Ajker Patrika

পাইলটের জ্বালানি বন্ধের সিদ্ধান্তই কি এয়ার ইন্ডিয়া বিধ্বস্তের কারণ—তদন্তে চাঞ্চল্যকর তথ্য

অনলাইন ডেস্ক
আহমেদাবাদের বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আগুনের গোলার মতো আছড়ে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি। ছবি: সংগৃহীত
আহমেদাবাদের বি জে মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আগুনের গোলার মতো আছড়ে পড়েছিল এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইটটি। ছবি: সংগৃহীত

গত মাসে ভারতের আহমেদাবাদে ঘটে যাওয়া এয়ার ইন্ডিয়া ফ্লাইট বিধ্বস্তের ঘটনার তদন্তে নতুন তথ্য উঠে এসেছে। মার্কিন একটি সূত্র জানিয়েছে, ফ্লাইটটির ককপিট রেকর্ডিং ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিমানের ক্যাপ্টেন ইচ্ছাকৃতভাবে ইঞ্জিনে জ্বালানির সরবরাহ বন্ধ করে দেন।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া একটি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, দুর্ঘটনার সময় বোয়িং-৭৮৭ ফ্লাইটটির নিয়ন্ত্রণে ছিলেন ফার্স্ট অফিসার। ককপিট রেকর্ডিংয়ে তাঁকে ক্যাপ্টেনকে জিজ্ঞেস করতে শোনা যায়, কেন তিনি জ্বালানির সুইচ এমন অবস্থানে সরিয়ে দিয়েছেন, যাতে ইঞ্জিনে জ্বালানি না পৌঁছায়। এরপর তিনি অনুরোধ করেন, জ্বালানি সুইচ যেন আবার চালু করা হয়।

তদন্তে যুক্ত মার্কিন কর্মকর্তাদের প্রাথমিক বিশ্লেষণে বিষয়টি উঠে এলেও এটি এখনো আনুষ্ঠানিক কোনো প্রতিবেদনে অন্তর্ভুক্ত হয়নি। সূত্রটি বলছে, কোন পাইলট জ্বালানির সুইচ বন্ধ করেছেন, তা ভিডিওতে ধরা পড়েনি। তবে ককপিট রেকর্ডিং বিশ্লেষণ করে মনে করা হচ্ছে, ক্যাপ্টেনই এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন।

এদিকে ভারতের এয়ারক্রাফট অ্যাকসিডেন্ট ইনভেস্টিগেশন ব্যুরো (এএআইবি) গতকাল বৃহস্পতিবার (১৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, আন্তর্জাতিক কিছু গণমাধ্যম যাচাই না করেই আংশিক তথ্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্তে পৌঁছানোর চেষ্টা করছে। সংস্থাটি জানায়, তদন্ত চলছে এবং এখনই কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্তে পৌঁছানো উচিত হবে না।

তবে গত শনিবার (১২ জুলাই) এএআইবি প্রকাশিত প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক পাইলট অপর পাইলটকে জিজ্ঞেস করেন—কেন তিনি জ্বালানির সুইচ বন্ধ করেছেন। জবাবে অপর পাইলট বলেন—তিনি এমন কিছু করেননি। তদন্তকারীরা উল্লেখ করেননি, ক্যাপ্টেন সুমিত সাবরওয়াল ও ফার্স্ট অফিসার ক্লাইভ কুন্ডারের মধ্যে কার কথা কোনটি ছিল।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, উড্ডয়নের ঠিক পরপরই মাত্র এক সেকেন্ডের ব্যবধানে দুই ইঞ্জিনের জ্বালানির সুইচ ‘রান’ থেকে ‘কাট অফ’ অর্থাৎ বন্ধ হয়ে যায়। তবে কীভাবে এটি হয়েছে, তা প্রতিবেদনে বলা হয়নি।

এদিকে প্রতিবেদনে জ্বালানি সুইচের বিষয়টি প্রকাশের পর নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে। উড়োজাহাজ নিরাপত্তাসংশ্লিষ্ট বিশেষজ্ঞেরা বলছেন, জ্বালানি নিয়ন্ত্রণ সুইচ ‘রান’, অর্থাৎ চালু থেকে ‘কাট অফ’ বা বন্ধ হয়ে যাওয়া স্বাভাবিক ঘটনা নয়। কারণ, ফুয়েল বন্ধ করতে হলে অবশ্যই সেটা হাতে করতে হবে। এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে কিংবা বিদ্যুৎ-বিভ্রাটের কারণে বন্ধ হওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।

দুর্ঘটনার মুহূর্তে কী ঘটেছিল?

এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-১৭১ উড্ডয়নের পরই সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, ‘র‍্যাম এয়ার টারবাইন’ নামের একটি বিকল্প বিদ্যুৎ উৎস সক্রিয় হয়ে যায়। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, ইঞ্জিন থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।

বিমানটি উড্ডয়নের পর ৬৫০ ফুট উচ্চতায় পৌঁছেই নিম্নগামী হতে শুরু করে। এরপর জ্বালানির সুইচ ফের ‘রান’ মানে চালু হয় এবং বিমান স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইঞ্জিন আবার চালু করার চেষ্টা করে। কিন্তু ততক্ষণে বিমানের গতি ও উচ্চতা এতটাই কমে গিয়েছিল যে, তা ট্রাকে ফিরিয়ে আনা সম্ভব ছিল না।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিমানটি কিছু গাছ ও একটি চিমনি ছুঁয়ে একটি মেডিকেল কলেজের হোস্টেলে আগুনের গোলার মতো আছড়ে পড়ে। এতে বিমানে থাকা ২৪২ জনের মধ্যে ২৪১ জন এবং ভূমিতে থাকা ১৯ জন নিহত হন।

গত সোমবার একটি বিজ্ঞপ্তিতে এয়ার ইন্ডিয়ার সিইও ক্যাম্পবেল উইলসন জানান, প্রাথমিক প্রতিবেদনে যান্ত্রিক বা রক্ষণাবেক্ষণজনিত কোনো ত্রুটি পাওয়া যায়নি এবং প্রয়োজনীয় সব রক্ষণাবেক্ষণ যথাযথভাবে সম্পন্ন হয়েছিল।

এএআইবির প্রতিবেদনেও বোয়িং বা ইঞ্জিন নির্মাতা জিইর (জেনারেল ইলেকট্রনিক কোম্পানি) জন্য কোনো সুরক্ষামূলক সুপারিশ রাখা হয়নি। প্রতিবেদনের পর মার্কিন ফেডারেল অ্যাভিয়েশন অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (এফএএ) ও বোয়িং অভ্যন্তরীণভাবে জানিয়েছে, বোয়িং বিমানের ফুয়েল সুইচ লকগুলো নিরাপদ।

মার্কিন জাতীয় পরিবহন নিরাপত্তা বোর্ড (এনটিএসবি) এই তদন্তে সহায়তা করছে। সংস্থার চেয়ার জেনিফার হোমেনডি ককপিট রেকর্ডিং ও ফ্লাইট ডেটা রেকর্ডার বিশ্লেষণের সবদিক সম্পর্কে অবহিত রয়েছেন।

জেনিফার হোমেনডি বলেন, আন্তর্জাতিক বিমান চলাচলের নিরাপত্তা নির্ভর করে দুর্ঘটনা থেকে যতটা সম্ভব শেখার ওপর। আর যদি কোনো তাৎক্ষণিক নিরাপত্তা সমস্যা না থাকে, সেটাও জানা জরুরি।

অ্যাভিয়েশন নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞ জন ন্যান্স বলেন, বর্তমান প্রমাণ অনুযায়ী মনে হচ্ছে, ক্রু দলের কোনো একজন ইঞ্জিনের ফুয়েল সুইচ বন্ধ করেছিলেন। তাঁর মতে, এর কোনো ‘যুক্তিসংগত ব্যাখ্যা’ পাওয়া যাচ্ছে না। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, তদন্তকারীদের সবদিক বিশ্লেষণ করতে হবে।

এই দুর্ঘটনার পর আবার ককপিটে ক্যামেরা বসানোর দাবি উঠেছে। ন্যান্স বলেন, যদি ককপিটে ভিডিও রেকর্ড থাকত, তাহলে তদন্ত আরও সহজ হতো।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

সন্তানের নাম মুহাম্মদ রাখা কি আদবের খেলাপ

জামায়াতের সমাবেশের জন্য বিশেষ ট্রেন, যে ব্যাখ্যা দিল রেল মন্ত্রণালয়

কোটালীপাড়ায় আওয়ামী লীগের দেড় হাজার নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা, গ্রেপ্তার ১২

আবাসিক হোটেলে অভিযানে গিয়ে অবরুদ্ধ ভ্রাম্যমাণ আদালতের কর্মকর্তারা, সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপে উদ্ধার

ঢাকায় সমাবেশের জন্য ৩ জোড়া ট্রেন ভাড়া করেছে জামায়াত

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত