Ajker Patrika

বাংলাদেশিদের ক্যালরির ১৭ শতাংশই আসে বিস্কুটের মতো অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে: গবেষণা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ২৩ জুলাই ২০২৫, ১১: ২৮
প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার চার দেশ—শ্রীলঙ্কা, ভারত ও পাকিস্তানের মানুষদের আল্ট্রাপ্রসেসড ফুড বা অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের প্রবণতা অনেক বেশি। এই অঞ্চলের বেশির ভাগ মানুষ, দিনের কোনো না কোনো পর্যায়ে এ ধরনের খাবার গ্রহণ করেন। গবেষণায় উঠে এসেছে যে, এই চার দেশের মানুষের একটা বড় অংশই তাদের দৈনন্দিন ক্যালরি গ্রহণের ১৩ থেকে ১৭ শতাংশই গ্রহণ করে এই অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে।

যুক্তরাজ্যের কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় এবং চেন্নাইয়ের মাদ্রাজ ডায়াবেটিস রিসার্চ ফাউন্ডেশনসহ বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কার বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের গবেষকেরা দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের প্রবণতা নিয়ে একটি গবেষণা পরিচালনা করেছেন। সেই গবেষণা থেকেই এই তথ্য উঠে এসেছে।

গবেষণায় দেখা গেছে, জরিপের আগের ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে, শ্রীলঙ্কায় এবং উত্তর ভারতে বসবাসকারী প্রায় তিন-চতুর্থাংশ মানুষ অতি-প্রক্রিয়াজাত (যেসব—বিভিন্ন ধরনের কুড়মুড়ে ভাজা খাবার, কোমলপানীয়, বিস্কুট, চিনি ও লবণযুক্ত প্যাকেটজাত খাবার, বিভিন্ন ধরনের ক্যানডি, কুকিজ ইত্যাদি) খাবার গ্রহণ করেছেন। ল্যানসেট রিজিওনাল হেলথ সাউথইস্ট এশিয়া জার্নালে প্রকাশিত এই গবেষণা প্রতিবেদনে অংশগ্রহণকারীদের আর্থসামাজিক কারণের সঙ্গে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের সম্পর্কও তুলে ধরা হয়েছে।

গবেষণায় দেখা যায়, দক্ষিণ ভারত এবং পাকিস্তানের ৪১ শতাংশ অংশগ্রহণকারী জরিপের আগের ২৪ ঘণ্টায় অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের কথা জানিয়েছেন। এই খাবারগুলোতে প্রচুর পরিমাণে শিল্প প্রক্রিয়াকরণ এবং অতিরিক্ত চিনিসহ বিভিন্ন প্রকার কৃত্রিম উপাদান মেশানো হয়, যা স্থূলতা, বিপাকজনিত ও হৃদ্‌রোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।

বাংলাদেশ, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা এবং ভারতের ৬০ হাজার ৭০০ জনের বেশি প্রাপ্তবয়স্কদের তথ্য বিশ্লেষণ করে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছেন গবেষকেরা। অংশগ্রহণকারীদের যুক্তরাজ্যভিত্তিক দীর্ঘমেয়াদি গবেষণা প্রকল্প ‘সাউথ এশিয়া বায়োব্যাংকের’ জন্য তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল। এই প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য দক্ষিণ এশিয়ার মানুষের মধ্যে হৃদ্‌রোগ, টাইপ-২ ডায়াবেটিস এবং স্থূলতার মতো প্রাণঘাতী রোগের উচ্চ ঝুঁকির কারণগুলো খুঁজে বের করা।

গবেষণায় দেখা গেছে, এই চারটি অঞ্চলে মানুষের দৈনিক মোট ক্যালরি গ্রহণের ১৩ থেকে ১৭ শতাংশ আসে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে, যার মধ্যে বিস্কুট অন্যতম। পাকিস্তানে মিষ্টি পানীয়, দক্ষিণ ভারতে প্যাকেটজাত লবণাক্ত স্ন্যাকস এবং বাংলাদেশে সকালের নাশতার সিরিয়ালও বেশি পরিমাণে খাওয়া হয় বলে উঠে এসেছে এই গবেষণায়।

গবেষণায় আরও দেখা গেছে, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় কম বয়সীদের মধ্যে এবং বাংলাদেশে ও উত্তর ভারতে বেশি বয়সীদের মধ্যে এ ধরনের খাবার গ্রহণের প্রবণতা বেশি। এ ছাড়া, প্রায় সব অঞ্চলেই নারীরা পুরুষদের তুলনায় অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার বেশি গ্রহণ করে থাকেন। অবিবাহিতদের তুলনায় বিবাহিত অথবা সংঘবদ্ধভাবে বসবাসকারীরা এই খাবার কম খান বলেও গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে।

গবেষকেরা জানিয়েছেন, ২০২৩ সালে ৩২টি দেশের তথ্য নিয়ে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণ এবং আর্থসামাজিক কারণের মধ্যে সম্পর্ক বিষয়ক একটি গবেষণা হলেও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ ধরনের কোনো গবেষণা ছিল না।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এটি দক্ষিণ এশিয়ার প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে বৃহৎ আকারের জনসংখ্যাভিত্তিক গবেষণায় ব্যক্তিগত পর্যায়ে খাদ্য গ্রহণের তথ্যের মাধ্যমে অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের আর্থসামাজিক সম্পর্ক মূল্যায়নকারী প্রথম গবেষণা।’ এতে আরও বলা হয়, ‘বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা এবং উত্তর ভারতে (প্রায়) ৭৫ শতাংশ অংশগ্রহণকারী আগের দিন অতি-প্রক্রিয়াজাত খাবার গ্রহণের কথা জানিয়েছেন, যেখানে দক্ষিণ ভারত এবং পাকিস্তানে এই হার ৪১ শতাংশ।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত