Ajker Patrika

বৃষ্টি আর চোখের পানি মিশে একাকার

বৃষ্টি আর চোখের পানি মিশে একাকার

প্রশ্ন: ম্যাচের আগের যখন ফেসবুক স্ট্যাটাস দিলেন, তখনো কি একবারও মনে হয়েছিল আপনার সেই স্ট্যাটাস দাবানলের মতো সারা দেশে ছড়িয়ে পড়বে?

সানজিদা আক্তার: ভাইরাল হবে, এমন চিন্তা করে আমি স্ট্যাটাস দিইনি। নারী ফুটবলারদের মধ্যে আমার অনেক ভক্ত-অনুসারী আছে। সবাই আমাকে খুব সমর্থন করে। এটা আমার সৌভাগ্য। আমার মনের ভেতর যে কষ্ট ছিল, না বলা কথা ছিল, আমার মনে হয়েছে ম্যাচের আগে যদি তা প্রকাশ করি নিজের কাছেই অনেক ভালো লাগবে। সেই চিন্তা থেকেই স্ট্যাটাস দেওয়া। আমার, আমাদের নারী ফুটবলের বাস্তব চিত্রটিই সেখানে ফুটিয়ে তুলেছি। যেহেতু সাফের মতো একটা ফাইনাল, সবাই আমাদের খোঁজখবর নিচ্ছিল। সবাই আমরা পোস্টটা শেয়ার করেছি।

প্রশ্ন: আপনার এক পোস্টের কারণে ক্রীড়া মন্ত্রণালয় আপনাদের জন্য ছাদখোলা বাসের ব্যবস্থা করেছেন।  এসব শোনার পর আপনাদের অনুভূতি কী?

সানজিদা: আমরা ইউরোপিয়ান ফুটবলে দেখেছি ফুটবলাররা শিরোপা জয়ের পর এমন ছাদখোলা বাসে অনেক আনন্দ করেন। আমরাও তো একটা টুর্নামেন্টের ফাইনালে উঠেছি। হারলেও আমাদের জন্য সেটা হতো অনেক বড় কিছু। দেশের মানুষ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। ছেলেরা অনেক ফাইনালে হেরেছে। আমাদের লক্ষ্য ছিল দেশের জন্য কিছু করার। শূন্য হাতে ফিরলে নিজেদের কাছেই খারাপ লাগত। জানপ্রাণ দিয়ে আমরা লড়েছি। জিতেছি। দেশের মানুষের মুখে হাসি ফুটিয়েছি। বাবা-মায়ের মুখে হাসি ফুটিয়েছি। আমাদের এক বড় ভাই জানিয়েছেন, মন্ত্রী আমাদের জন্য চেষ্টা করছেন। তিনি ক্রিকেট কিংবা ফুটবল, যেকোনো সমস্যায় তিনি আমাদের পাশে দাঁড়ান।

প্রশ্ন: আপনার কি মনে হয়, আপনার এক স্ট্যাটাসে আপনার সতীর্থরা ভালো খেলতে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন?

সানজিদা: আমরা দীর্ঘদিন ধরে একসঙ্গে আছি। অনেক ঈদ গেছে, পরিবারের সঙ্গে দেখা হয়নি, নিজেদের মতো উদ্‌যাপন করেছি। এতে আমাদের নিজেদের মধ্যে বন্ধন শক্তিশালী হয়েছে। নিজেদের মধ্যে হিংসা নেই। সবাই সবাইকে সমর্থন করে। ম্যাচের আগে এমনিতেই আমরা প্রতিজ্ঞা করি যে সবাই মিলে কাজ করব। আমার স্ট্যাটাস থেকে অবশ্যই তাঁরা অনুপ্রাণিত হয়েছে।

প্রশ্ন: শিরোপা জয়ের পর দিনটা কেমন কাটল?

সানজিদা: খুব বেশি কিছু করিনি। সকালে নাশতা করেছি। খানিকটা ঘুরেছি। ছোট ভাইবোনদের জন্য উপহার কিনেছি। দুপুরে খাওয়াদাওয়া করে সন্ধ্যায় নেপালে বাংলাদেশ রাষ্ট্রদূতের নিমন্ত্রণে যাওয়ার অপেক্ষায়।

প্রশ্ন: আপনাদের এই জয় বাংলাদেশের নারী ফুটবলকে আরও এগিয়ে নিতে কতটা সহায়তা করবে বলে মনে হয়?

সানজিদা: যখন ফুটবলে আসি তখন শুধু আমি না, প্রতিটি নারী ফুটবলারকে অনেক কটুকথা শুনতে হয়েছে। সেই কথা মুখ ফুটেও বলা সম্ভব নয়। যিনি বলেছেন, তিনি কখনো হয়তো বুঝতে পারেননি তাঁর এক কথায় সেই মেয়েটি বা তাঁর পরিবার কতটা কষ্ট-বেদনার মধ্যে দিয়ে গেছে। এরপর আমাদের একের পর এক অর্জন, এলাকার সুনাম বয়ে এনেছি। আমাদের এলাকায় (কলসিন্দুর) বিদ্যুতের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। রাস্তাঘাট উন্নত হয়েছে, স্কুলকে সরকারীকরণ করা হয়েছে। এলাকাবাসী এখন আমাদের নিয়ে গর্বিত। 

প্রশ্ন: আপনাদের খেলাতেই সব কটুকথা আড়াল হয়েছে, তাই না?

সানজিদা:  এখন আমাদের আর কেউ কটুকথা বলে না। জাতীয় পর্যায়ে এটা আমাদের প্রথম বড় জয়। আমার মনে হয়, আমাদের দেখে এখন কোনো বাবা-মা তাঁদের মেয়েকে ফুটবল খেলতে না করবেন না। 

প্রশ্ন: শিরোপা জয়ের মুহূর্তে সবচেয়ে স্মরণীয় ঘটনা কোনটি?

সানজিদা: আমার চোখে তখন পানি ছিল। ম্যাচে এমনিতেই বৃষ্টি ছিল। সেই বৃষ্টির পানি আর চোখের পানি একাকার হয়ে গিয়েছিল। কেউ সেটা বুঝতে পারছিল না। সবার ভেতর এমন একটা অনুভূতি তৈরি হয়েছিল যে আসলে কাউকে সেটা বোঝানো যাবে না।

প্রশ্ন: কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন কী বলেছিলেন?

সানজিদা: স্যার শুধু বলেছেন, এখন থেকে সেরা দলের কোচ তিনি।

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত