Ajker Patrika

স্ত্রী-সন্তানের চাহিদার চেয়ে মানুষে তাঁর মন

মো. তারেক রহমান, চাঁপাইনবাবগঞ্জ
আপডেট : ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ১১: ০৬
স্ত্রী-সন্তানের চাহিদার চেয়ে মানুষে তাঁর মন

জীবনভর মাথায় দই নিয়ে বিক্রি করে সংসার চালানো জিয়াউল হককে এখন দেশের অনেক মানুষ চেনে। চিনেছে তাঁর মহতী কাজের জন্য। কিন্তু এই কাজ করতে গিয়েই তিনি মন দিতে পারেননি স্ত্রী-সন্তানের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে। মানুষের সেবায় বিলিয়ে দিয়েছেন নিজের কষ্টার্জিত বেশির ভাগ অর্থ।

সব ত্যাগের পুরস্কার হয়ে জিয়াউল হকের হাতে উঠছে রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক। এই পদকের অর্থমূল্য হিসেবে যে অর্থ তিনি পাবেন, সেটাও মানুষের সেবায় ব্যয় করবেন বলে মনস্থির করেছেন। চাঁপাইনবাবগঞ্জের ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক।

দীর্ঘ ৬৫ বছর ধরে মাথায় দই চেপে ঘুরে ঘুরে বিক্রি করেন তিনি। দই বিক্রির টাকা দিয়ে ১৯৬৯ সালে প্রথমে নিজের গ্রামে একটি সাধারণ পাঠাগার প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর থেকে সমাজসেবা শুরু করেন। এলাকার স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে বই দেওয়া, স্কুল-কলেজে বেতন দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দিয়ে আসছেন তিনি। তাঁর এই সমাজসেবার জন্য এ বছর একুশে পদক পাচ্ছেন।

জানা গেছে, জিয়াউল হকের তিন সন্তান। দুই মেয়ে বড়। প্রথমে তাহমিনা বেগম, এরপর সুলতানা বেগম। দুজনই বাবার মতো পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন। অর্থের অভাবে পড়াশোনা করতে পারেননি তাঁরা। দুজনেরই বিয়ে হয়েছে একই এলাকায়। স্বামী-সংসার নিয়ে তাঁরা আছেন নিজেদের মতো।

জিয়াউল হকের ছেলে সবার ছোট, মহব্বত আলী। পড়াশোনা করছেন বটতলা মুসরিভূজা ইউসুফ আলী হাইস্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণিতে। মহব্বত আলী বলেন, ‘বাবা অন্যের সমাজসেবা করতে গিয়ে নিজের সন্তানদের দিকে নজর রাখতে ভুলেই গেছেন।

বড় দুই বোনকে পড়াশোনা করাতে পারেননি। আমি এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফল করার পর ইচ্ছে ছিল রাজশাহী অথবা ঢাকার একটি ভালো কলেজে ভর্তি হব। বাবা-মা রাজি হননি। কারণ, আমি বাইরে পড়াশোনা করলে তাঁদের খরচ বেশি লাগবে।’

জিয়াউল হকের স্ত্রী ফরিদা বেগম বলেন, ‘স্বামীর উপার্জিত সমস্ত অর্থ সমাজসেবায় খরচ হয়ে যায়। এক বেলা খেয়ে আরেক বেলা কী খাব, তা-ও ঘরে থাকে না।’

ছেলেটিকে যে ভালো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠাতে পারেননি, তা নিয়ে আফসোস আছে ফরিদা বেগমের। তিনি বলেন, ‘বেশি টাকা খরচ হবে, তাই বাইরে যেতে দেওয়া হয়নি ছেলেটিকে।’

আফসোস থাকলেও স্বামীর সম্মানে গর্ববোধ করেন ফরিদা। স্বামীর পরবর্তী সংকল্পের ঘোষণাও তিনি দিলেন, একুশে পদকের সঙ্গে যে অর্থ ও সম্মাননা দেওয়া হবে, পুরোটা বিলিয়ে দিতে চান জনগণের মাঝে।

জিয়াউল হকও তাঁর শুভ সংকল্পে অটল। তিনি বলেন, ‘যে টাকা উপার্জন করি, সবই তো মানুষের সেবায় চলে যায়। ছেলের পেছনে এত টাকা খরচ করলে তো মানুষের সেবায় বিঘ্ন ঘটবে। আমার প্রথম কাজ জনগণের জন্য, তারপর নিজের পরিবার।’

তবু ছেলেকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেন এই বাবা। বলেন, ‘ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও দুই মেয়েকে পড়াশোনা করাতে পারিনি। আশা আছে ছেলেকে পড়াশোনা করিয়ে জনগণের সেবায় কাজে লাগাব।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

পদোন্নতি দিয়ে ৬৫ হাজার সহকারী প্রধান শিক্ষক নিয়োগের পরিকল্পনা: ডিজি

দিনাজপুরে হিন্দু নেতাকে অপহরণ করে হত্যা: ভারত সরকার ও বিরোধী দল কংগ্রেসের উদ্বেগ

সমালোচনার মুখে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্রের নিয়োগ বাতিল

মির্জা ফখরুলের কাছে অভিযোগ, ১৬ দিনের মাথায় ঠাকুরগাঁও থানার ওসি বদলি

আজ থেকে ৫০০ টাকায় মিলবে ১০ এমবিপিএস গতির ইন্টারনেট

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত