Ajker Patrika

চোখ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হলে কী করা জরুরি

ডা. মো. আরমান হোসেন রনি 
ছবি: সংগৃহীত
ছবি: সংগৃহীত

আগুনে পুড়ে যাওয়া একটি মারাত্মক ও যন্ত্রণাদায়ক দুর্ঘটনা। এ দুর্ঘটনা শুধু ত্বকই নয়, চোখের মতো সংবেদনশীল অঙ্গকেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আগুন, গরম বাষ্প, বিস্ফোরণ, রাসায়নিক পদার্থ কিংবা ধোঁয়ার কারণে হওয়া চোখের ক্ষতি অনেক সময় স্থায়ী অন্ধত্বের কারণ হতে পারে। তাই আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর চোখের যত্নে দ্রুত ও সঠিক চিকিৎসা অত্যন্ত জরুরি।

আগুনে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার প্রাথমিক লক্ষণ

» চোখে প্রচণ্ড জ্বালা ও ব্যথা

» চোখ লাল হয়ে যাওয়া

» পানি পড়া বা অতিরিক্ত অশ্রুপাত

» চোখে ঝাপসা দেখা

» চোখ খুলতে না পারা

» চোখের আশপাশের ত্বক পুড়ে যাওয়া

» পাপড়ি পুড়ে যাওয়া বা জুড়ে যাওয়া

» কর্নিয়া বা কনজাংটিভায় সাদা দাগ হওয়া

» অগ্নিকাণ্ডের পর কারও এসব লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে দ্রুত চিকিৎসা নিতে হবে।

প্রাথমিক যত্ন ও করণীয়

আগুনে চোখ ক্ষতিগ্রস্ত হলে দ্রুত কিছু প্রাথমিক পদক্ষেপ নিতে হবে। সেসব পদক্ষেপ পরবর্তী জটিলতা প্রতিরোধে সহায়ক হবে।

চোখ ধোয়া

যত দ্রুত সম্ভব চোখ পরিষ্কার পানি বা স্যালাইন দিয়ে ১৫-২০ মিনিট ধুতে হবে। এতে তাপমাত্রা কমে যাবে। এ ছাড়া যেকোনো রাসায়নিক দূর হবে এবং ধোঁয়ার যন্ত্রণা চলে যাবে।

চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত থাকা

আক্রান্ত ব্যক্তিকে চোখে হাত দেওয়া থেকে বিরত রাখতে হবে। এ সময় চোখে হাত দিলে সংক্রমণ ছড়িয়ে যেতে পারে।

চোখ ঢেকে রাখা

পরিষ্কার ও জীবাণুমুক্ত গজ বা কাপড় দিয়ে আলতোভাবে চোখ ঢেকে রাখতে হবে, যাতে চোখে ধুলোবালি বা আলো প্রবেশ না করে।

ঠান্ডা সেঁক

চোখের চারপাশে ঠান্ডা পানির কাপড় ব্যবহার করলে আরাম পাওয়া যেতে পারে। তবে চোখে সরাসরি বরফ দেওয়া যাবে না।

চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া

প্রাথমিক সেবা দেওয়ার পর রোগীকে দ্রুত চক্ষুবিশেষজ্ঞের কাছে নিয়ে যেতে হবে।

আক্রান্ত ব্যক্তির অবস্থা বুঝে চিকিৎসক পরীক্ষা ও চিকিৎসা দেবেন। চিকিৎসক সম্ভাব্য যেসব কাজ করতে পারেন—

» চোখে সলিউশন ও ওয়াশ দিয়ে পরিষ্কার করা

» লুব্রিকেটিং আই ড্রপ ব্যবহার

» সংক্রমণ রোধে অ্যান্টিবায়োটিক ড্রপ বা মলম ব্যবহার

» বিশেষ প্রয়োজনে প্রদাহ ও চোখ ফুলে যাওয়া কমাতে স্টেরয়েড ড্রপ ব্যবহার

» ব্যথানাশক ওষুধ দেওয়া

» গভীর ক্ষত বা কর্নিয়ার ক্ষতি হলে সার্জারি

» চোখের দীর্ঘমেয়াদি যত্ন

» চোখ আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরপরই চিকিৎসা শুরু করলেও পূর্ণ আরোগ্য হতে দীর্ঘমেয়াদি যত্নের প্রয়োজন হয়। সে সময় কিছু বিষয়ে বিশেষভাবে মনোযোগ দিতে হবে—

নিয়মিত ফলোআপ

চক্ষুবিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী একাধিকবার চেকআপ করতে হবে, যাতে দৃষ্টিশক্তি পুনরুদ্ধার সঠিকভাবে হচ্ছে কি না বোঝা যায়।

সানগ্লাস ব্যবহার

সূর্যের আলো কিংবা ধুলোবালি থেকে চোখ রক্ষার করতে সানগ্লাস ব্যবহার করতে হবে।

চোখে প্রসাধনী ব্যবহার না করা সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত চোখের আশপাশে কোনো ধরনের প্রসাধনী ব্যবহার করা যাবে না।

সুষম খাবার খাওয়া

ভিটামিন এ ও সি-সমৃদ্ধ খাবার; যেমন গাজর, পেঁপে, লেবু, শাকসবজি ইত্যাদি দৃষ্টিশক্তি ও ক্ষত নিরাময়ে সাহায্য করে।

মানসিক সহায়তা

দৃষ্টিশক্তি কমে গেলে অনেক রোগী মানসিকভাবে ভেঙে পড়েন। তাই পরিবারের সদস্য ও সমাজের দায়িত্ব হলো তাদের পাশে থাকা ও উৎসাহ দেওয়া।

চিকিৎসা নয়, প্রতিরোধ করুন

অগ্নিকাণ্ডের মতো দুর্ঘটনা এড়াতে কিছু সচেতনতা জরুরি। সেগুলো হলো—

» রান্নাঘরে কাজ করার সময় শিশুদের বেশ কিছুটা দূরে রাখুন

» বিস্ফোরক বা রাসায়নিক ব্যবহারের সময় সানগ্লাস পরুন

» ঘরে আগুন লাগলে দ্রুত নিরাপদ জায়গায় যেতে হবে

» কাজের জায়গায় নিরাপত্তা সরঞ্জাম ব্যবহার নিশ্চিত করুন।

মনে রাখতে হবে, আগুনে পুড়ে যাওয়া রোগীর চোখের যত্ন অতি সংবেদনশীল ও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময়মতো উপযুক্ত চিকিৎসা, যত্ন ও সচেতনতা অনেক ক্ষেত্রে অন্ধত্ব রোধ করতে পারে।

পরামর্শ দিয়েছেন: চক্ষুবিশেষজ্ঞ ও সার্জন, জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, শেরেবাংলা নগর, ঢাকা

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

বীর্যে বিরল অ্যালার্জি, নারীর বন্ধ্যত্ব নিয়ে চিকিৎসকদের নতুন সতর্কতা

কক্সবাজারে যাওয়ার পথে ২৩ মামলার আসামিকে কুপিয়ে হত্যা

আওয়ামী লীগ নেতাকে ধরতে গিয়ে ছেলের বঁটির আঘাতে এসআই আহত, আটক ২

নিহত ১১, আহত ৫০, ভারতের সেই মাঠ থেকে সরে যেতে পারে বিশ্বকাপ

এক টন কয়লাও ইসরায়েলে যাবে না, নির্দেশ কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্টের

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত