Ajker Patrika

লাকড়ি বিক্রিতে বাড়তি আয়

সারিয়াকান্দি (বগুড়া) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৪ মার্চ ২০২২, ১১: ৫৪
লাকড়ি বিক্রিতে বাড়তি আয়

আলো খাতুন। রোজ সকালের সূর্যের আলো ফোটার আগেই শুরু হয় তাঁর কর্মব্যস্ততা। নিজে রোজগার করে সংসার চালানোর চেষ্টা করছেন। কোদাল হাতে ঢোকেন গোয়ালঘরে। সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করে আঙিনার নির্দিষ্ট স্থানে স্তূপ করে রাখেন। এরপর শুরু করেন লাকড়ি বা ঘুঁটে তৈরি।

শুধু আলো না। তাঁর মতো শিউলি বেগম, নারজিনা বেগম এবং লিজা বেগমও নিজেদের জ্বালানির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত লাকড়ি তাঁরা বিক্রি করে বাড়তি টাকা ঘরে তুলছেন।

গ্রামের রান্নার কাজে প্রধান জ্বালানি এই লাকড়ি। এ বিষয়ে আলো জানান, গোবর সংগ্রহের কাজ শেষে স্বামী সন্তানের জন্য সকালের নাশতা তৈরি করেন। এরপর সন্তানকে স্কুলে পাঠান। আর স্বামী চলে যান কাজে। এরপর সকাল ৯টা থেকে গোবরের লাকড়ি তৈরির কাজ শুরু করেন একমনে। দুপুর পর্যন্ত চলে এ কাজ। পাটখড়ির চারপাশে গোবর গেঁথে দিয়ে রোদে শুকাতে দেন। দুই থেকে তিন দিনের রোদেই গোবরগুলো শুকিয়ে তৈরি হয় লাকড়ি।

আলো সারা দিনে ১০০ থেকে ১৫০টি লাকড়ি তৈরি করতে পারেন। এগুলো বিক্রিও করেন ভালো দামে। ১০০টি লাকড়ির বর্তমান বাজার মূল্য ১২০ হতে ১৫০ টাকা। এ ছাড়া প্রতি বস্তা ঘুঁটে বিক্রি হয় ১০০ থেকে ১৩০ টাকা পর্যন্ত।

আলো সারিয়াকান্দি সদরের পারতিত পরল গ্রামের বাসিন্দা। তাঁর নিজস্ব গরু নেই। অন্যের গোয়ালঘর থেকে গোবর সংগ্রহ করে তৈরি করেন লাকড়ি। যা দিয়ে তাঁর সংসারের বেশির ভাগ খরচ চলে।

শুধু আলোই না। গ্রামের বেশির ভাগ নারীরাই যাদের দুয়েকটি গরু রয়েছে, তাঁরা প্রতিদিন সকালে লাকড়ি তৈরি করতে ব্যস্ত থাকেন। নিজেদের জ্বালানির চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত লাকড়ি তাঁরা বিক্রি করে বাড়তি টাকা ঘরে তুলছেন।

আলোর সঙ্গে একই উঠানে লাকড়ি তৈরি করেন শিউলি বেগম, নারজিনা বেগম এবং লিজা বেগম।

কথা হয় সারিয়াকান্দি সদরের পারতিত পরল গ্রামের আমজাদ হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘আমার স্ত্রী অগ্রহায়ণ থেকে চৈত্র মাস পর্যন্ত গোবর দিয়ে জ্বালানি তৈরি করে। আষাঢ় ও শ্রাবণ মাসের জ্বালানি রেখে বাকি জ্বালানি বিক্রি করি। এতে নিজের রান্নার কাজের জন্য যেমন জ্বালানি ঘাটতি থাকছে না, অপর দিকে আর্থিকভাবেও লাভবান হচ্ছি।’

সারিয়াকান্দি কাঁচা বাজারের চা স্টলের স্বত্বাধিকারী মামুন বলেন, ঘুঁটের আগুন দিয়ে চা জাল করতে কোনো ধোঁয়া হয় না। তা ছাড়া ঘুঁটের আগুন স্থায়ী বেশিক্ষণ হয়।

ফুলবাড়ী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আনোয়ারুত তারিক মোহাম্মাদ আজকের পত্রিকাকে জানান, দিন দিন জ্বালানিসংকট মারাত্মক আকার ধারণ করছে। জ্বালানিসংকটের কারণে গ্রামাঞ্চলের নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর পরিবারগুলো সবচেয়ে বেশি কষ্ট পোহাতে হচ্ছে। দফায় দফায় গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় এর বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে গোবরের তৈরি ঘুঁটে বা শলার লাকড়ি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত