অনলাইন ডেস্ক
প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম মারাত্মক রূপ সুনামি। পৃথিবীর বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে এই দুর্যোগ। সমুদ্র থেকে উঠে আসা বিশাল ঢেউগুলোর কারণে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রাণহানিসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সুনামির পূর্বাভাস ও সতর্কতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করা হয়। তবে একে সামাল দেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
সুনামি কী
সুনামি হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের একটি সিরিজ। সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বা ভূমিধসের কারণে আকস্মিকভাবে বিশাল মাত্রার জলরাশির বিশৃঙ্খলার ফলে সুনামি সৃষ্ট হয়। বিশাল শক্তি এবং দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সুনামির ঢেউগুলো প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ মাইল (প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ কিলোমিটার) গতি নিয়ে মহাসাগর পার হতে পারে, যা একটি জেট বিমান চলাচলের গতির সমান।
যখন সুনামি উপকূলে পৌঁছে, তখন এই বিধ্বংসী ঢেউগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ ফুট (৩০ মিটার) পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উচ্চতার রেকর্ডকৃত সুনামি হলো—১৯৫৮ সালে আলাস্কার লিটুয়া বে-তে সৃষ্ট মেগাসুনামি। এই সুনামির উচ্চতা ছিল ১ হাজার ৭১৯ ফুট (৫২৪ মিটার)।
‘সুনামি’ শব্দটি জাপানি ভাষা থেকে এসেছে। জাপানি ‘সু’ অর্থ ‘বন্দর’ বা ‘পোতাশ্রয়’ এবং ‘নামি’ অর্থ ‘ঢেউ’। সাধারণ সমুদ্রের ঢেউ বাতাসের কারণে হয় না। চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ফলে সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার কারণে হয়। তবে সুনামির ঢেউ ভিন্ন রকম। সুনামি সাধারণত প্রচুর পানির স্থানান্তরের ফলে সৃষ্টি হয় এবং এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়।
সুনামির প্রধান কারণসমূহ তুলে ধরা হলো—
সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প: সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো সমুদ্রের তলদেশে টেকটোনিক প্লেটের হঠাৎ স্থানান্তর। এই ক্রিয়াকলাপের ফলে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি স্থানচ্যুত হয়ে দ্রুতগতির ঢেউ সৃষ্টি হয়, যা মহাসাগর পেরিয়ে উপকূলে আঘাত হানে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো—২০০৪ সালের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের ভূমিকম্প। ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছিল এই সুনামি এবং ভারত মহাসাগরের অনেক দেশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ: সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বা এর নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বা ধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং ২০১৮ সালে অনাক ক্রাকাতোয়া ধসের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী সুনামি তৈরি হয়েছিল।
সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস: ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কারণে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হতে পারে। বিষয়টি কোনো বড় পাথর জলাশয়ে ফেলার মতো। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮ সালে পাপুয়া নিউ গিনিতে ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হয়। এর ফলে সৃষ্ট সুনামি উপকূলবর্তী জনবসতির ব্যাপক ক্ষতি করে।
মহাকাশ থেকে আসা বস্তু ও অন্যান্য বিরল কারণ
বড় কোনো মহাজাগতিক বস্তু মহাসাগরে এসে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বিপুল পানি স্থানচ্যুত হয়। এর ফলে সমুদ্রে বিশাল ঢেউ তৈরি হতে পারে, যা সুনামিতে রূপ নেয়। এই ঢেউগুলো শুধু আশপাশের অঞ্চলেই নয়, মহাসাগর পেরিয়ে অনেক দূরের উপকূলেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ছাড়া মানবসৃষ্ট কারণে সমুদ্রের তলদেশে কোনো বড় বিস্ফোরণ ঘটালে সুনামি হতে পারে। যেমন: কোনো পরীক্ষামূলক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে।
সুনামির পদার্থবিজ্ঞান
সুনামির গতির এত বেশি হয় যে একটি পুরো মহাসাগর অতিক্রম করতে তাদের এক দিনের কম সময় লাগে। এগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য (একটি ঢেউয়ের চূড়া থেকে পরবর্তী চূড়া পর্যন্ত দূরত্ব) সাধারণত অনেক বড় হয়। সুনামির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটার (প্রায় ১২৫ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে। ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীর ভূত্বক উদ্ভূত শক্তি থেকে সরাসরি পানিতে স্থানান্তরিত হয়। তাই সুনামি এত গতি পায়।
গভীর পানিতে
মহাসাগরের মাঝখানে সুনামি ঢেউগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক দীর্ঘ হয় এবং ঢেউয়ের উচ্চতা এক মিটার বা তারও কম থাকে। এ কারণে এই ঢেউগুলো জাহাজের নিচ দিয়ে সহজে চলে যায় এবং আকাশ থেকেও সহজে দেখা যায় না। গভীর পানিতে সুনামির গতি নির্ধারিত হয় √gd সূত্র অনুসারে, যেখানে g হলো মাধ্যাকর্ষণ বল এবং d হলো পানির গভীরতা। এই সূত্র অনুযায়ী, যত গভীর পানি, ঢেউয়ের গতি তত বেশি।
অগভীর পানিতে
যখন সুনামি উপকূলের দিকে আসে এবং অগভীর পানিতে প্রবেশ করে, তখন সাগরের তলদেশের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ঢেউয়ের গতি কমে যায়। এর বিপরীতে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে গিয়ে ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। এই পরিবর্তনের ফলে উপকূলে বিশাল ও ধ্বংসাত্মক ঢেউ উপকূলে আঘাত হানে।
উপকূলে সুনামির প্রভাব
গভীর পানিতে সুনামি ঢেউগুলো সাধারণত খুবই দীর্ঘ ও নিম্ন উচ্চতার হয়, তাই সাগরে এগুলো অনেক সময় চোখে পড়ে না। তবে উপকূলের কাছাকাছি এলে, সমুদ্রের তলদেশ ক্রমে উঁচু হওয়ায় ঢেউগুলো ধীরে ধীরে গতি হারায় এবং সংকুচিত হয়ে ওঠে। ফলে ঢেউয়ের উচ্চতা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় এবং তা বিশাল প্রাচীরের মতো উপকূলে আঘাত হানে, যা ব্যাপক প্লাবন ও ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে।
ভূপ্রকৃতি ও অবকাঠামোর উপর প্রভাব
সুনামি উপকূলে আঘাত হানলে তা ব্যাপক ভূমিক্ষয় ঘটাতে পারে, উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এবং স্থায়ীভাবে ভৌগলিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দেয়। এই ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ভবন, সেতু, রাস্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে ফেলে। এ ছাড়া সুনামি সমুদ্র তলদেশ থেকে মাটি, ধ্বংসাবশেষ ও লবণাক্ত পানি তুলে এনে জমিতে ছড়িয়ে দেয়, যা সুপেয় পানির উৎস ও কৃষিজমিকে দূষিত করে তোলে।
ইতিহাসের ভয়াবহ কিছু সুনামি
২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামি: সমুদ্রের তলদেশে ইতিহাসের অন্যতম বড় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই সুনামি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বহু দেশে আঘাত হানে। এতে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় এবং ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ মিটার।
২০১১ সালের জাপানের তোহোকু ভূমিকম্প ও সুনামি: ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া সুনামি কিছু এলাকায় ৪০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছায়। এটি ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায় এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার সূচনা করে।
১৭৫৫ সালের লিসবন ভূমিকম্প ও সুনামি: ৮ দশমিক ৫-৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামি পর্তুগাল, উত্তর আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এতে লিসবনের বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রাকৃতিক দুর্যোগের অন্যতম মারাত্মক রূপ সুনামি। পৃথিবীর বিভিন্ন উপকূলীয় অঞ্চলে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে এই দুর্যোগ। সমুদ্র থেকে উঠে আসা বিশাল ঢেউগুলোর কারণে উপকূলবর্তী এলাকায় প্রাণহানিসহ অর্থনৈতিক ও সামাজিক ক্ষয়ক্ষতি হয়। সুনামির পূর্বাভাস ও সতর্কতার মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতি কমানোর চেষ্টা করা হয়। তবে একে সামাল দেওয়া অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং।
সুনামি কী
সুনামি হলো সমুদ্রের ঢেউয়ের একটি সিরিজ। সাধারণত সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প, আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বা ভূমিধসের কারণে আকস্মিকভাবে বিশাল মাত্রার জলরাশির বিশৃঙ্খলার ফলে সুনামি সৃষ্ট হয়। বিশাল শক্তি এবং দীর্ঘ তরঙ্গদৈর্ঘ্যের বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন সুনামির ঢেউগুলো প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৫০০ মাইল (প্রতি ঘণ্টায় প্রায় ৮০০ কিলোমিটার) গতি নিয়ে মহাসাগর পার হতে পারে, যা একটি জেট বিমান চলাচলের গতির সমান।
যখন সুনামি উপকূলে পৌঁছে, তখন এই বিধ্বংসী ঢেউগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ১০০ ফুট (৩০ মিটার) পর্যন্ত উচ্চতায় পৌঁছাতে পারে। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ উচ্চতার রেকর্ডকৃত সুনামি হলো—১৯৫৮ সালে আলাস্কার লিটুয়া বে-তে সৃষ্ট মেগাসুনামি। এই সুনামির উচ্চতা ছিল ১ হাজার ৭১৯ ফুট (৫২৪ মিটার)।
‘সুনামি’ শব্দটি জাপানি ভাষা থেকে এসেছে। জাপানি ‘সু’ অর্থ ‘বন্দর’ বা ‘পোতাশ্রয়’ এবং ‘নামি’ অর্থ ‘ঢেউ’। সাধারণ সমুদ্রের ঢেউ বাতাসের কারণে হয় না। চাঁদ ও সূর্যের মহাকর্ষীয় আকর্ষণের ফলে সৃষ্ট জোয়ার-ভাটার কারণে হয়। তবে সুনামির ঢেউ ভিন্ন রকম। সুনামি সাধারণত প্রচুর পানির স্থানান্তরের ফলে সৃষ্টি হয় এবং এর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক বেশি হয়।
সুনামির প্রধান কারণসমূহ তুলে ধরা হলো—
সমুদ্রের তলদেশে ভূমিকম্প: সবচেয়ে সাধারণ কারণ হলো সমুদ্রের তলদেশে টেকটোনিক প্লেটের হঠাৎ স্থানান্তর। এই ক্রিয়াকলাপের ফলে সমুদ্রের বিশাল জলরাশি স্থানচ্যুত হয়ে দ্রুতগতির ঢেউ সৃষ্টি হয়, যা মহাসাগর পেরিয়ে উপকূলে আঘাত হানে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো—২০০৪ সালের ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরের ভূমিকম্প। ইতিহাসের অন্যতম প্রাণঘাতী প্রাকৃতিক দুর্যোগে পরিণত হয়েছিল এই সুনামি এবং ভারত মহাসাগরের অনেক দেশকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছিল।
আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ: সমুদ্রপৃষ্ঠের কাছাকাছি বা এর নিচে আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ বা ধসের ফলে সুনামি সৃষ্টি হতে পারে। ১৮৮৩ সালে ক্রাকাতোয়া আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ এবং ২০১৮ সালে অনাক ক্রাকাতোয়া ধসের কারণে ইন্দোনেশিয়ায় শক্তিশালী সুনামি তৈরি হয়েছিল।
সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস: ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কারণে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হতে পারে। বিষয়টি কোনো বড় পাথর জলাশয়ে ফেলার মতো। উদাহরণস্বরূপ, ১৯৯৮ সালে পাপুয়া নিউ গিনিতে ভূমিকম্পের কারণে সমুদ্রের তলদেশে ভূমিধস হয়। এর ফলে সৃষ্ট সুনামি উপকূলবর্তী জনবসতির ব্যাপক ক্ষতি করে।
মহাকাশ থেকে আসা বস্তু ও অন্যান্য বিরল কারণ
বড় কোনো মহাজাগতিক বস্তু মহাসাগরে এসে পড়লে তাৎক্ষণিকভাবে বিপুল পানি স্থানচ্যুত হয়। এর ফলে সমুদ্রে বিশাল ঢেউ তৈরি হতে পারে, যা সুনামিতে রূপ নেয়। এই ঢেউগুলো শুধু আশপাশের অঞ্চলেই নয়, মহাসাগর পেরিয়ে অনেক দূরের উপকূলেও ভয়াবহ প্রভাব ফেলতে পারে।
এ ছাড়া মানবসৃষ্ট কারণে সমুদ্রের তলদেশে কোনো বড় বিস্ফোরণ ঘটালে সুনামি হতে পারে। যেমন: কোনো পরীক্ষামূলক বোমার বিস্ফোরণ ঘটালে।
সুনামির পদার্থবিজ্ঞান
সুনামির গতির এত বেশি হয় যে একটি পুরো মহাসাগর অতিক্রম করতে তাদের এক দিনের কম সময় লাগে। এগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য (একটি ঢেউয়ের চূড়া থেকে পরবর্তী চূড়া পর্যন্ত দূরত্ব) সাধারণত অনেক বড় হয়। সুনামির তরঙ্গদৈর্ঘ্য ২০০ কিলোমিটার (প্রায় ১২৫ মাইল) পর্যন্ত হতে পারে। ভূমিকম্প বা আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণের কারণে পৃথিবীর ভূত্বক উদ্ভূত শক্তি থেকে সরাসরি পানিতে স্থানান্তরিত হয়। তাই সুনামি এত গতি পায়।
গভীর পানিতে
মহাসাগরের মাঝখানে সুনামি ঢেউগুলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য অনেক দীর্ঘ হয় এবং ঢেউয়ের উচ্চতা এক মিটার বা তারও কম থাকে। এ কারণে এই ঢেউগুলো জাহাজের নিচ দিয়ে সহজে চলে যায় এবং আকাশ থেকেও সহজে দেখা যায় না। গভীর পানিতে সুনামির গতি নির্ধারিত হয় √gd সূত্র অনুসারে, যেখানে g হলো মাধ্যাকর্ষণ বল এবং d হলো পানির গভীরতা। এই সূত্র অনুযায়ী, যত গভীর পানি, ঢেউয়ের গতি তত বেশি।
অগভীর পানিতে
যখন সুনামি উপকূলের দিকে আসে এবং অগভীর পানিতে প্রবেশ করে, তখন সাগরের তলদেশের সঙ্গে ঘর্ষণের কারণে ঢেউয়ের গতি কমে যায়। এর বিপরীতে, তরঙ্গদৈর্ঘ্য কমে গিয়ে ঢেউয়ের উচ্চতা অনেক বেড়ে যায়। এই পরিবর্তনের ফলে উপকূলে বিশাল ও ধ্বংসাত্মক ঢেউ উপকূলে আঘাত হানে।
উপকূলে সুনামির প্রভাব
গভীর পানিতে সুনামি ঢেউগুলো সাধারণত খুবই দীর্ঘ ও নিম্ন উচ্চতার হয়, তাই সাগরে এগুলো অনেক সময় চোখে পড়ে না। তবে উপকূলের কাছাকাছি এলে, সমুদ্রের তলদেশ ক্রমে উঁচু হওয়ায় ঢেউগুলো ধীরে ধীরে গতি হারায় এবং সংকুচিত হয়ে ওঠে। ফলে ঢেউয়ের উচ্চতা হঠাৎ অনেক বেড়ে যায় এবং তা বিশাল প্রাচীরের মতো উপকূলে আঘাত হানে, যা ব্যাপক প্লাবন ও ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টি করে।
ভূপ্রকৃতি ও অবকাঠামোর উপর প্রভাব
সুনামি উপকূলে আঘাত হানলে তা ব্যাপক ভূমিক্ষয় ঘটাতে পারে, উপকূলীয় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস করে এবং স্থায়ীভাবে ভৌগলিক দৃশ্যপট পরিবর্তন করে দেয়। এই ঢেউয়ের কারণে সৃষ্ট জলোচ্ছ্বাস ভবন, সেতু, রাস্তা ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামো ধ্বংস করে ফেলে। এ ছাড়া সুনামি সমুদ্র তলদেশ থেকে মাটি, ধ্বংসাবশেষ ও লবণাক্ত পানি তুলে এনে জমিতে ছড়িয়ে দেয়, যা সুপেয় পানির উৎস ও কৃষিজমিকে দূষিত করে তোলে।
ইতিহাসের ভয়াবহ কিছু সুনামি
২০০৪ সালের ভারত মহাসাগরের সুনামি: সমুদ্রের তলদেশে ইতিহাসের অন্যতম বড় ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া এই সুনামি ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা, ভারতসহ বহু দেশে আঘাত হানে। এতে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি মানুষ মারা যায় এবং ঢেউয়ের উচ্চতা ছিল প্রায় ৩০ মিটার।
২০১১ সালের জাপানের তোহোকু ভূমিকম্প ও সুনামি: ৯ মাত্রার ভূমিকম্পের ফলে সৃষ্টি হওয়া সুনামি কিছু এলাকায় ৪০ মিটার উচ্চতায় পৌঁছায়। এটি ব্যাপক প্রাণহানি ঘটায় এবং ফুকুশিমা পারমাণবিক দুর্ঘটনার সূচনা করে।
১৭৫৫ সালের লিসবন ভূমিকম্প ও সুনামি: ৮ দশমিক ৫-৯ মাত্রার ভূমিকম্পের পর সৃষ্ট সুনামি পর্তুগাল, উত্তর আফ্রিকা ও ক্যারিবিয়ান অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে। এতে লিসবনের বিশাল অংশ ধ্বংস হয়ে যায়।
তথ্যসূত্র: ইন্টারেস্টিং ইঞ্জিনিয়ারিং
প্রাচীন মিসরের এক সমাধিতে ৪ হাজার বছর আগের একটি হাতের ছাপ আবিষ্কার করেছেন যুক্তরাজ্যের ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিটজউইলিয়াম জাদুঘরের গবেষকেরা। জাদুঘরের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, আসন্ন একটি প্রদর্শনীর প্রস্তুতির সময় তারা এই বিরল হাতের ছাপটি খুঁজে পান।
২২ মিনিট আগেযুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের যৌথ মহাকাশ অভিযান ‘নিসার’ (নাসা-ইসরো সিনথেটিক অ্যাপারচার রাডার মিশন) এক ঐতিহাসিক মুহূর্তের সূচনা করেছে। এই প্রথম দুই দেশের মহাকাশ সংস্থা (নাসা ও ইসরো) একসঙ্গে একটি উপগ্রহ তৈরি ও উৎক্ষেপণ করল।
১৪ ঘণ্টা আগেগবেষণাগারে প্রথমবারের মতো তৈরি হলো ‘ব্ল্যাক হোল বোমা’। এই পরীক্ষার মাধ্যমে প্রায় ৫০ বছর আগের পুরোনো তত্ত্ব প্রমাণ করেছেন একদল আন্তর্জাতিক গবেষক। প্রকৃত ব্ল্যাকহোলের ঘূর্ণন ও নানা রহস্য বোঝার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে এই গবেষণা।
১ দিন আগেবহু শতাব্দী ধরে মানুষ আকাশের দিকে তাকিয়ে জানতে চেয়েছে—মহাবিশ্বের শুরুতে ঠিক কী ঘটেছিল। এই দীর্ঘ অনুসন্ধানের পথ এখন অনেকটাই সহজ করে দিয়েছে নাসার তৈরি জেমস ওয়েব স্পেস টেলিস্কোপ। ১ হাজার ৩০০ কোটি বছর আগের মহাবিশ্বের রঙিন ছবি তুলে তাক লাগিয়ে দিয়েছিল টেলিস্কোপটি।
২ দিন আগে