Ajker Patrika

আসমা এখন সবার অনুপ্রেরণা

আপডেট : ২১ জুন ২০২২, ১৩: ৪৯
Thumbnail image

জীবনসংগ্রামে নারীর পদচারণ আমাদের দেশে বেশ আগেই শুরু হয়েছে। এতে করে নারীরা একদিকে যেমন দারিদ্র্য জয় করেছেন, অন্যদিকে দেশও এগিয়েছে অনেকখানি। তাঁদেরই একজন আসমা আক্তার; যিনি দুই বছর ধরে সংসার সামলানোর পাশাপাশি গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন সেবাদান করে আসছেন। গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন সেবাদানের নারী হিসেবে এলাকাতে তিনিই প্রথম।

আসমা আক্তার ঝিকরগাছা উপজেলার বল্লা গ্রামের মালায়েশিয়া প্রবাসী ফিরোজ হোসেনের স্ত্রী। ফিরোজ হোসেন বেকারত্ব ঘোচাতে বিদেশে গেলেও করোনাভাইরাসের কারণে পরিবারের আর্থিক পরিবর্তন ঘটাতে পারেননি।

২০০৭ সালে উচ্চ মাধ্যমিকে পড়ার সময় আসমা আক্তারের বিয়ে হয়। তখন স্বামী বেকার থাকায় বাড়িতে দরজির কাজ শুরু করেন তিনি। তবে লেখাপড়া চালিয়ে যেতে থাকেন। আসমা আক্তার ২০১৩ সালে (পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৫ সালে) যশোর সরকারি এমএম বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাস করেন। চাকরির দিকে তাকিয়ে না থেকে বাড়িতে দরজি কাজের সঙ্গে গবাদিপশু, হাঁস-মুরগির পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং টিকাদান শুরু করেন।

২০১৮ সালে আসমা আক্তার ইউএসএআইডির এসিডিআই ভোকার গবাদিপশুর পুষ্টি ও স্বাস্থ্য সচেতনতা এবং টিকাদানে কমিউনিটি এজেন্ট হিসেবে যোগদান করেন। এরপর ২০২০ সালে ফেব্রুয়ারি মাসে বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক ও ইউএসএআইডির এসিডিআই ভোকার সহযোগিতায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি ও প্রাণিসম্পদ বিভাগে ১৫ দিন প্রশিক্ষণ নেন। একই বছর আবারও ব্র্যাক ও ইউএসএআইডির এসিডিআই ভোকারের সহযোগিতায় দুই মাস পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কৃত্রিম প্রজনন সেবাদানকারী (এআইএসপি) হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। এসব প্রশিক্ষণ শেষ করে এলাকায় গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন সেবা দেওয়া শুরু করেন আসমা আক্তার।

এতেই আসমা খুঁজে পায় জীবনসংগ্রামে দারিদ্র্য ঘোচানোর নতুন পথ। পেছন ফিরে তাঁকে আর তাকাতে হয়নি। আসমার সংসারে এখন আগের মতো অনাটন নেই। কৃত্রিম প্রজনন সেবার জন্য মোবাইল ফোনে ডাক এলেই দ্রুত চলে যান সেবা দিতে। গাভি এবং ছাগী দুটোই কৃত্রিম প্রজনন সেবাদান করছেন আসমা। প্রতি মাসে ৩০-৪০টি গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন সেবা দেন তিনি। এতে যে টাকা আয় হয় তা দিয়ে তাঁর সংসারে সচ্ছলতা দেখা দিয়েছে। স্বামীর দেনার টাকা শোধ করছেন। আসমা শুধু কৃত্রিম প্রজনন সেবা দেন না, সংসারের প্রয়োজনে বাড়িতে গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি পালন করেন।

আসমা আক্তার বলেন, ‘প্রথম যখন এ কাজ শুরু করি তখন কেউ ভালোভাবে নেননি। এমনকি পরিবারের লোকজনও বারণ করেছিলেন। অনেক বাধা ডিঙাতে হয়েছে। গত ১০ মাস আগে কিস্তিতে একটি মোটরসাইকেল (স্কুটি) কিনেছি। সে টাকা প্রায় শোধ করেছি। এ সেবা দিয়ে যে আয় হয়, তাতে আমার সংসারের খরচ চলে যায়। আমি একটি গরুর খামার করতে চাই।’

উপজেলার বায়সা চাঁদপুর দাখিল মাদ্রাসার মৌলভি শিক্ষক আতিয়ার রহমান বলেন, ‘গবাদিপশুর কৃত্রিম প্রজনন সেবাদানকারী আসমা আক্তার এখন দৃষ্টান্ত। গবাদিপশু সাধারণত পালন করেন বাড়ির নারীরা। তাই কৃত্রিম প্রজনন সেবাদানকারী পুরুষ মানুষ হলে বাড়ির নারীরা কাজে সহযোগিতা করতে পারেন না। এ ক্ষেত্রে কৃত্রিম প্রজনন সেবাদানকারী নারী হওয়ায় অনেক উপকার হচ্ছে।’

ঝিকরগাছা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা জি এম আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আসমা আক্তার আমাদের সমাজে প্রেরণা হতে পারে। তাঁকে আমাদের দপ্তর থেকে সহযোগিতা করা হয়। ভবিষ্যতেও এ সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত