Ajker Patrika

খালেদার বিদেশে চিকিৎসা: বিএনপির পছন্দ যুক্তরাজ্য, সরকার ভারত-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড পাঠাতে চায়

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৩, ১৩: ৩৩
খালেদার বিদেশে চিকিৎসা: বিএনপির পছন্দ যুক্তরাজ্য, সরকার ভারত-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ড পাঠাতে চায়

বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে দেওয়া যায় কি না, সে বিষয়ে সরকারের একটি মহল ও দলটির কিছু নেতার মধ্যে আলাপ শুরু হয়েছে। বিদেশে গেলে তিনি কোন দেশে যাবেন, তা সরকার নির্দিষ্ট করে দেবে কি না, নাকি তাঁর নিজের পছন্দের কিংবা চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী কোনো দেশে যেতে দেওয়া হবে, সে বিষয়েও নেপথ্যে কথা হচ্ছে।

খালেদা জিয়ার মুক্তি ও বিদেশে চিকিৎসার সুযোগের জন্য তাঁর ছোট ভাই শামীম এসকান্দার সর্বশেষ ২৫ সেপ্টেম্বর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন। আবেদনটি আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে গতকাল বুধবার নিশ্চিত করেছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা।

খালেদা জিয়াকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো নিয়ে সরকারের সঙ্গে বিএনপির কোনো কথা হচ্ছে কি না, আজকের পত্রিকার এমন প্রশ্নে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আশা প্রকাশ করেন, সরকার এ বিষয়ে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেবে। শারীরিক বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে অনেক দিন ধরে রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন খালেদা জিয়া।

সরকারি সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া ভারতে যেতে চাইলে, সে ক্ষেত্রে আইনগত দিক ঠিক রেখে সরকারের পক্ষ থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। এর বাইরে সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে তাঁর যাওয়ার সম্ভাবনা নিয়েও কথা হচ্ছে। 
বিএনপির এক নেতা মনে করেন, চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়ার ভারতে যাওয়া দলের জন্য রাজনৈতিকভাবে বেশ ঝুঁকির। এতে এমন ধারণা তৈরি হবে, সরকারের সঙ্গে নেপথ্যে আলাপ-আলোচনায় ভারত কলকাঠি নাড়ছে।

বিএনপির অন্য এক নেতা বলেছেন, খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যদের সবাই বর্তমানে লন্ডনবাসী হওয়ায় তিনি যুক্তরাজ্যে যেতে চাইবেন, এটাই স্বাভাবিক। এর বাইরে উন্নত চিকিৎসার জন্য যুক্তরাষ্ট্রেও যেতে চাইতে পারেন তিনি।

খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যপ্রবাসী হওয়ায় খালেদা জিয়াকে দেশটিতে যেতে দেওয়ার বিষয়ে সরকারের মনোভাব নেতিবাচক বলে একটি সূত্র জানায়।

অন্যদিকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য ভিসা নীতি কার্যকর করায় এ মুহূর্তে তাঁর দেশটিতে যাওয়া ভুল রাজনৈতিক বার্তা দিতে পারে বলে দলের নেতাদের একাংশ মনে করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন শেখ হাসিনাকে প্রধানমন্ত্রী পদে রেখে অনুষ্ঠিত হলে বিএনপি তাতে অংশ নেবে, এমন শর্তে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দেওয়ার বিষয়ও দুই পক্ষের আলাপে আনা হচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে।

অবশ্য বিএনপির এক জ্যেষ্ঠ নেতা আজকের পত্রিকাকে বলেন, খালেদা জিয়াকে যতটুকু বোঝা যায়, তাতে শর্ত সাপেক্ষে মুক্তির ওই প্রস্তাবে তাঁর রাজি হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। ২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি সেনাসমর্থিত সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর দুই বছর বহুবার তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাঁকে বিদেশে পাঠিয়ে দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

কূটনৈতিক সূত্রের তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা নীতি আগামী অক্টোবর নাগাদ যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে সমন্বিত উপায়ে প্রয়োগের উদ্যোগ আছে। এমন তথ্য সরকার এবং বিএনপির কাছেও আছে।

বিএনপির নেতাদের কেউ কেউ মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এমন চাপের মুখে কিছুটা বেকায়দায় পড়েই সরকার খালেদা জিয়ার মুক্তির সঙ্গে নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্ত যুক্ত করে দিতে পারে। এমন শর্তে রাজি হয়ে তাঁর মুক্ত হওয়া বিএনপির জন্য রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করছেন তাঁরা।

খালেদা জিয়ার পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ আছে, দলের নির্বাহী কমিটির এমন একজন নেতা গতকাল আজকের পত্রিকাকে বলেন, নির্বাচনে অংশ নেওয়ার শর্তে মুক্ত হতে চেয়ারপারসন সম্ভবত রাজি হবেন না। তাঁর প্রশ্ন, দলের হাজার হাজার নেতা-কর্মী যখন সাজায় জেলে যাওয়ার ঝুঁকি নিয়ে মাঠে আছেন, তখন জীবনসায়াহ্নে এসে এত বড় রাজনৈতিক ঝুঁকি তিনি কেন নেবেন?

খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে মোট মামলা আছে ৩৭টি। এর মধ্যে জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় ২০১৮ সালের ৮ ফেব্রুয়ারি তাঁর ৫ বছরের জেল হয়। রায় ঘোষণার পর ওই দিনই খালেদাকে নেওয়া হয় পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দীন রোডের পুরোনো কেন্দ্রীয় কারাগারে। এই রায়ের বিরুদ্ধে দুদকের আপিলে হাইকোর্ট সাজা বাড়িয়ে ১০ বছর কারাদণ্ড দেন। আর জিয়া চ্যারিটেবল ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়ার সাত বছর জেল হয়েছে।

আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বদান্যতায় বেগম জিয়া কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয়েও মুক্ত থেকে সুচিকিৎসা নিতে পারছেন। সরকার নির্বাহী আদেশে সাজা স্থগিত করে ঢাকায় চিকিৎসার জন্য তাঁকে মুক্তি দেয়। মন্ত্রী বলছেন, চিকিৎসার জন্য বিদেশে নিতে হলে আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে করতে হবে।

খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য তাঁর ছোট ভাই শামীম এসকান্দার সর্বশেষ গত সোমবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেন। আবেদনটির অগ্রগতি সম্পর্কে জানতে আজকের পত্রিকা থেকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের নম্বরে টেলিফোন করা হয়। পরে তাঁর জনসংযোগ কর্মকর্তা শরীফ মাহমুদ অপু আজকের পত্রিকাকে জানান, খালেদা জিয়ার বিদেশে পাঠানোর বিষয়টি মতামতের জন্য আইন মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। সেখান থেকে মতামত আসার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত