Ajker Patrika

ঋণের নামে আত্মসাতের ফাঁদ

জমির উদ্দিন, চট্টগ্রাম
আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২: ০০
ঋণের নামে আত্মসাতের ফাঁদ

পারিবারিক অনটনের কারণে বাংলাদেশ রেলওয়ে সমবায় ঋণদান (সিসিএস) সমিতির কাছে সাড়ে ৩ লাখ টাকার জন্য আবেদন করেন সহকারী স্টেশনমাস্টার আল ইয়াসবা আক্তার। ঋণের টাকা অনুমোদিত হওয়ার পর তাঁর বেতন থেকে টাকা কাটতে শুরু করে ব্যাংক। কিন্তু সেই ঋণের টাকা ২ বছরেও পাননি আল ইয়াসবা। তিনি জানতে পারেন, সমিতির পরিচালক মিজানুর রহমান তাঁর ঋণের টাকা তুলে আত্মসাৎ করেছেন।

শুধু আল ইয়াসবা নন, রেলওয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় লিটনের টাকাও একইভাবে আত্মসাৎ করা হয়। তিনিও দুই বছর আগে সাড়ে ৩ লাখ টাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। আল ইয়াসবার মতো তাঁর টাকাও তুলে মিজানুর রহমান আর লিটনকে দেননি। একই অভিযোগ হাসপাতালের পরিচ্ছন্নতাকর্মী প্রদীপ, এক্স-রে অপারেটর ওয়াহিদের।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু হাসপাতালেরই ১৮ জন কর্মচারী সমিতির কাছে ঋণের আবেদন করেন। তা অনুমোদিত হওয়ার পরও তাঁরা কেউ টাকা পাননি।

মিজানুর রহমান এখন পর্যন্ত ১২ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাঁর বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতির কথাও জানিয়েছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।

ষোলশহরের সহকারী স্টেশনমাস্টার আল ইয়াসবা আক্তার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘২০২১ সালের জানুয়ারিতে সিসিএসের কাছে ঋণের আবেদন করি। ঋণ অনুমোদনের  পর ফেব্রুয়ারিতে বেতন থেকে ৭ হাজার টাকা কাটা শুরু হয়। কিন্তু দুই বছরেও ঋণের টাকা পাইনি। সিসিএসের পরিচালক মিজানুর রহমান টাকা তুলে নেন। আমাকে না দিয়ে সেই টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।’

আল ইয়াসবা আক্তার বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে পরিচালকের কাছে অনেকবার গিয়েছি, কিন্তু তিনি টাকা ফেরত দেবেন বলে আর দেননি। এখন তিনি আমার ফোন কলও ধরছেন না। বিষয়টি নিয়ে আমি রেলওয়ের জিএমকে (মহাব্যবস্থাপক) লিখিত আকারে জানাব।’

রেলওয়ে হাসপাতালের ওয়ার্ডবয় লিটন বলেন, ‘আমরা যে বেতন পাই, তা দিয়ে কোনোরকমে সংসার চলে। করোনার সময় খুব প্রয়োজন হওয়ায় সাড়ে ৩ লাখ টাকার জন্য আবেদন করেছিলাম; কিন্তু সেই টাকা এখনো পাইনি অথচ বেতন থেকে টাকাও কেটে নেওয়া হয়েছে কয়েকবার।’

ঋণের টাকা না পেয়ে পূর্বাঞ্চলের সিসিএস দপ্তরের অফিস সহকারী কামরুন নাহার, ওয়েম্যান বিষু ঘোষ, নিরাপত্তাপ্রহরী আবুল কালাম আজাদসহ ১০-১২ জন সমিতি বরাবর অভিযোগও করেছেন। সবাই সাড়ে ৩ লাখ টাকার জন্য আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তাঁরা কেউ টাকা পাননি, উল্টো মাসিক বেতন থেকে ঋণের টাকা কেটে নেওয়া হয়।’

জানা গেছে, বিভিন্ন সময় ঋণের টাকা না পেয়ে সমিতির কাছে অর্ধশতাধিক কর্মচারী অভিযোগ করেছেন। পরে সমিতি তদন্ত কমিটি করে এর সত্যতাও পায়। একটি সূত্র জানিয়েছে, অন্তত এক কোটি টাকা আত্মসাৎ করেন মিজানুর রহমান।

সমিতির সচিব মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘অভিযোগ পাওয়ার পর মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি সম্প্রতি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। চারজনের ১১-১২ লাখ টাকা মিজানুর রহমান হাতিয়ে নিয়েছেন বলে প্রমাণ পেয়েছে তদন্ত কমিটি। তাঁর বিরুদ্ধে আমরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছি।’

অভিযোগের বিষয়ে মিজানুর রহমান বলেন, ‘যাঁরা অভিযোগ করেছেন, তাঁরা সবাই টাকা পেয়েছেন। আমি কারও টাকা মেরে খাইনি।’ তবে তদন্ত কমিটির বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি কোনো উত্তর দেননি।

পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক (জিএম) জাহাঙ্গীর হোসেন আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সমিতির কাছে অনেকে অভিযোগ দিয়েছে বলে শুনেছি। তবে আমাকে কেউ লিখিত অভিযোগ দেননি। অভিযোগ দিলে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত