Ajker Patrika

বেকারির ‘বিষ’ ভোক্তার পেটে

নুরুল আলম, মিরসরাই (চট্টগ্রাম) 
আপডেট : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১২: ২৯
Thumbnail image

চট্টগ্রামের মিরসরাইয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে খাদ্যপণ্য তৈরি করছে বেকারিগুলো। নিম্নমানের এসব ভেজাল পণ্য কিনে প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। অপরদিকে হুমকির মুখে পড়েছে জনস্বাস্থ্য।

অধিকাংশ বেকারি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের ছাড়পত্র ছাড়াই প্রশাসনের নাকের ডগায় পরিচালনা করছে ব্যবসা। কিছু প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নানা সময়ে মামলা হলেও কার্যক্রম বন্ধ হয়নি। এতে নিরাপদ মনে করে এসব বেকারিতে তৈরি ‘বিষ’ কিনে খাচ্ছে মানুষ।

মিরসরাই উপজেলা স্যানিটারি ও নিরাপদ খাদ্য পরিদর্শক শংকর প্রসাদ বিশ্বাসের দেওয়া তথ্য মতে, উপজেলায় ২০টি বেকারি রয়েছে। এর মধ্যে ৯ টিতে খাদ্য তৈরি হয় ওভেনে। বাকি ১১টিতে তৈরি হয় হাতে। এসব বেকারির পণ্য উপজেলার ৪৫টি বাজারের অন্তত পৌনে চৌদ্দ শ’ প্রতিষ্ঠান ও ২৪টি হোটেল-রেস্তোরাঁয় যাচ্ছে। গত এক বছরে বিভিন্ন অপরাধে অন্তত ৫০ জনকে জরিমানা করেছে ভ্রাম্যমাণ আদালত।

একটি বেকারি চালুর আগে ট্রেড লাইসেন্স, বিএসটিআই, ফায়ার সার্ভিস, পরিবেশ, স্যানিটারি ও ট্রেডমার্ক ছাড়পত্র থাকা বাধ্যতামূলক। তবে উপজেলার বেকারিগুলোর অধিকাংশই এই নিয়মের তোয়াক্কা করছে না।

গত রবি ও সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, বেশির ভাগ কারখানায় কর্মচারীরা হাতে গ্লাভস ছাড়াই দু হাতে ময়দা পিষছেন। জুতা পায়ে দিয়েই ঘুরে ঘুরে বিভিন্ন রকমের পণ্য সাজিয়ে রাখছেন। অনেককে খালি গায়ে আটা-ময়দার স্তূপে দাঁড়িয়ে পায়ে ময়দা মাখাতে দেখা যায়। কেউ আবার ময়দার খামির মেশিনে শুকাচ্ছেন। এঁদের অধিকাংশই ছিলেন খালি গায়ে। কারও শরীর থেকে ঘাম ঝরছে। কেউ এক হাতে বিড়ি-সিগারেট ফুঁকছেন, অন্য হাত দিয়ে কাজ করছেন।

খোলা তেলভর্তি ড্রামের ওপর দেখা যায়, মাছি ভনভন করছে। যত্রতত্র ইঁদুর ও তেলাপোকার বিষ্ঠা ছড়িয়ে থাকতেও দেখা যায়। খোলা পরিবেশে পণ্য তৈরির সময় উড়ে এসে ধুলো-বালি পড়ছে। এসব পণ্যই বাহারি মোড়কে মুড়িয়ে বাজারজাত করা হচ্ছে। কারখানায় তৈরি বিস্কুট, পাউরুটি, কেক, মিষ্টির মতো খাবার এভাবেই চলে যাচ্ছে ভোক্তাদের দুয়ারে।

উপজেলার করেরহাট বাজারে রয়েছে সুরভি বেকারি, আজমীর বেকারি, বাদামতলী ঢাকা বেকারি। এ ছাড়া জোরারগঞ্জ বাজারে বার আউলিয়া বেকারি, ঠাকুরদিঘি বাজারে শুভপুর বেকারি, বামুন সুন্দর দারোগার হাটে আলাউদ্দিন বেকারি, আল্লাহর দান বেকারি, সুফিয়া রোডে নিউ মদিনা ব্রেড অ্যান্ড বিস্কুট, নিউ সেফ ফুড, নিউ মক্কা, নিউ মুরাদ বেকারি, বারইয়ারহাটে বিসমিল্লাহ বেকারি, বিষু মিয়ার হাটে মাহি বেকারি, কমর আলী বাজারে ইসপা বেকারি, মিরসরাই নিউ ঢাকা বেকারি, দারোগার হাটে রাজ বেকারি, মিরসরাই বাজারে আল আমিন, নিউ ঢাকা ফুড, নিউ মক্কা, মুরাদ বেকারিগুলোর চিত্র একই রকম। ঢাকা বেকারি, শুভপুর বেকারি, আল আমিন বেকারিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে দেখা যায়, ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের কোনো ট্রেড লাইসেন্স নেই।

বারইয়ারহাটের শেফা ইনসান হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শিশু বিশেষজ্ঞ ডা. এস এ ফারুক বলেন, ভেজাল কেমিক্যাল ও নিম্নমানের উপকরণ দিয়ে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরি করা এসব খাদ্য সামগ্রী খেলে যে কেউ জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। শিশুদের জন্য এসব খাবার বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।

ম্যাক্স হাসপাতালের পুষ্টিবিদ মরিয়মুন নেছা বলেন, খাদ্য যদি মানসম্মত না হয়, তা মানবদেহের জন্য ‘বিষ’ হয়ে যায়। এতে শরীরে মারাত্মক রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

আল আমিন বেকারির স্বত্বাধিকারী মো. ইউসুফ বলেন, বর্তমানে চিনি, ময়দার দাম ও শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি। স্কয়ার, প্রাণসহ বড় বড় কোম্পানিগুলোর কারণে গ্রামের ছোটখাটো উদ্যোক্তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়েছে।

বাদামতলীর ঢাকা বেকারির মালিক মাঈন উদ্দিন বলেন, ‘আমরা ব্যবসা শুরু করেছি ৬ মাস আগে। শিগগিরই অনুমোদনের জন্য আবেদন করব।’

বিএসটিআই চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার আশিকুজ্জামান বলেন, ‘যেগুলো শর্ত না মেনে পরিচালনা করছে শিগগির তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মিরসরাইয়ের ইউএনও মিনহাজুর রহমান বলেন, যে সব বেকারি যথাযথ নিয়ম মেনে চলবে না তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযান চালানো হবে।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত