ্ট পরিমাণ রক্তমূল্য নিয়ে অপরাধীকে ক্ষমা করতে পারে। এই নীতিকে ভিত্তি করেই মৃত্যুদণ্ড ঠেকানোর প্রচেষ্টা চালান তিনি।

এই মধ্যস্থতার ফলে ইয়েমেন সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে নিমিষা প্রিয়ার মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার ঘোষণা দেয়। বর্তমানে হত্যাকাণ্ডের শিকার তালাল মাহদির পরিবার ও মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে আলোচনা চলছে। সম্ভাব্য সমাধান হিসেবে ১০ লাখ ডলারের রক্তমূল্য (দিয়া) গ্রহণের বিষয়টি আলোচনায় রয়েছে, যা দিলে নিমিষা প্রিয়াকে চূড়ান্তভাবে ক্ষমা করা হতে পারে।

গতকাল মঙ্গলবার কেরালার কোঝিকোড়ের কাছে কারন্থুরে স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে শেখ আবুবকর আহমদ বলেন, ‘আমরা ইসলামের নীতি অনুসারে ইয়েমেনি ধর্মীয় নেতাদের কাছে মানবিক বিবেচনায় ক্ষমার আবেদন করেছি। আমাদের অনুরোধের ভিত্তিতে ইয়েমেনি কর্তৃপক্ষ মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করেছে—এটা নিশ্চিত খবর। সবাই মিলে তাঁর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করুন।’

তিনি আরও বলেন, ‘ইসলাম জীবন রক্ষার ওপর সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়। এই ধর্মের নীতিই আমরা অনুসরণ করেছি।’

বর্তমানে আলোচনার মাধ্যমে একটি চূড়ান্ত ক্ষমা চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা চলছে, যা সফল হলে নিমিষা প্রিয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে চিরতরে মুক্তি পাবেন। এ ব্যাপারে শেখ আবুবকর আহমদের চেষ্টা শুধু ধর্মীয় মধ্যস্থতার নয়, ভারতের জন্য একটি কূটনৈতিক উদাহরণ হিসেবেও প্রশংসিত হচ্ছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত