Ajker Patrika

সেতুর সংযোগ চাঁদার সাঁকোতে

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি
Thumbnail image

কুড়িগ্রাম পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের ভেলাকোপা এলাকার একটি সেতুর সংযোগ সড়ক ২০১৭ সালের বন্যায় ভেঙে গেছে। সেতুটি যে সড়কের ওপর, তার বিভিন্ন অংশও ভেঙে যায়। কিন্তু এরপর ৫ বছর কেটে গেলেও সেতুটির সংযোগ সড়ক ও সড়কের ভাঙা অংশগুলো মেরামত করা হয়নি। এতে বছরের পর বছর ভোগান্তিতে রয়েছে ওই এলাকার কয়েকটি গ্রামের হাজারো মানুষ।

স্থানীয়রা বলছেন, গত ৫ বছরে পৌরসভার জনপ্রতিনিধি বদল হলেও বদলায়নি সেতু ও সড়কের পরিস্থিতি। পৌরসভা এ সড়ক সংস্কারে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। বাধ্য হয়ে স্থানীয়রা চাঁদা তুলে সেতুটির সংযোগ সড়ক ও সড়কের ভাঙা অংশগুলোতে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। অন্যদিকে পৌরসভা বলছে, সেতু ও সড়কের সংস্কারের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ এলে শিগগিরই কাজ শুরু হবে।

স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কুড়িগ্রাম পৌরসভার টাপু ভেলাকোপার হানাগড় থেকে দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামের দিকে একটি পাকা সড়ক চলে গেছে। কিছুদূর পরে একটি বিলের ওপর রয়েছে ১৭ মিটার দৈর্ঘ্যের কংক্রিটের সেতু। ২০১১-১২ অর্থবছরে প্রায় সোয়া কোটি টাকা ব্যয়ে কুড়িগ্রাম পৌরসভা সেতুটি নির্মাণ করে। ২০১৭ সালের বন্যায় সেতুটির পূর্ব প্রান্তের সংযোগ সড়কের অন্তত ২৫ ফুট অংশ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। সৃষ্টি হয় প্রায় ১৫ ফুট গভীর একটি খাদ। সেই খাদের ওপর কাঠের সাঁকো তৈরি করে লোকজন চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। একটু এগোলেই সড়কে আরও একটি খাদ। সেই খাদে রয়েছে ২৫ মিটার দীর্ঘ বাঁশের সাঁকো। ২০১৭ সালের বন্যায় সড়কের বিভিন্ন স্থানে এমন খাদের সৃষ্টি হয়। পৌর কর্তৃপক্ষ সেগুলো মেরামতে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। সড়কের খাদগুলোতে স্থানীয়রা চাঁদা দিয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছেন।

এ সড়কে নিয়মিত যাতায়াত করা দক্ষিণ নওয়াবশ গ্রামের বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, ‘পাঁচ বছর ধরে সড়কটি বেহাল পড়ে থাকলেও সংস্কারের কোনো ব্যবস্থা করা হচ্ছে না। আমাদের বিকল্প কোনো পথ নেই। এই পথই আমাদের ভরসা। এদিকে আমরা যারা থাকি, বোধ হয় সরকারের লোকজন মনেই করেন না।’

একই গ্রামের বাসিন্দা মফিজুল বলেন, ‘আমাদের চলাচল করতে খুব কষ্ট হচ্ছে। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিয়ে যেতেও সমস্যা। এই সড়কে রিকশায় করেও রোগী নিয়ে যাওয়া যায় না। রাতে কেউ অসুস্থ হলে তো ভোগান্তির কোনো শেষ থাকে না।’

আনারুল, কবির হোসেন ও সফিকুল ইসলামসহ স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, ‘এই সড়কে হেঁটে চলাচলের জন্য স্থানীয়রা চাঁদা তুলে বাঁশের সাঁকো তৈরি করেছেন। কিন্তু একটি চক্র প্রায়ই সেই সাঁকো ভেঙে দিয়ে মানুষজনকে টাকার বিনিময়ে নৌকায় যাতায়াতে বাধ্য করে। মানুষকে জিম্মি করে এমন কাণ্ড ঘটলেও পৌর কর্তৃপক্ষ বা স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।’

পৌরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর জমশেদ আলী টুংকু বলেন, ‘প্রতিদিন ওই সড়কে কয়েক হাজার মানুষ চলাচল করে। আমি অনেকবার কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানিয়েছি। কিন্তু কোনো প্রতিকার হয়নি। স্থানীয় প্রতিনিধি হিসেবে আমি নিজেও এই সেতুর মেরামতে অংশ নিয়েছি। আমি চাই টেকসই পরিকল্পনা নিয়ে সংযোগ সড়কের সংস্কারসহ সেতুটির ব্যবহার উপযোগী করা হোক।’

এ নিয়ে জানতে চাইলে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী আতিকুর রহমান বলেন, ‘ওই সেতুর সংযোগ সড়কটি সংস্কারের জন্য গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পের পরিচালকের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া পূর্ব দিকের খাদে আরও একটি সেতু নির্মাণের অনুরোধ জানিয়ে এলজিইডি বরাবর চিঠি দেওয়া হয়েছে। আমরা সড়কটি সংস্কারের চেষ্টা করছি।’ কুড়িগ্রাম পৌরসভার মেয়র মো. কাজিউল ইসলাম বলেন, ভেলাকোপার ওই সেতুর বিষয়ে কাগজপত্র ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলে শিগগিরই কাজ শুরু করা হবে। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত