Ajker Patrika

অভিবাসীদের বহিষ্কার করলেও আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গদের ডেকে আনছেন ট্রাম্প

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৫ এপ্রিল ২০২৫, ১৪: ৩৫
রাজধানী প্রিটোরিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে ট্রাম্পের ‘এমএজিএ’ ক্যাপ পড়ে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান। ছবি: এএফপি
রাজধানী প্রিটোরিয়ায় মার্কিন দূতাবাসের সামনে ট্রাম্পের ‘এমএজিএ’ ক্যাপ পড়ে আছেন এক শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকান। ছবি: এএফপি

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সম্প্রদায় আফ্রিকানারদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এমন এক সময় এই সিদ্ধান্ত নিল ট্রাম্প প্রশাসন, যখন একই সঙ্গে যুদ্ধপীড়িত আফগান, কঙ্গোলিজ ও অন্যান্য দেশের বহু শরণার্থীকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না। বহু শরণার্থীকে বের করেও দেওয়া হচ্ছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকানারদের বোর বা কখনো কখনো ডাচ সাউথ আফ্রিকানও বলা হয়। একটি জাতিগোষ্ঠী মূলত ডাচদের বংশধর। এরা ১৬৫২ সালে প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকার আটলান্টিক উপকূল কেপ অব গুড হোপে পৌঁছায়। ১৯৯৪ সাল পর্যন্ত তারা দক্ষিণ আফ্রিকার রাজনীতি এবং বাণিজ্যিক কৃষি খাতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল।

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের তথ্যমতে, এরই মধ্যে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়ায় মার্কিন দূতাবাসে আবেদনকারীদের সাক্ষাৎকার নিয়েছে কর্মকর্তারা। তাঁদের মধ্যে অন্তত ৩০ জন ইতিমধ্যে অনুমোদন পেয়েছেন। আবেদনকারীরা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা তাঁদের সঙ্গে বেশ সহানুভূতিপূর্ণ আচরণ করেছেন।

মার্ক (পূর্ণ নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) নামের এক আবেদনকারী রয়টার্সকে বলেন, ‘দূতাবাসের কর্মীরা খুবই সদয় ছিলেন।’ তিনি জানান, ২০২৩ সালে কৃষ্ণাঙ্গদের আক্রমণে তিনি ও তাঁর বাবা গুরুতর আহত হয়েছেন। এ কারণেই তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রে যেতে চান।

চলতি বছর জানুয়ারিতে দ্বিতীয় মেয়াদের দায়িত্ব নেওয়ার পরপরই একগুচ্ছ নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। এগুলোর মধ্যে একটি ছিল আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গদের বিষয়ে। ওই নির্বাহী আদেশে বলা হয়—আফ্রিকান শ্বেতাঙ্গরা দক্ষিণ আফ্রিকায় বর্ণবৈষম্যের শিকার। তাই যুক্তরাষ্ট্রে তাঁরা বিশেষভাবে পুনর্বাসনের সুযোগ পাবেন।

আবেদনকারীদের ভাষ্যমতে, কৃষ্ণাঙ্গ অধিকার নিশ্চিত করার আইন ও নীতি যেমন—ব্ল্যাক ইকোনমিক এম্পাওয়ারমেন্ট, শ্বেতাঙ্গদের চাকরির সুযোগ সীমিত করেছে। পাশাপাশি, প্রতিনিয়ত বর্ণবিদ্বেষী আক্রমণের শিকার হতে হচ্ছে।

তবে দক্ষিণ আফ্রিকার পুলিশের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৩ সালে মোট ২৬ হাজার খুনের ঘটনার মধ্যে মাত্র ৪৪টি ঘটনা কৃষক বা খামারিদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। আর নথিবদ্ধ এসব ঘটনার অধিকাংশেরই ভুক্তভোগী কৃষ্ণাঙ্গ। এ ইস্যুতে দক্ষিণ আফ্রিকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ক্রিসপিন ফিরি বলেন, ‘এই দেশে অপরাধ কোনো নির্দিষ্ট জাতিকে লক্ষ্য করে হয় না। এটি একটি সামাজিক সমস্যা, যার শিকার সবাই।’

ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে রাজনীতির অংশ হিসেবেই দেখছেন বিশ্লেষকেরা। তাঁরা বলছেন, শ্বেতাঙ্গ নিপীড়নের ধারণাটি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ—বিশেষ করে আফ্রিকানারদের মধ্যে ছড়ানো হয়েছে। ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠ, দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ইলন মাস্কের কথায়ও এটি প্রতিধ্বনিত হয়। এর আগেও ট্রাম্প বহুবার দক্ষিণ আফ্রিকার সরকারের বিরুদ্ধে শ্বেতাঙ্গদের জমি বাজেয়াপ্ত করার অভিযোগ তুলেছিলেন।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের এসব আবেদনের অনুমোদন দিতে তাঁদের ওপর প্রশাসনিক চাপ রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক কর্মকর্তা রয়টার্সকে জানিয়েছেন, আফ্রিকানাররা যেসব নির্যাতনের অভিজ্ঞতার কথা বলছেন, সেগুলো বাস্তব কোনো নির্যাতনের মধ্যে পড়ে বলে তিনি মনে করেন না। তাঁর ভাষ্যমতে—এই আবেদনগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকানার ব্যতীত অন্যান্য শ্বেতাঙ্গ জনগোষ্ঠীর যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের সুযোগ থাকবে কিনা—এ বিষয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কিংবা প্রিটোরিয়ার মার্কিন দূতাবাস কোনো মন্তব্য করেনি।

দক্ষিণ আফ্রিকা সরকার জানিয়েছে, ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশটি দক্ষিণ আফ্রিকায় উপনিবেশ ও বর্ণবৈষম্যের বেদনাদায়ক ইতিহাসকে অগ্রাহ্য করেছে। অর্থনৈতিকভাবে সবচেয়ে বেশি সুবিধাপ্রাপ্ত জনগোষ্ঠীকে শরণার্থী মর্যাদা দেওয়ার এই সিদ্ধান্তকে তারা ‘বিদ্রূপ’ হিসেবে অভিহিত করেছে।

দক্ষিণ আফ্রিকার শ্বেতাঙ্গ সংখ্যালঘুর মধ্যে আফ্রিকানাররা প্রায় ৬০ শতাংশ। আর গোটা দেশের ৬ কোটি ৩০ লাখ জনগণের মধ্যে শ্বেতাঙ্গ ৭ দশমিক ২ শতাংশ। আন্তর্জাতিক একাডেমিক জার্নাল রিভিউ অব পলিটিক্যাল ইকোনমির তথ্য অনুযায়ী, দক্ষিণ আফ্রিকায় একটি শ্বেতাঙ্গ পরিবারের গড় সম্পদ একটি কৃষ্ণাঙ্গ পরিবারের ২০ গুণ। দেশটির সরকারি পরিসংখ্যান বলছে, কৃষ্ণাঙ্গ নাগরিকদের মধ্যে বেকারত্বের হার শ্বেতাঙ্গদের তুলনায় অনেক বেশি। দেশটির মোট ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির তিন–চতুর্থাংশ এখনো শ্বেতাঙ্গদের দখলে। ভূমি পুনর্বণ্টনের উদ্দেশ্যে এখনো একটিও জমি বাজেয়াপ্ত করা হয়নি বলে জানিয়েছে স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো।

শ্বেতাঙ্গ আফ্রিকানদের যুক্তরাষ্ট্রে পুনর্বাসনের উদ্যোগকে ট্রাম্প প্রশাসনের দ্বিমুখী নীতির বহিঃপ্রকাশ বলছেন সমালোচকেরা।

উইটস ইউনিভার্সিটির সেন্টার ফর ডাইভার্সিটি স্টাডিজ–এর প্রধান নিকি ফ্যালকফ বলেন, দক্ষিণ আফ্রিকায় শ্বেতাঙ্গ নিপীড়নের বিষয়টি একটি ধারণা। তিনি বলেন, ‘শ্বেতাঙ্গদের নিপীড়নের ধারণাটি এই বিশ্বাসের ওপর দাঁড়িয়ে যে, শ্বেতাঙ্গদের সঙ্গে নেতিবাচক কিছু ঘটলে সেটি অন্য কারও সঙ্গে ঘটার চেয়ে অনেক বেশি গুরুতর। ফলে যখন কোনো অপরাধ শ্বেতাঙ্গের সঙ্গে ঘটে, সেটিকে কেবল অপরাধ হিসেবে নয়, বরং “সুনির্দিষ্টভাবে জাতিগত নির্মূল” হিসেবে দেখা হয়।’

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে মাত্র ৭০ জন দক্ষিণ আফ্রিকান শরণার্থী ছিলেন। তবে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী ছিলেন ২ হাজার ৪৩ জন। তাঁদের মধ্যে কতজন শ্বেতাঙ্গ, তা অবশ্য আলাদা করে বলা হয়নি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত