Ajker Patrika

মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ও নিদর্শনে সমৃদ্ধ

শামিমুজ্জামান, খুলনা
মুক্তিযুদ্ধের বীরত্বগাথা ও নিদর্শনে সমৃদ্ধ

নতুন প্রজন্ম মহান মুক্তিযুদ্ধে মুক্তিকামী মানুষের ওপর পাকিস্তানি হানাদারদের বর্বরতা-নৃশংসতার ঘটনা জানতে পারেন  ‘১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘর’ থেকে। তারা জানতে পারেন  মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস।

মহান মুক্তিযুদ্ধে গণহত্যা-নির্যাতনের নিদর্শন সংরক্ষণ, বধ্যভূমি ও গণকবর-সংক্রান্ত তথ্যভান্ডার গড়ে তোলা, গণকবর ও বধ্যভূমি চিহ্নিত করা এবং গবেষণার লক্ষ্য নিয়ে ২০১৪ সালের ১৭ মে খুলনায় এ জাদুঘরের যাত্রা শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধে সারা দেশের বিভিন্ন গণহত্যার নিদর্শন জায়গা পেয়েছে এতে। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চে রেসকোর্স ময়দানে ঐতিহাসিক ভাষণ দিয়েছিলেন যে মাইক্রোফোনে, তা সংরক্ষিত রয়েছে সযত্নে, আছে শহীদ বুদ্ধিজীবী মুনীর চৌধুরীর পাঞ্জাবি, শহীদুল্লা কায়সারের দুটি টাই ও ডায়েরি, বিবিসির সংবাদদাতা নিজামউদ্দীন আহমেদের কোট, সেলিনা পারভীনের কলম ও শাড়ি, সাংবাদিক সিরাজুদ্দীন হোসেনের পাঞ্জাবি, পায়জামা ও পাণ্ডুলিপি, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতার লেখা বই, ডা. আলীম চৌধুরীর ভিজিটিং কার্ড, ল্যাম্প, ডেন্টাল টুলকিট ও ডায়েরি, পাকিস্তানি হানাদারদের টর্চার সেলে ব্যবহৃত সরঞ্জাম। শহীদ পরিবারের সদস্যরা এগুলো জাদুঘরে দান করেছেন। রয়েছে স্ত্রী জোহরাকে লেখা তাজউদ্দীন আহমদের চিঠি। ১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে সেকান্দারকে তিন হাজার টাকার চেক দেন বঙ্গবন্ধু। শহীদ সন্তানদের শেষ স্মৃতি হিসেবে সেই চেকের টাকা আর তোলেননি সেকান্দার। চেকটি সংরক্ষিত আছে এখানে। এ ছাড়া জাদুঘরে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই আছে পাঁচ হাজারের ওপরে। গণহত্যা ও নির্যাতনের ওপর বাঁধানো ছবি আছে ১৫৫টি। আগরতলার শিল্পীদের আঁকা ‘শিল্পীর চোখে গণহত্যা-নির্যাতন আর্ট’ শিরোনামের ছবি আছে ১২টি। ২০১৫ সালে ‘শিল্পীর চোখে গণহত্যা নির্যাতন’ নামে একটি আর্ট ক্যাম্প হয়, সেখানকার ছবি আছে ১৭টি, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও প্রামাণ্যচিত্রের ২৫০টি সিডিসহ মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যার নানান নিদর্শন আছে এখানে।

১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরে এসে আবেগাপ্লুত হতে হয় দর্শনার্থীদের। তাঁরা জানতে পারেন মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। কথা হয় বিমল সাহা নামের এক দর্শনার্থীর সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘এখানে এসে হারিয়ে গেছি মুক্তিযুদ্ধের সময়ে। এখানে না এলে বুঝতে পারতাম না পাকিস্তানি হানাদাররা কতটা নির্যাতন করেছে মুক্তিকামী মানুষকে।’ বিন্তু নামের এক কলেজশিক্ষার্থী বলেন, ‘এখানে এসে অনেক ঘটনা জানতে পারলাম। এ যেন মুক্তিযুদ্ধের দগদগে স্মৃতি।’

১৯৭১ গণহত্যা-নির্যাতন আর্কাইভ ও জাদুঘরের সভাপতি অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার প্রথম গণহত্যা জাদুঘর এটি। খুব কম সময়ের মধ্যে আমরা মোটামুটি জাদুঘরটি দাঁড় করাতে পেরেছি। নিদর্শনের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দর্শকও বাড়ছে। গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য কাজ করে যাচ্ছি।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত