Ajker Patrika

স্বামীর মৃত্যুর বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা দিয়েও যাবজ্জীবন এড়াতে পারলেন না রসায়নের অধ্যাপক

অনলাইন ডেস্ক
মমতা পাঠক ও তাঁর স্বামী নীরাজ পাঠক। ছবি: সংগৃহীত
মমতা পাঠক ও তাঁর স্বামী নীরাজ পাঠক। ছবি: সংগৃহীত

স্বামীকে খুনের অভিযোগে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ পেয়েছিলেন মমতা পাঠক নামে রসায়নের এক সাবেক অধ্যাপক। সেই রায়ের বিরুদ্ধে তিনি আপিল করেন। সেই আপিলের শুনানিতে তিনি নিজেই নিজের আইনজীবী হিসেবে হাজির হন। চেষ্টা করেন, ‘বৈজ্ঞানিকভাবে’ তাঁর স্বামীর মৃত্যুর কারণ ব্যাখ্যা করতে। কিন্তু তারপরও নিজেকে মুক্ত করতে পারেননি। হাইকোর্ট তাঁর যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছে।

ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির খবরে বলা হয়েছে, নিজের মামলার আপিলে নিজেই লড়ে ভাইরাল হয়েছিলেন মমতা পাঠক। স্বামীর মৃত্যুর কারণ বৈজ্ঞানিকভাবে ব্যাখ্যার চেষ্টা করেও পার পাননি তিনি। ৯৭ পৃষ্ঠার বিস্তারিত রায়ে উচ্চ আদালত জেলা আদালতের আগের রায় বহাল রেখেছে। মামলার ব্যতিক্রমী চরিত্র ও মমতা পাঠকের সাহসী উপস্থিতি এই রায়কে ঘিরে ভারতজুড়ে ব্যাপক আগ্রহ তৈরি করেছে।

মধ্যপ্রদেশের ছাতারপুর জেলার একটি কলেজের রসায়ন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মমতা পাঠক ২০২২ সালে স্বামী ডা. নীরজ পাঠকের হত্যার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হন। নীরাজ পাঠক অবসরপ্রাপ্ত সরকারি চিকিৎসক ছিলেন। দম্পতির মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে পারিবারিক দ্বন্দ্ব চলছিল বলে জানিয়েছে পুলিশ। ২০২১ সালে নিজ বাড়িতে রহস্যজনক মৃত্যু হয় নীরজ পাঠকের। শুরুতে পুলিশ ঘটনাটিকে ‘বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যু’ বলেই নথিভুক্ত করে। কিন্তু ফরেনসিক ও ময়নাতদন্ত রিপোর্টে অসংগতি ধরা পড়লে মামলায় হত্যার অভিযোগ গঠন করা হয়।

জেলা আদালত চিকিৎসা সংক্রান্ত প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মমতা পাঠককে যাবজ্জীবন সাজা দেয়। এই রায়ের বিরুদ্ধে মমতা পাঠক মধ্যপ্রদেশ হাই কোর্টের জব্বলপুর বেঞ্চে আপিল করেন। সেই সময় মানসিক প্রতিবন্ধী সন্তানকে দেখাশোনার জন্য তাঁকে অন্তর্বর্তী জামিন দেওয়া হয়েছিল। আইনি সহায়তা সেভাবে না পেয়ে তিনি নিজেই আদালতে দাঁড়িয়ে নিজের পক্ষে সওয়াল করেন।

আদালতের সেই বিরল মুহূর্ত ভাইরাল হয় ইন্টারনেট জুড়ে। মমতা আদালতে যুক্তি তুলে ধরে বলেন, তাপজনিত দাহ ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হওয়া দাহ দেখতে প্রায় একরকম হয়ে থাকে এবং এদের পার্থক্য বোঝার জন্য রাসায়নিক বিশ্লেষণ প্রয়োজন। তাঁর এই মন্তব্যে বিচারপতি বিস্মিত হয়ে জানতে চান, ‘আপনি কি রসায়নের অধ্যাপক?’ উত্তরে মমতা বলেন, ‘জি, আমি একজন অধ্যাপক।’

আত্মবিশ্বাস, যুক্তির পঠনপাঠন এবং বিচার চলাকালীন নিজেকে সংযত রাখার এই সাহসী দৃশ্য সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। অনেকেই তাঁকে সমর্থন জানাতে থাকেন। তবে সামাজিক সহানুভূতি বা ভাইরাল উপস্থিতি বিচারকে প্রভাবিত করতে পারেনি। হাই কোর্ট যাবজ্জীবন সাজা বহাল রেখেছে।

সরকারি আইনজীবী মানস মণি বর্মা এনডিটিভিকে জানান, ‘মামলাটিকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে দেখা হয়েছে। আদালতের পক্ষ থেকে প্রবীণ আইনজীবী সুরেন্দ্র সিংকে অ্যামিকাস কিউরি বা বিচার সহায়ক হিসেবে নিয়োগ করা হয়, যাতে মমতা পাঠক সুবিচার পান।’

দীর্ঘ শুনানি শেষে আদালত জানায়, উপস্থাপিত প্রমাণ ও ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে মমতা পাঠকের দোষ প্রমাণিত হয়েছে। বিচারপতির বেঞ্চ বলেন, ‘এটি একটি গুরুতর অপরাধ, যা সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি রাখে।’ সেই সঙ্গে মমতা পাঠককে অবিলম্বে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেন বিচারক।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত