Ajker Patrika

ঢাবি ও জবিতে আত্মহত্যা বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ২৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৬: ৪৮
ঢাবি ও জবিতে আত্মহত্যা বেশি

করোনা মহামারির সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেড়েছে। তরুণদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা সংগঠন আঁচল ফাউন্ডেশনের সাম্প্রতিক গবেষণায় এমন চিত্র উঠে এসেছে। জাতীয় ও স্থানীয় সংবাদপত্র থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সংগঠনটি একটি প্রতিবেদন তৈরি করেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী গত এক বছরে বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া অন্তত ১০১ জন শিক্ষার্থী আত্মহননের পথ বেছে নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ৬২ জনই বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন। পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ও জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এর (জবি) সংখ্যাই বেশি।

বিশ্ববিদ্যালয়ে বেড়েছে আত্মহত্যা: হতাশায় নিমজ্জিত শিক্ষার্থীরা’ শিরোনামে আঁচল ফাউন্ডেশনের তৈরি করা ওই প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০২১ সালে আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিলেন ৬১ দশমিক ৩৯ শতাংশ। বাকিদের মধ্যে মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রয়েছেন ১২ জন, শতাংশের হারে যা ১১ দশমিক ৮৮ শতাংশ। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এর শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যা করেছেন ২৩ জন, অর্থাৎ ২২ দশমিক ৭৭ শতাংশ। আত্মহননের পথ বেছে নেওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৪ জন ছিলেন ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী।

পরিসংখ্যান বলছে, গত এক বছরে ঢাবির ৯ জন এবং জবির ৬ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন। এ ছাড়া সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ জন, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন এবং বেসরকারি ড্যাফোডিল বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন।

আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, আত্মহত্যা করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে বেশির ভাগের বয়স ২২ থেকে ২৫ বছর। অর্থাৎ স্নাতকের তৃতীয় ও চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার হার তুলনামূলকভাবে বেশি। এর আগে বিভিন্ন জরিপে ছাত্রীদের আত্মহত্যার হার বেশি দেখা গেলেও গত বছর ছাত্রদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি দেখা গেছে। আত্মহননকারী ১০১ জনের মধ্যে ছাত্র ছিলেন ৬৫ এবং ছাত্রী ৩৬ জন।

আত্মহত্যার কারণ খুঁজতে গিয়ে দেখা গেছে, ক্যারিয়ারকেন্দ্রিক সামাজিক চাপ ও ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকে তৈরি হওয়া হতাশার কারণেই আত্মহন্তারক হয়েছেন বেশির ভাগ শিক্ষার্থী। এ ছাড়া সম্পর্ক নিয়ে জটিলতায় ২৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ, পারিবারিক সমস্যার প্রভাবে ১৯ দশমিক ৮০ এবং মানসিক যন্ত্রণায় ১৫ দশমিক ৮৪ শতাংশ শিক্ষার্থী আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ ছাড়া ১০ দশমিক ৮৯ জন শিক্ষার্থী পড়াশোনাসংক্রান্ত চাপে এবং ৪ দশমিক ৯৫ শতাংশ শিক্ষার্থী আর্থিক সমস্যার কারণে আত্মহত্যা করেছেন বলে প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এ ছাড়া করোনার সময়ে সামাজিক, আর্থিক ও পারিবারিক চাপ বৃদ্ধিকেও শিক্ষার্থীদের আত্মহন্তারক হওয়ার অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

আত্মহত্যার এই হারকে ভীতিকর অভিহিত করে আঁচল ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তানসেন রোজ বলেন, শিক্ষার্থীদের যুগোপযোগী হিসেবে গড়ে তুলতে না পারায় তাঁদের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। এর প্রভাবে অনেকে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছেন। তবে ঘটনাগুলো বিশ্লেষণ করে এটা স্পষ্ট হয়েছে যে বাইরে থেকে কারণগুলো সহজ মনে হলেও সমস্যা অনেক গভীরে। এ ব্যাপারে এখনই পদক্ষেপ না নিলে পরে অনুশোচনা করতে হবে।

এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য ওই প্রতিবেদনে ১০টি প্রস্তাবও তুলে ধরা হয়েছে। উল্লেখযোগ্য প্রস্তাবের মধ্যে রয়েছে, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে মানসিক স্বাস্থ্যবিষয়ক পেশাদার ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া, পলিসি ডায়ালগে তরুণদের সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা দেশের সব স্তরে পৌঁছে দেওয়া, মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত সংস্কার ও হীনম্মন্যতা দূরীকরণে প্রাথমিক স্কুল পর্যায় থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত পাঠক্রমে মানসিক স্বাস্থ্যসংক্রান্ত পাঠ অন্তর্ভুক্ত করা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বৃদ্ধি প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি বিভাগের অধ্যাপক কামাল চৌধুরী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বাংলাদেশে গত কয়েক বছরের আত্মহত্যার পরিসংখ্যান বিশেষত করোনা পরিস্থিতিতে এই বিষয়ের পরিসংখ্যান এবং তার ফলাফল যথেষ্ট ভীতিকর। করোনাভাইরাস নিয়ে আমরা যতখানি আতঙ্কিত, আত্মহত্যায় মৃত্যুবরণ করা অসংখ্য মানুষকে নিয়ে কিন্তু ততটা চিন্তিত নই। দুঃখজনক হলেও সত্য, এই লাশের মিছিল আরও দীর্ঘ হবে; কারণ, মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়ে আমরা উদাসীন। এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের জন্য সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে সমন্বিতভাবে কাজ করতে হবে। জেলায় জেলায় সেল গঠন করে সচেতনতা বাড়ানো গেলে আত্মহত্যা প্রতিরোধ করা সম্ভব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

নারীর সঙ্গে এনসিপি নেতা তুষারের কথোপকথন ফাঁস নিয়ে যা বললেন সহযোদ্ধা ইমি

সকালে পরীক্ষা, রাতেই ফল: সেই নিয়োগের তদন্তে কমিটি

চোখের সামনে খামেনির অন্তরঙ্গ মহল ফাঁকা করে দিচ্ছে ইসরায়েল

পাকিস্তানিওঁ কি কাতিল—যুক্তরাষ্ট্রে সেনাপ্রধান জেনারেল আসিম মুনিরের উদ্দেশে স্লোগান

আমাদের হয়ে ‘নোংরা কাজটা’ করে দিচ্ছে ইসরায়েল: জার্মান চ্যান্সেলর

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত