Ajker Patrika

তাঁর ফিরে আসার উজ্জ্বল দিন

সম্পাদকীয়
আপডেট : ১০ জানুয়ারি ২০২২, ০৮: ৪৬
তাঁর ফিরে আসার উজ্জ্বল দিন

বাংলাদেশের স্বাধীনতা অনিবার্য ছিল। বাঙালি হারবে না, সেটাও বলা যায় নিশ্চিতই ছিল। কারণ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’; এই ঘোষণা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে এটাও দৃঢ়তার সঙ্গেই বলেছিলেন, ‘কেউ আমাদের দাবায়ে রাখতে পারবে না’। বাঙালিকে দাবিয়ে রাখা যায়নি। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানি জল্লাদ বাহিনী মিত্র ও মুক্তিবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত হলো। কিন্তু যাঁর আহ্বানে বাঙালি অস্ত্র হাতে স্বাধীনতার লড়াইয়ে জীবনপণ করে ঝাঁপিয়ে পড়ল, তাঁর দেশে ফেরা কি নিশ্চিত ছিল? না, সেটা নিশ্চিত ছিল না। কারণ, পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে হত্যার আয়োজন সম্পন্ন করেছিল।

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাসভবন থেকে বঙ্গবন্ধুকে আটক করা হয়। তিনি আত্মগোপন বা পালিয়ে যাওয়ার রাজনীতি কখনো করেননি। স্বাধীনতার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়ার আগে নিজের সহকর্মীদের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়ে তিনি বাসায়ই ছিলেন। একদিকে শুরু হয় বাঙালির প্রতিরোধ যুদ্ধ, অন্যদিকে পাকিস্তানিরা বঙ্গবন্ধুকে গোপনে পাকিস্তানে নিয়ে গিয়ে জেলে আটক রাখে, যেটা তখনো জানা যায়নি। ফলে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে দেখা দেয় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা। তাঁর অনুপস্থিতিতে, তাঁর নামেই মুক্তিযুদ্ধ চলে। অস্থায়ী সরকারও গঠিত হয় তাঁর নেতৃত্বেই।

শেখ মুজিব ধাপে ধাপে হয়ে উঠেছেন জনগণের অবিসংবাদিত নেতা, তেমনি জনগণকেও তিনি ধীরে ধীরে সংগঠিত করেছেন, প্রস্তুত করেছেন স্বাধীনতার লক্ষ্যে। সত্তরের নির্বাচনে জনগণ বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে বিপুল ভোটে বিজয়ী করে পাকিস্তানে সরকার গঠনের অধিকার দিয়েছিল। কিন্তু পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী ইয়াহিয়ার নেতৃত্বে বাঙালির হাতে ক্ষমতা হস্তান্তরে ষড়যন্ত্র শুরু করে এবং ২৫ মার্চ রাতের অন্ধকারে বাঙালি নিধনযজ্ঞে মেতে ওঠে। শুরু হয় স্বাধীনতার চূড়ান্ত লড়াই। এই যুদ্ধেও বাঙালির শত্রু-মিত্র ছিল, দেশে এবং দেশের বাইরে। মিত্রদের সমর্থন-সহযোগিতায় ৯ মাসের অসম যুদ্ধে বাঙালি এগিয়ে যায় বিজয়ের দিকে এবং ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতা বাঙালির করায়ত্ত হয়।

বিজয় অর্জনের পরও বাঙালির মনে আনন্দ-উল্লাসের ঘাটতি ছিল, অপূর্ণতা ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অনুপস্থিতিতে। তাঁকে মুক্তি দেওয়া হবে কি, তা ছিল অজানা। বাংলাদেশের মানুষের ঐকান্তিক চাওয়া এবং বিশ্বনেতাদের দাবির মুখে অবশেষে পাকিস্তান সরকার ৭ জানুয়ারি ভোরে একটি চার্টার্ড বিমানে করে লন্ডনে পাঠিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে। লন্ডন হয়ে বঙ্গবন্ধু ঢাকা এসে পৌঁছান ১০ জানুয়ারি। অবসান হয় সব উদ্বেগ, অনিশ্চয়তা ও উৎকণ্ঠার। দেশ তখন ধ্বংসস্তূপ, বিধ্বস্ত এবং যেন এক বধ্যভূমি। তারপরও জাতির পিতা ফিরে আসায় মানুষের সে কী উচ্ছ্বাস, আনন্দ। তাঁর বীরোচিত নেতৃত্বে শুরু হয় একটি কার্যকর জাতিরাষ্ট্র গঠনের নতুন সংগ্রাম।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

মুসলিম ছেলে বিয়ে করে পরিবারহারা, স্বামী পরিত্যক্ত হয়ে ঢাকায় এসে ধর্ষণের শিকার

মাদারীপুরে ৩ খুন: ঘটনার পেছনে পা ভাঙার প্রতিশোধসহ ৩ কারণ

পদত্যাগ করেছেন প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী আমিনুল ইসলাম

স্ত্রীর সামনে ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে হত্যা, বোমা ফাটিয়ে ২০ ভরি স্বর্ণালংকার লুট

ধর্ষণের শিকার নারী-শিশুর ছবি-পরিচয় প্রকাশ করলেই আটক

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত