Ajker Patrika

বিদেশিদের জন্য জাপানে নতুন টাস্কফোর্স গঠনের নেপথ্যে কী

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ১৮ জুলাই ২০২৫, ১৯: ৩৬
জাপানের টোকিও শহর। ছবি: সিএনএন
জাপানের টোকিও শহর। ছবি: সিএনএন

দীর্ঘদিন ধরে বিদেশি কর্মী ও পর্যটকদের আকৃষ্ট করে স্থবির অর্থনীতিকে চাঙা করার চেষ্টা করে আসছে জাপান। তবে সম্প্রতি দেশটিতে বিদেশিদের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে—এমন ধারণা জন্মেছে জনমনে। এই ধারণা একধরনের বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এই পরিপ্রেক্ষিতে আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রধানমন্ত্রী শিগেরু ইশিবা একটি নতুন টাস্কফোর্স গঠন করেছেন। এই দপ্তরের নাম—‘বিদেশি নাগরিকদের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সহাবস্থানের প্রচার দপ্তর’।

প্রধানমন্ত্রীর ভাষ্যমতে, কিছু বিদেশি নাগরিক অপরাধমূলক বা অসভ্য আচরণে জড়িত হচ্ছে এবং বিভিন্ন সরকারি সুবিধার অপব্যবহার করছে—এই যুক্তিতে টাস্কফোর্সের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। এটি একটি ‘কমান্ড সেন্টার’ হিসেবে কাজ করবে, যা অভিবাসন, বিদেশিদের জমি ক্রয় ও বকেয়া সামাজিক বিমার মতো বিষয়গুলো তদারকি করবে। এমনকি যেসব বিদেশি চিকিৎসা খরচ পরিশোধ করেন না, তাঁদের ভিসা বা পুনরাগমনে নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার নীতিও বিবেচনায় রয়েছে।

আজ শুক্রবার সিএনএন জানিয়েছে, জাপানের ১২ কোটির বেশি জনসংখ্যার মধ্যে বিদেশি নাগরিক মাত্র ৩ শতাংশ। কিন্তু হঠাৎ করে পর্যটক বেড়ে যাওয়ার ফলে স্থানীয় জনজীবনে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। ২০২৪ সালের প্রথমার্ধেই দেশটিতে ২ কোটি ১৫ লাখের বেশি বিদেশি পর্যটক জাপান সফর করেছেন। এতে বাসিন্দাদের অভিযোগ বেড়েছে। বাড়তি ভিড়, দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, ঐতিহ্যবাহী হট স্প্রিং অঞ্চলে পানির ঘাটতি এবং ধানের মতো পণ্যসংকটের জন্য বিদেশিদের দায়ী করছেন তাঁরা।

কেউ কেউ মনে করছেন, বিদেশিরা স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকরি ছিনিয়ে নিচ্ছেন। দেশটির ৭৮ বছর বয়সী সাবেক এক ব্যবসায়ী বলেন, ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষদের সঙ্গে সহাবস্থান সম্ভব নয়। তরুণ কর্মী নানামি বলেন, বিদেশিদের ওপর অনেক সরকারি সহায়তা ব্যয় করা হয়। এগুলোতে জাপানিদের অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত।

তবে বিশেষজ্ঞেরা এই অভিযোগগুলোকে বিভ্রান্তিকর বলে মনে করছেন। ওয়াসেদা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী শুন্সুকে তানাবে মত দিয়েছেন, বিদেশিদের বিরুদ্ধে অপরাধ বাড়ার ধারণা মূলত রাজনৈতিক প্রচার ও ভুল তথ্য থেকে এসেছে। গত দুই দশকে দেশটিতে অপরাধ কমেছে এবং বিদেশি ও স্থানীয় লোকদের অপরাধের হারে তেমন পার্থক্য নেই। ২০২৩ সালে মাত্র ৫ দশমিক ৩ শতাংশ অপরাধী ছিল বিদেশি, যার মধ্যে পর্যটক ও অভিবাসী উভয়ই রয়েছে।

এই ধরনের ইস্যু হঠাৎ করে রাজনীতির কেন্দ্রে উঠে এসেছে ছোট ডানপন্থী দল ‘সানসেইতো’-এর উত্থানের মধ্য দিয়ে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির আদলে ওই দল ‘জাপানিজ ফার্স্ট’-এর মতো বর্ণবাদমিশ্রিত মতবাদ প্রচার করছে। পরবর্তী নির্বাচনে দলটি ১০ থেকে ১৫টি আসন পেতে পারে, যা শাসক দল এলডিপির অবস্থান দুর্বল করে দিতে পারে। এই অবস্থায় প্রধানমন্ত্রী ইশিবা চাপের মুখে ওই টাস্কফোর্স গঠন করেছেন, যেন জনগণের নিরাপত্তার বিষয়ে তাঁর সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে—এই বার্তা দেওয়া যায়।

তবে বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, বিদেশিদের প্রতি কঠোর মনোভাব দেখানো জাপানের ভবিষ্যৎ অর্থনীতির ক্ষতি করতে পারে। কারণ, জাপানের জন্মহার ২০২৪ সালে আবারও সর্বনিম্ন ১ দশমিক ১৫-তে নেমে এসেছে, যেখানে ২ দশমিক ১ না হলে জনসংখ্যা স্থির রাখা সম্ভব নয়। দেশটিতে প্রচুর বিদেশি কর্মীও দরকার। তাই অভিবাসন ও পর্যটনের দরজা বন্ধ করলে দেশটির জন্য বিপর্যয়কর হবে।

বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী ইশিবা নিজেও স্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, আন্তর্জাতিক সমাজের প্রাণশক্তিকে গ্রহণ করাই ভবিষ্যতের প্রবৃদ্ধিমুখী অর্থনীতির জন্য জরুরি। তাই জাপান একদিকে যেমন জাতীয় স্বার্থরক্ষায় কঠোর হতে চায়, তেমনি বৈচিত্র্যকেও অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। এই দ্বন্দ্বের কারণেই দেশটিতে একটি টাস্কফোর্সের আবির্ভাব ঘটেছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত