Ajker Patrika

আসাদ বাঁচিয়েছেন ২৭০ জীবন

আরাফাত আহমেদ রিফাত
আসাদ বাঁচিয়েছেন ২৭০ জীবন

আপনি জানেন কি, যতক্ষণে আপনি এই লেখাটি পড়বেন, ততক্ষণে পৃথিবীতে পাঁচ থেকে ছয়জন মানুষ আত্মহত্যা করবে? আর যতক্ষণে এক কাপ চায়ের সঙ্গে পুরো পত্রিকা পড়ে শেষ করবেন, ততক্ষণে বাংলাদেশে একজন মানুষ আত্মহত্যা করবে?

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গড়ে প্রতি ৪০ সেকেন্ডে বিশ্বের কোথাও না কোথাও একজন মানুষ আত্মহত্যা করে। আর বাংলাদেশে প্রতিদিন ৪০ জনের বেশি মানুষ আত্মহত্যা করে। পড়াশোনার চাপ, সেশনজট, পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়া, অভিমান, প্রেমঘটিত বিষয়, পরিবার থেকে কিছু চেয়ে না পাওয়াসহ নানা কারণে মানুষ আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে উঠেছে। সাম্প্রতিক সময়ে আত্মহত্যার হার বেড়েছে জ্যামিতিক হারে।

এ অবস্থায় আত্মহত্যা প্রতিরোধ করে মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছেন শেরপুরের বদরুল মোর্শেদ আসাদ। আসাদের বাড়ি শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা গ্রামে। তিনি মালিঝিকান্দা সরকারি উচ্চবিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাসের পর ঢাকার একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে স্নাতক করেছেন। বর্তমানে তিনি একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে এমবিএ করছেন।

ক্ষাজীবনে আসাদ দেখেছেন অনেকে সামান্য কারণে হতাশ হয়েই আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে। তখন থেকে তিনি আত্মহত্যা প্রতিরোধে কাজ করতে চেয়েছেন। এরপর ২০১৮ সালে তিনি বন্ধুদের নিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘সুইসাইড প্রটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশ’। ‘সহমর্মিতা রুখতে পারে আত্মহত্যা’ স্লোগানে গঠিত এই সংগঠনটির প্রধান কাজ আত্মহত্যার চিন্তা করছে এমন মানুষকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা।

আসাদ জানান, শুরুতে এই সেবা সংগঠনের সদস্য ও পরিচিতদের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলেও করোনার সময় থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এখন পর্যন্ত আসাদ ও তাঁর সংগঠন ২৭০ জনকে আত্মহত্যার চিন্তা থেকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে পেরেছেন। কীভাবে সুইসাইড প্রটেক্টিং স্কোয়াড কাজ করে জানতে চাইলে আসাদ বলেন, ‘হতাশাগ্রস্ত কারও খোঁজ পেলে আমরা তাৎক্ষণিক তার সঙ্গে যোগাযোগ করে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিই। তারপর সেই ব্যক্তির সমস্যার কথা শুনে তা সমাধানের চেষ্টা করি। প্রয়োজনে মনোচিকিৎসকের পরামর্শ নিই।’

সারা দেশে সুইসাইড প্রটেক্টিং স্কোয়াড বাংলাদেশের শতাধিক স্বেচ্ছাসেবী রয়েছেন। পাশাপাশি কয়েকজন মনোচিকিৎসক বিভিন্ন সময় তাঁদের সাহায্য করেন। তাঁরা দেশের বিভিন্ন স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের সভা ও সেমিনারের মাধ্যমে আত্মহত্যা প্রতিরোধ ও মানসিক স্বাস্থ্য বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করেন। সংগঠনটির ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে আসাদ বলেন, ‘সারা দেশে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বিনোদনকেন্দ্রে ক্যাম্পেইনের মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্য ও আত্মহত্যা প্রতিরোধে সচেতনতা তৈরি করার পাশাপাশি অনলাইনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে চাই।

কর্মমুখী কারিগরি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থা করতে চাই, যাতে অর্থাভাবে কেউ আত্মহত্যা না করে। পাশাপাশি নিজস্ব অ্যাপস এবং ওয়েবসাইটের মাধ্যমে সেবা প্রদানের ব্যবস্থা করব।’ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, প্রতিবছর সারা বিশ্বে যেসব কারণে মানুষের মৃত্যু ঘটে, তার মধ্যে আত্মহত্যা ১৩তম। প্রতিনিয়ত এটি মহামারিতে রূপ নিচ্ছে। বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের মাঝে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে।

শুধু ২০২১ সালে বাংলাদেশের ১০১ জন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত