Ajker Patrika

করোনার অন্যান্য ধরনের চেয়ে যে সব কারণে ভিন্ন ডেলটা

অনলাইন ডেস্ক
আপডেট : ০১ আগস্ট ২০২১, ১৫: ১১
Thumbnail image

২০২০ সালের শুরুর দিকে যখন করোনাভাইরাস প্রথম চিহ্নিত হয়, তারপর এটির হাজার হাজার মিউটেশন হয়েছে। মিউটেশনের মাধ্যমে এভাবে যে পরিবর্তিত ভাইরাস তৈরি হয়, তাকে বলা হয় ভ্যারিয়েন্ট। বিশেষজ্ঞরা মূলত চারটি ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। সেগুলো হলো—আলফা (প্রথম ধরা পড়ে যুক্তরাজ্যে), বেটা (দক্ষিণ আফ্রিকা), গামা (ব্রাজিল) ও ডেলটা (ভারত)। এ সব ধরনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ছড়িয়েছে ডেলটা। 

যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য দপ্তরের একটি নথিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনটি জলবসন্তের মতোই সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে এবং আগের ধরনগুলোর চেয়েও গুরুতর অসুস্থতার কারণ ঘটাচ্ছে। 

ডেলটা কী? 
ডেলটা ধরনের বৈজ্ঞানিক নাম বি.১.৬১৭.২। এটি প্রথম শনাক্ত হয় ভারতে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বের ১৩২টি দেশে ছড়িয়েছে এই ধরন। যুক্তরাষ্ট্রের সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের (সিডিসি) পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রে শনাক্ত হওয়া নতুন করোনা রোগীদের ৮০ শতাংশই ডেলটা ধরনে আক্রান্ত।

অতি সংক্রামক ডেলটা 
যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির একটি নথিতে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনটি জলবসন্তের মতোই সহজে ও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। এই ধরন থেকে একজন থেকে গড়ে আট থেকে নয়জন সংক্রমিত হন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ডেলটা আলফা ভ্যারিয়েন্টের তুলনায় এটি ৬০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। আর আলফা ভ্যারিয়েন্ট প্রথম ধরা পড়া করোনাভাইরাসের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। সুতরাং সেই হিসেবে প্রথম শনাক্ত হওয়া করোনাভাইরাস থেকে ডেলটা ১১০ শতাংশ বেশি সংক্রামক। 

যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসি পরিচালক ড. রোশেল ওয়ালেনস্কি বলেন, টিকা নেওয়া ব্যক্তি ও না নেওয়া ব্যক্তিদের নাক ও গলায় করোনাভাইরাসের ডেলটা ধরনের একই রকম উপস্থিতি মিলেছে। 

গুরুতর অসুস্থ করে দেয় ডেলটা 
কানাডা, সিঙ্গাপুর ও স্কটল্যান্ডের গবেষণার বরাত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডেলটা ধরন করোনা রোগীকে গুরুতর অসুস্থ করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের হাসপাতালগুলোতে গুরুতর করোনা রোগীর সংখ্যা আবারও বাড়ছে। আর যারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন, তাঁরা ডেলটা ধরনে আক্রান্ত। তবে যারা গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে আসছেন, তাঁদের মধ্যে ৯০ শতাংশ মানুষই এখনো ভ্যাকসিন পাননি। এদিকে দিল্লির গঙ্গারাম হাসপাতালের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, করোনা টিকা উহান স্ট্রেইনের ক্ষেত্রে যতটা কার্যকর, ডেলটার ক্ষেত্রে তার আটগুণ কম কার্যকর।

পূর্ণ টিকা নিলেও হতে পারে ডেলটার সংক্রমণ
গতকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের সিডিসির পক্ষ থেকে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়। এতে দেখা যায়, ম্যাসাচুটেসে ৪৬৯ করোনায় আক্রান্ত রোগীর মধ্যে ৭৪ শতাংশই করোনার দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন। আর এদের মধ্যে চারজনকে হাসপাতালে ভর্তি করাতে হয়েছে। এই গবেষণা প্রকাশ করে সিডিসির পক্ষ থেকে বলা হয়, ভ্যাকসিন গুরুতর অসুস্থতা ঠেকাতে পারে কিন্তু এটি সংক্রমণ ঠেকাতে তেমন কার্যকর নয়। 

করোনার ভিন্ন ধরন ডেলটা 
চীনা গবেষকেরা দাবি করেছেন, উহানে প্রথম যে করোনা ভাইরাস পাওয়া গিয়েছিল তার চাইতে ডেলটা ধরন মানবদেহে এক হাজার গুণ বেশি বৃদ্ধি পায়। এই বৃদ্ধি এত দ্রুত হয় যে, সংক্রমিত ব্যক্তি বোঝার আগেই সেটি অন্যের দেহে ছড়িয়ে পড়ে। তবে মার্কিন বিজ্ঞানীরা দাবি করেছেন, ডেলটার  আয়ু অল্প হলেও, এটি মানবদেহে খুব দ্রুত বাড়ে। এ কারণেই আক্রান্ত ব্যক্তি দ্রুত অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। করোনাভাইরাসের রূপান্তরিত ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের  সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য সতর্কতা নির্দেশনায় পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত ২৭ জুলাই সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (সিডিসি) এক নির্দেশনায় আবার মাস্ক ব্যবহার করতে বলেছে। ইনডোরে, বিশেষ করে জনসমাগম হলে মাস্ক পরতে তারা আবার নির্দেশনা দিয়েছে। যেসব এলাকায় ডেলটার সংক্রমণ বেশি, সেসব এলাকায় টিকা গ্রহণ করেছেন বা টিকা গ্রহণ করেননি; এমন সব লোককেই মাস্ক পরার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত