Ajker Patrika

‘ফানি ইরকম স্থির হয়া থাকতে দেখছি না’

জাকির হোসেন, সুনামগঞ্জ
আপডেট : ২৩ এপ্রিল ২০২২, ০৯: ৫৬
‘ফানি ইরকম স্থির হয়া থাকতে দেখছি না’

‘বৈশাখ মাসে বৃষ্টি অয়, ফানি (পানি) অয় দেখছি। তবে ইরকম পানি স্থির হয়া থাকতে দেখছি না কোনো বছরই। বৈশাখ মাসো তুফান অইব ঠিকই আছে। কিন্তু ১৮-১৯ দিন ধইরা যে পাহাড়ি ঢলের ফানি (পানি) আইল, অখন পর্যন্ত নামার কোনো নামই নাই। এমন অবস্থা আমার বয়সেও দেখছি না।’

নুরুল ইসলামের বয়স ৬৭ বছর। সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার আনোয়ারপুর গ্রামের বাসিন্দা তিনি। হাওরাঞ্চলে ঢলের পানি না কমার বিষয়টি অস্বাভাবিক লাগছে তাঁর কাছে।

গত ৩১ মার্চ থেকে ১৯ এপ্রিল পর্যন্ত ভারতের মেঘালয়ে বৃষ্টিপাত হয়েছে ২ হাজার ৫৫ মিলিমিটার। এই পানি নামছে বাংলাদেশ ভূখণ্ডের ওপর দিয়ে। এর আগেও এমন বৃষ্টিপাত হয়েছে এই অঞ্চলে।

তাতে হাওরে বাঁধ ভাঙে, ফসল ডোবে। কিন্তু পাঁচ-সাত দিনের মধ্যে পানি আবার কমেও যায়। কিন্তু এ বছরের চিত্র যেন অন্যরকম। নদ-নদীর পানি যেন আর কমছেই না।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, গত ১ এপ্রিল নাগাদ সীমান্তবর্তী নদী যাদুকাটা, পাটলাই ও রক্তির পানি বিপৎসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থায় পৌঁছায়। সেই পানি এখনো সেখানেই অবস্থান করছে। এতে করে জেলার ছোট-বড় ১৩৪টি হাওরের ৭২৭টি ফসলরক্ষা বাঁধের ওপর মারাত্মক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। আবার কোথাও চাপ সইতে না পেরে বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকেছে হাওরে। ভাসিয়ে নিয়ে গেছে কৃষকের স্বপ্নের ফসল।

বছরের এই সময়ে নদ-নদীতে এমন দীর্ঘ সময় পানির চাপ থাকার একটাই কারণ দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। তা হলো নদীগুলোর মূল প্রবাহ হারাতে বসেছে। নদীর পেটে পলি জমে ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এতে কমেছে নদীর পানির ধারণক্ষমতা। সঙ্গে নদীর প্রবাহে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে হাওরে যত্রতত্র বাঁধ তৈরি।

হাওর বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নদীর তলদেশ যেভাবে ভরাট হচ্ছে, তা বিপজ্জনক। নদীর প্রবাহ ফেরাতে না পারলে ঝুঁকি আরও বাড়বে। তখন শুধু বাঁধ টেকসই করলেই ফসল রক্ষ করা সম্ভব হবে না।’

সম্প্রতি সুনামগঞ্জের ক্ষতিগ্রস্ত ফসলরক্ষা বাঁধ পরিদর্শনে আসেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে জ্যেষ্ঠ সচিব কবির বিন আনোয়ার। তখন তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে নদী খনন না হওয়ার কারণে নদীর তলদেশ ভরাট হয়ে গেছে। পানি ধারণক্ষমতা কমে গেছে। প্রকৃতির ওপরে কারোরই হাত নাই। তবে হাওরাঞ্চলের ফসল রক্ষায় আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। হাওরাঞ্চলের ১৪টা নদীর প্রায় ৩৭২ কিলোমিটার খননের একটি প্রকল্প তৈরি করা হয়েছে।’

হাওর এলাকা পরিদর্শনের সময় পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক জানান, সুনামগঞ্জের ফসল রক্ষা করার জন্য মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় ১৪টা নদী খনন করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। সার্বিক বিষয়ে নিরীক্ষাকাজ শুরু হয়েছে।

মধ্যনগরে পানি ঢুকছে শালদীঘা হাওরে

ধর্মপাশা (সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধি জানান, গতকাল শুক্রবার ভোর থেকে জেলার মধ্যনগর উপজেলার বংশীকুণ্ডা দক্ষিণ ইউনিয়নের শালদীঘা হাওরের ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে পানি ঢুকছে হাওরে। এতে ডুবে যাচ্ছে নিশ্চিন্তপুর, বংশীকুণ্ডা, বাসাউড়া, হাতপাঠন, নয়াবন্দ, সানুয়া, মাকড়দি, কাউহানি, বীরসিংহপাড়া গ্রামের দেড় হাজার একর জমির বোরো ফসল। তাড়াহুড়ো করে ফসল কেটে ঘরে তোলার চেষ্টা করছেন ওই এলাকার চাষিরা।

নিশ্চিন্তপুর গ্রামের কৃষক মো. আলমগীর হোসেন বলেন, ‘শালদীঘা হাওরে আমার ৪ কেয়ার বোরো ফসলের জমি রয়েছে। হঠাৎ করে ফসলরক্ষা বাঁধ ভেঙে ডুবে গেছে আমাদের ফসল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত