Ajker Patrika

সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

সম্পাদকীয়
সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব

গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ হয়েছে। ভালো হয়েছে। ভোটার উপস্থিতি খুব ব্যাপক না হলেও একেবারে খারাপ ছিল না। বিএনপির মতো একটি বড় দল অংশ না নিলেও গাজীপুরে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়নি, সেই অভিযোগ কেউ হয়তো করবেন না।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী ছাড়াও আরও কয়েকজন প্রার্থী ছিলেন। নির্বাচনী প্রচারণাও জমজমাট ছিল। কয়েক বছর ধরে একতরফা নির্বাচনের যে ধারা গড়ে উঠেছে, গাজীপুরে তার বড় ব্যতিক্রম দেখা গেল। ভোটাররা নির্বিঘ্নেই ভোট দিতে পেরেছেন।

আওয়ামী লীগের প্রার্থী আজমত উল্লা খান একজন পরিচিত রাজনৈতিক নেতা। জনপ্রতিনিধি হিসেবেও তিনি একাধিকবার দায়িত্ব পালন করেছেন। ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী হওয়ায় তাঁর জয়ের ব্যাপারে আশাবাদ ছিলেন। কিন্তু ১৬ হাজারের বেশি ভোটে জয় পেয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী জায়েদা খাতুন। মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার আগে তিনি ছিলেন অপরিচিত। তাঁর বড় পরিচয় তিনি জাহাঙ্গীর আলমের মা।

জাহাঙ্গীর আলম গাজীপুর সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র এবং জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তবে তিনি আওয়ামী লীগ থেকে বহিষ্কৃত। তিনি দলের মনোনয়ন চেয়ে পাননি। স্বতন্ত্র প্রার্থীও হতে পারেননি, ঋণখেলাপি হওয়ায় তাঁর প্রার্থিতা বাতিল হয়।

জাহাঙ্গীর আলম ব্যক্তিগতভাবে যে গাজীপুরে জনপ্রিয় তার একটি প্রমাণ জায়েদা খাতুনের বিজয়। পুত্রের পরিচিতি ও জনপ্রিয়তাই তাঁকে বিজয়ী করেছে। অন্য কারণ তো অবশ্যই আছে।

গাজীপুরের মানুষ কেন রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ, একজন গৃহবধূকে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলেন, এক কথায় এই প্রশ্নের জবাব দেওয়া যাবে না। সম্ভবত অনেক কারণেই এটা হয়েছে। রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা ভোটের এমন অপ্রত্যাশিত ফলাফলের কারণ অনুসন্ধান করুন। আমরা শুধু এটাই বলতে চাই যে গাজীপুরে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ ভোটের যে নজির তৈরি হলো, পরবর্তী সব নির্বাচনেই যেন এটা অব্যাহত থাকে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু হওয়ায় নির্বাচন কমিশনকেও ধন্যবাদ জানাতে হয়। মানুষ আশা করবে, আগামীতেও কমিশন এমন নির্বাচন উপহার দিতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ থাকবে। সব মহলের আস্থা অর্জনের জন্য নির্বাচন কমিশনকে কথায় নয়, কাজে তাদের পক্ষপাতহীন মনোভাবের পরিচয় সবার কাছে বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে হবে।

গাজীপুরে গণতন্ত্রের জয় হয়েছে বলে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের মন্তব্য করেছেন। এটা ভালো লক্ষণ। আওয়ামী লীগ পরাজিত হলেও যে গণতন্ত্র জেতে—এই উপলব্ধি স্বস্তিদায়ক। আমরা আশা করব, এই বোধ ভবিষ্যতে বদলাবে না।

গাজীপুর থেকে অনেক কিছু শেখার আছে। তৃণমূলের মানুষের সঙ্গে সম্পৃক্ততা যে রাজনীতির একটি বড় উপাদান সেটা মনে রাখা দরকার। কোনো কিছু থেকেই কিছু শিক্ষা না নেওয়ার যে রাজনৈতিক সংস্কৃতি আমাদের দেশে চলছে, তার অবসান হওয়া উচিত।

নবনির্বাচিত সিটি মেয়র জায়েদা খাতুনকে অভিনন্দন। নির্বাচনের ফলাফল মেনে নেওয়ার জন্য আজমত উল্লা খানকেও ধন্যবাদ।গাজীপুর থেকে আবার দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের ধারা শুরু হোক—এটাই আমাদের প্রত্যাশা।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত