Ajker Patrika

শঙ্কা কাটিয়ে রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি

নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
আপডেট : ০৫ এপ্রিল ২০২২, ১২: ৩১
শঙ্কা কাটিয়ে রপ্তানিতে উচ্চ প্রবৃদ্ধি

রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি দেশের রপ্তানি বাণিজ্যে। বরং রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। গত মার্চে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি রপ্তানি আয় করেছেন রপ্তানিকারকেরা। এ মাসে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি করে ৪৭৬ কোটি ২২ লাখ ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকেরা, যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৩৪ দশমিক ২২ শতাংশ বেশি। আর আগের বছরের মার্চের তুলনায় ৫৫ শতাংশ বেশি। গত বছরের মার্চে রপ্তানি আয়ের পরিমাণ ছিল ৩০৭ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর এই মাসে রপ্তানির লক্ষ্যমাত্রা ধরা ছিল ৩৫৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। একইভাবে, চলতি অর্থবছরের ৯ মাসে (জুলাই-মার্চ) ৩ হাজার ৮৬০ কোটি ৫৬ লাখ ডলার আয় করেছেন রপ্তানিকারকেরা। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

প্রতিবেদনের প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরের এই ৯ মাসে পণ্য রপ্তানি থেকে ৩ হাজার ৮৭৫ কোটি ৮৩ লাখ ডলার আয় হয়েছিল। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে মার্চে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৩৩ দশমিক ৪১ শতাংশ বেশি আয় হয়েছে। আর গত ৯ মাসের রপ্তানি আয় লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় ১৮ দশমিক ৪৩ শতাংশ বেশি।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সাবেক সভাপতি ফজলুল হক আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘সম্প্রতি বেড়ে যাওয়া রপ্তানি আয় মূলত এসেছে পূর্বের রপ্তানিকৃত পণ্য থেকে। এটা আরও কয়েক মাস অব্যাহত থাকতে পারে। আর লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি রপ্তানি আয় আমাদের জন্য সুখবর।’ 
ফজলুল হক আরও বলেন, ‘করোনা মহামারির ধাক্কা এত দ্রুত সামলে ঘুরে দাঁড়াতে পারব, তা ভাবতেই অবাক লাগছে। শঙ্কিত ছিলাম রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে। সেটাও কেটে গেছে। একটা ভালো প্রবৃদ্ধি নিয়ে আমরা নতুন বছর শুরু করেছিলাম। সেটা অব্যাহত আছে। প্রচুর অর্ডার আছে ও নতুন অর্ডার আসছে। দামও ভালো পাচ্ছি। বিশেষ করে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, আয়ারল্যান্ডসহ আমাদের ক্রয়াদেশের ধারা অব্যাহত থাকলে আমাদের রপ্তানি আয় আরও বেড়ে যাবে।’

তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, মার্চ মাসের রপ্তানি আয় একক মাসের হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে তৃতীয় সর্বোচ্চ। এভাবে আয় অব্যাহত থাকলে বছর শেষে রপ্তানি আয় ৫ হাজার কোটি ডলার ছাড়িয়ে যেতে পারে। এর আগে সবচেয়ে বেশি রপ্তানি আয় এসেছিল গত বছরের ডিসেম্বরে। এ মাসে আয়ের পরিমাণ ছিল ৪৯০ কোটি ৭৭ লাখ ডলার। আর দ্বিতীয় সর্বোচ্চ এসেছিল চলতি বছরের প্রথম মাস, তথা জানুয়ারিতে। এ মাসে ৪৮৫ কোটি ৩ লাখ ডলার। দ্বিতীয় মাস ফেব্রুয়ারিতে এসেছিল ৪২৯ কোটি ৪৫ লাখ ডলার।

প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, চলতি ২০২১-২২ অর্থবছরের জুলাই-মার্চ সময়ে মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৩ হাজার ১৪২ কোটি ৮৪ লাখ ডলারই এসেছে তৈরি পোশাক খাত থেকে। এটি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৩৩ দশমিক ৮১ শতাংশ বেশি। লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে আয় বেড়েছে ১৯ দশমিক ৩৪ শতাংশ। আর মোট রপ্তানি আয়ের মধ্যে ৮১ দশমিক ৪৬ শতাংশই এসেছে তৈরি পোশাক থেকে। এর মধ্যে নিট পোশাক থেকে এসেছে ১ হাজার ৭১২ কোটি ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ। লক্ষ্যের চেয়ে বেশি এসেছে ১৭ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।

এদিকে জুলাই-মার্চ সময়ে ৯৫ কোটি ৮৪ লাখ ডলারের কৃষিপণ্য, ১১৫ কোটি ৭৮ লাখ ডলারের পোশাক, ৮৯ কোটি ৬৮ লাখ ডলার চামড়া ও চামড়াজাত পণ্য, ৮৮ কোটি ৭০ লাখ ডলারের পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানি হয়েছে। এ সময় হিমায়িত মাছ রপ্তানি থেকে আয় হয়েছে ৪৩ কোটি ৫৯ লাখ ডলার। ওষুধ রপ্তানি থেকে এসেছে ১৪ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরে সব খাতের রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধি দেখা গেলেও পাট ও পাটজাত পণ্য রপ্তানিতে আয় ৯ শতাংশের বেশি কমেছে।

রপ্তানি আয় বৃদ্ধির সামগ্রিক প্রভাব বিষয়ে তৈরি পোশাক মালিক ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহসভাপতি শহিদউল্লাহ আজিম আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ায় আমাদের পণ্যের জন্য অর্ডার বেড়েছে। করোনায় রপ্তানিমুখী শিল্প চালু থাকায় পণ্য সরবরাহ অব্যাহত ছিল। আমরা ভালো প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছি। প্রায় সর্বক্ষেত্রে আমরা লক্ষ্যের চেয়ে বেশি রপ্তানি আয় করেছি। এটা অব্যাহত থাকলে আমরা চলতি অর্থবছরে ৫০ বিলিয়ন ডলারের বেশি রপ্তানি আয় করতে পারব।’ 

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত