Ajker Patrika

স্টেডিয়ামে ‘ঘাসের জঙ্গল’

মো. মিজানুর রহমান রিয়াদ, নোয়াখালী
আপডেট : ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ১৩: ০২
স্টেডিয়ামে ‘ঘাসের জঙ্গল’

এক কোণে ঘাস কাটছেন কয়েকজন। কেউ আবার মাছ ধরার পর জাল রোদে শুকাচ্ছেন। মাঝখানের ছোট্ট একটি অংশে কয়েকজন কিশোর বল-ব্যাট হাতে সময় কাটাচ্ছে। এটুকু ছাড়া বাকি অংশে ঘাস আর ঘাস। যেন ঘাসের চাষ করা হয়েছে।

নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার কাবিলপুর ইউনিয়নের আজিজপুর গ্রামে ‘বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়াম এটি। দেখে বোঝার উপায় নেই এটি একটি স্টেডিয়াম। ইতিমধ্যে এটি মাদকসেবীদের আখড়া হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০০৪ সালে ১০ দশমিক ৩০ একর জমির ওপর সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের অধীনে স্থাপন করা হয় সেনবাগ স্টেডিয়াম। পরবর্তী সময়ে ‘বীর বিক্রম শহীদ তরিক উল্যা স্টেডিয়াম’ নামে এর নামকরণ করা হয়। ২০০৭ সালে উদ্বোধনের পর থেকে এ স্টেডিয়ামে দুটি বড় টুর্নামেন্ট হয়। যার মধ্যে ২০০৮ সালে চেয়ারম্যান গোল্ডকাপ ও ২০১২ বঙ্গবন্ধু ফুটবল টুর্নামেন্ট। দুটি টুর্নামেন্টের মাঝে শীতকালীন ও স্কুল পর্যায়ের কয়েকটি খেলা হয় এখানে। কিন্তু ২০১৩ সাল থেকে স্টেডিয়ামটি বন্ধ রয়েছে। খেলা বন্ধ হওয়ায় স্টেডিয়ামটি ‘ঘাসের খামারে’ পরিণত হয়েছে। নষ্ট হয়ে যাচ্ছে দুটি দর্শক গ্যালারি। যেখানে দর্শক ধারণ ক্ষমতা ছিল ৫ হাজার। কয়েক দিন আগে গেটসহ স্টেডিয়ামের বাইরের অংশে রঙের কাজ করা হয়। তবে ভেতরের অবস্থা এখনো অপরিবর্তিত।

স্থানীয় আহসান হাবিব বলেন, ‘এ স্টেডিয়ামে একসময় আমরা খেলাধুলা করতাম। উপজেলা পর্যায়ে এখানে অনেকগুলো খেলা হয়েছে। কিন্তু বর্তমানে স্টেডিয়ামটি মাদকসেবীদের আড্ডাখানায় পরিণত হয়েছে।’

ইউছুফ হোসেন নামের সাবেক এক খেলোয়াড় বলেন, সেনবাগ থেকে দীর্ঘদিন ধরে বিভাগীয় পর্যায়ে আক্তার, সেলিম, নরেশ দাদাসহ বেশ কয়েকজন খেলোয়াড় খেলেছেন। কিন্তু বর্তমানে তদারকির অভাবে স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী না হওয়ায় খেলোয়াড় সৃষ্টি হচ্ছে না। বর্তমানে শিশু-কিশোর ও শিক্ষার্থীরা খেলাধুলার সুযোগ পাচ্ছে না। তারা এখন মাদক সেবনসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে।

স্টেডিয়ামের কেয়ারটেকার দ্বীন মোহাম্মদ বলেন, ‘স্টেডিয়ামের দেখভালের জন্য ২০০৭ সালে ১৫০০ টাকায় আমাকে কেয়ারটেকার নিয়োগ দেওয়া হয়। প্রথম কয়েক মাস অনিয়মিত পেলেও কয়েক বছর ধরে আমার বেতন বন্ধ রয়েছে। বহিরাগত ও মাদক সেবিদের স্টেডিয়ামে আসতে বাধা দিলে তারা আমাকে প্রাণ নাশেরও হুমকি দেন।’

সেনবাগ ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বাবু আজকের পত্রিকাকে বলেন, স্টেডিয়ামটি ধানখেতের ওপর করা হয়। তাতে মাটি ভরাট না করায় বর্ষাকালে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে। পরে ঘাসে ভরে যায়। নিজেদের উদ্যোগে একাধিকবার ঘাস কেটে কয়েকটি খেলার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। কিন্তু কিছুদিন গেলে আবার ঘাসে ভরে যায়। এখন পর্যন্ত বিদ্যুৎ বিল আমাদের নিজস্ব তহবিল থেকে দিতে হয়। প্রধানমন্ত্রী ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতা পেলে দ্রুত সময়ের মধ্যে মাঠটি প্রস্তুত করে খেলার উপযোগী করা সম্ভব হবে। পরে অবকাঠামোগত সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নিতে হবে। যুবসমাজকে মাদক ও মোবাইল আসক্তি থেকে দূরে রাখতে স্টেডিয়ামটি খেলার উপযোগী করা জরুরি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত