Ajker Patrika

অফিসে বসকে যা বলবেন না

ফিচার ডেস্ক, ঢাকা 
আপডেট : ৩০ জুলাই ২০২৫, ১৬: ৫২
বসকে সামলে চলতে পারলে কাজের পরিবেশ ও উন্নতি—দুটিই সহজ হয়ে যায়। ছবি: পেক্সেলস
বসকে সামলে চলতে পারলে কাজের পরিবেশ ও উন্নতি—দুটিই সহজ হয়ে যায়। ছবি: পেক্সেলস

কথায় বলে, ‘বন্দুকের গুলি আর মুখের বুলি’ একবার বেরিয়ে গেলে আর ফেরানো যায় না। তাই অফিসে বসের সামনে এমন কোনো কথা বলবেন না, যা আখেরে আপনার ক্ষতির কারণ হয়।

অফিসে কাজের পাশাপাশি বসকেও সামলে চলতে হয়। তবে সামলে চলা আর ‘তেল মারার’ মধ্যে পার্থক্য আছে। বসকে সামলে চলতে পারলে কাজের পরিবেশ ও উন্নতি—দুটিই সহজ হয়ে যায়।

অফিস সংস্কৃতিতে কিছু কথা আছে, যা বললে আপনি ‘অতি সাহসী’ হিসেবে পরিচিত হবেন। সেটা আপনার ক্যারিয়ারে কোনো কিছু যোগ করবে না। তাই বুঝেশুনে কথা বলতে হবে। একই সঙ্গে আচরণও করতে হবে বুঝে। কথাবার্তায় একটু মজা থাকুক। তবে সেটা যেন সীমার মধ্যে থাকে।

এর সঙ্গে, না ওর সঙ্গে

অফিসে ঢুকে কোনো কাজের ক্ষেত্রে দলের কারও উদ্দেশে নেতিবাচক কথা বসের সামনে বলা উচিত নয়। যেমন ‘ওর সঙ্গে কাজ করা যায় না!’ কিংবা ‘ও কিছু পারে না’। অফিসে টম-জেরিকে একসঙ্গে মিলিয়ে চলতে হয়। সেখানে ‘আমি কারও সঙ্গে কাজ করব না’ বলে বসকে স্কুলের হেডমাস্টার বানিয়ে ফেলবেন না। যদি সত্যিই কেউ অযোগ্য বা বিরক্তিকর হয়; তাহলে মেপে বলুন, ‘স্যার, অমুকের সঙ্গে কিছু সমস্যা হচ্ছে, একটু পরামর্শ চাই।’

কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তরে নেতিবাচক কথা না বলাই ভালো। ছবি: পেক্সেলস
কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তরে নেতিবাচক কথা না বলাই ভালো। ছবি: পেক্সেলস

‘না’ বলা যাবে না

কোনো প্রশ্ন করলে তার উত্তরে, ‘এটা তো আমার কাজ নয়’ কিংবা ‘আমার তো জানা ছিল না!’ কোনো বিষয়েই এ ধরনের কথা বলা যাবে না। বসের মুখ তখন তেতো করলা হয়ে যাবে। সত্যিই কাজটা আপনার না হলেও বলেন, ‘স্যার, বুঝতে পারিনি; আসলে এইটা আমাকে করতে হবে কি না। যদি বলেন, ‘আমি চেষ্টা করি।’ আর ‘জানা ছিল না’ বলার চেয়ে ‘কনফার্ম করি নাই’ বলাটা অনেক নিরাপদ। বসের সামনে সাবধানে শব্দচয়ন করলে নিরাপদ থাকা যায়।

'ভালো লাগছে না’ বোঝানো যাবে না

মানুষের জীবন সব সময় একই রকম কাটে না। হতে পারে, আপনার মন ভালো নেই কিংবা শরীর। তা ছাড়া প্রতিদিন অফিসের একই কাজ একঘেয়ে লাগতেই পারে। কিন্তু ‘আমি তো বোরড’ কিংবা ‘কাজই নাই!’ বা ‘বোর লাগছে’, বসের সামনে এসব কথা বলা থেকে বিরত থাকুন। এসব কথা চাকরি যাওয়ার অলিখিত ওয়ারেন্ট! আমাদের অফিস সংস্কৃতিতে এসব কথার অর্থ দাঁড়ায়, আপনি দায়িত্বজ্ঞানহীন এবং অফিসকে ক্লাবে রূপ দিতে চান। এমন কিছু মনে হলে বরং বসের সহযোগিতা চাইতে পারেন; কিংবা নিজেকে কাজের মধ্যে অন্যভাবে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করতে পারেন। যদি অসুস্থ থাকেন, সে ক্ষেত্রে বলতে পারেন, ‘স্যার, শরীরটা একটু দুর্বল লাগছে। চেষ্টা করছি ঠিকভাবে চালিয়ে নিতে।’

আগেই ভালো ছিলাম

আগের অফিস কিংবা আগের বস নিয়ে বর্তমান অফিসে কথা বলা যাবে না। সেই অফিসের ভালো দিক বললে অনেকে ভাববেন, বর্তমানকে নেতিবাচক বলা হচ্ছে। ‘আমি আগের অফিসে এ রকম করতাম’ বা ‘আগের বস অনেক কুল ছিল!’ এ ধরনের কথা বলা যাবে না। তখন আপনাকে বলা হবে, তাহলে আগের অফিসে ফিরে যান। এমন কথা বস শুনলে মনে মনে নেতিবাচক বোর্ডে আপনার নাম লিখে রাখবেন। বরং বলেন, ‘স্যার, একটা আলাদা অ্যাপ্রোচ দেখেছিলাম আগের অফিসে, যদি কাজে লাগে…’। তাহলেই বস ভাববেন, আপনি ইনোভেটিভ!

বসের আইডিয়ায় নাক সিটকাবেন না

‘স্যার, আমি হলে এভাবে ভাবতাম’। এমন কথা ভুলেও বলবেন না। এই কথাটা আপনার চাকরির জন্য চরম বিপজ্জনক! এই কথার পর হয় আপনার প্রমোশন বন্ধ হবে, না হয় কর্মজীবন মারাত্মক চ্যালেঞ্জিং হয়ে উঠবে। মাথা ঠান্ডা রেখে বলতে হবে, ‘স্যার, এই সিদ্ধান্ত অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল মনে হচ্ছে, কীভাবে আপনি হ্যান্ডেল করলেন শুনতে চাই।’ এভাবে শিখতেও পারবেন, বাঁচতেও পারবেন।

বসের সামনে ফরমাল না হলেও ‘ভদ্রলোকের ভাষা’ চালু রাখা উত্তম। ছবি: পেক্সেলস
বসের সামনে ফরমাল না হলেও ‘ভদ্রলোকের ভাষা’ চালু রাখা উত্তম। ছবি: পেক্সেলস

‘মাই ব্যাড’ টাইপ কুলনেস নয়

ক্লাসমেটদের সঙ্গে যেটা চলে, সেটা বসের সামনে চলবে না। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বসের সামনে ফরমাল না হলেও ‘ভদ্রলোকের ভাষা’ চালু রাখা উত্তম। ‘মাই ব্যাড’ নয়, ‘ভুলটা আমার হয়েছে, পরেরবার সচেতন থাকব’—এই রকম বললেই আপনি প্রফেশনাল।

কিছু বিষয় না বলাই ভালো

যেমন চাকরি বদলাতে চাচ্ছেন। এই কথা বসের সঙ্গে শেয়ার না করাই ভালো। চাকরি খুঁজতেই পারেন। কিন্তু অফিসের ঘাড়ে দাঁড়িয়ে বলাটা বিপজ্জনক। কোথাও সাক্ষাৎকার থাকলে ছুটি নিন ‘ব্যক্তিগত কারণ’ দেখিয়ে। কিন্তু বিশ্লেষণ করবেন না কোথায় যাচ্ছেন। আপনার বস যথেষ্ট বুদ্ধিমান মানুষ, বাকিটা আপনি না বললেও তিনি বুঝে নেবেন। বসের চেহারা, জামা বা শারীরিক অবস্থা নিয়ে মন্তব্য করলে যত বড় ভালোবাসা দিয়েই বলেন না কেন, সেটা অপেশাদার মনে হবে। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এ ধরনের মন্তব্য একেবারেই চাকরিজীবনের বিদায়ঘণ্টা বাজিয়ে দিতে পারে। অফিসে টাকাপয়সার ধারদেনা করতে গেলে সেটা সহকর্মীর সঙ্গেই সীমাবদ্ধ রাখুন। বসের কাছে টাকা চাইলে ভাববেন, আপনার আর্থিক ব্যবস্থাপনা অগোছালো—বিষয়টি বস ও এমপ্লয়ির মধ্যে বিশ্বাসে ফাটল ধরায়।

সূত্র: বিজনেস ইনসাইডার, ইউএস নিউজ, বেস্ট লাইফ

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত