Ajker Patrika

কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষতি

নকলা (শেরপুর) প্রতিনিধি
আপডেট : ১৮ মে ২০২২, ১৪: ২৭
কালবৈশাখীতে ব্যাপক ক্ষতি

শেরপুরের নকলায় গতকাল মঙ্গলবারের কালবৈশাখী ও বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ে উপড়ে ও ভেঙে গেছে ৫ শতাধিক গাছ। বিধ্বস্ত হয়েছে শতাধিক কাঁচাপাকা ঘরবাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও দোকানপাট। গাছপালা ভেঙে পড়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ বিচ্ছিন্ন হয় অনেক পরিবারে। ক্ষতি হয়েছে কয়েক শ হেক্টর জমির কাঁচা-পাকা বেরো ধান। লিচু, কাঁঠাল, আম ও কলার বাগানে কয়েক লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিন টানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের দুর্ভোগ বেড়েছে। কৃষক খেতের পাকা ধান সময়মতো কাটতে না পারায় খেতেই নষ্ট হচ্ছে। মঙ্গলবারের কালবৈশাখী ও বৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণটা আরও বেড়েছে।

জানা গেছে, গত কয়েক দিন ঘূর্ণিঝড় অশনির প্রভাবে এলাকায় বিরাজ করছিল বৈরী আবহাওয়া। থেমে থেমে কখনো হালকা, কখনো মাঝারি ও ভারী বর্ষণ হচ্ছে। মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় নেমে এসেছে স্থবিরতা। শ্রমিকেরা অনেকেই হয়ে পড়েছেন কর্মহীন। কৃষক পরিবারগুলোর পাকা বোরোধান নষ্ট হচ্ছে খেতে। মাড়াই ও সেদ্ধ করা ধান শুকাতে না পেরে এবং কাটা ধান মাড়াই করতে না পেরে সেগুলো নষ্ট হচ্ছে ঘরে, বাড়ির আঙিনা ও সড়কের পাশে। বৃষ্টির কারণে গবাদিপশুর খাবার খড় শুকাতে না পেরে কৃষক পরিবারে বিরাজ করছে শঙ্কা।

গতকাল মঙ্গলবার ভোরে হঠাৎ করে শুরু হয় কালবৈশাখীর ঝড়। সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টি। ঝড়ে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে গণপদ্দি, বানেশ্বর্দী, চন্দ্রকোনা, পাঠাকাটা ও টালকী ইউনিয়নে।

পাঠাকাটা ইউনিয়নের পাঁচকাহনীয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোয়াজ্জেম হোসেন বলেন, কালবৈশাখীতে বিদ্যালয় ভবনের পাশের একটি বড় কড়ইগাছ ভবনের ওপর ভেঙে পড়ে ভবন ও আসবাবপত্রের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ব্যাহত হয়েছে পাঠদান কার্যক্রম।

পাঁচকাহনীয়া গ্রামে গাদুরমোড় বাজার এলাকার বাসিন্দা সাদেকুর রহমান বলেন, ‘আকস্মিক কালবৈশাখী ও বৃষ্টিতে বাজারে তিনটি দোকানের টিনের চাল উড়ে গিয়ে কয়েক লাখ টাকার মালামাল নষ্ট হয়েছে। বিধ্বস্ত হয়েছে আশার আলো নামে একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুল।’

চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বালিয়াদী গ্রামের মিলন মিয়া বলেন, ‘ঝড় ও বৃষ্টিতে আমাদের খেতের কাঁচাপাকা বোরোধান প্রায় সবই ঝরে গেছে। বর্তমানে শ্রমিক-সংকট ও উচ্চ মজুরির কারণে সঠিক সময়ে ধান কাটতে না পারায় আমার পরিবার এখন দিশেহারা।’

গণপদ্দি ইউনিয়নের কৃষক মানিক মিয়া বলেন, ‘কালবৈশাখীতে আমাদের বাড়ির পাঁচটি ফলদ ও বনজ গাছ উপড়ে গিয়ে ঘরের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। খেতের কাঁচাপাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে।’

বানেশ্বর্দী ইউনিয়নের আড়িয়াকান্দা গ্রামের ক্ষুদ্র চাষি দুলাল মিয়া বলেন, ‘ঝড়ে আমার ২০ শতক জমিতে কলার বাগান অর্ধেকের বেশি ধ্বংস হয়ে গেছে। এতে আমার প্রায় ২০ হাজার টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

একই গ্রামের কৃষক নুরল ইসলাম বলেন, ‘কালবৈশাখীতে আমার ৩০ শতক জমিতে লিচুবাগানের সব লিচু ঝরে গিয়ে লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।’

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, ‘বোরো ধানের ফলন ভালো হলেও শ্রমিক-সংকট ও উচ্চ মজুরির কারণে কৃষক সময়মতো ধান কাটতে পারছেন না। তারপরও গত কয়েক দিন একটানা বৃষ্টির কারণে কৃষকের দুর্ভোগ বেড়েছে। কৃষক পাকা ধান সময়মতো কাটতে না পারায় খেতে নষ্ট হচ্ছে। বাড়িতে ও সড়কে জমানো কাঁচা ধান ও খড় পচে যাচ্ছে। মঙ্গলবারের কালবৈশাখী ও বৃষ্টিতে কৃষকের ক্ষতির পরিমাণটা আরও বাড়িয়ে দিল।’

Google News Icon

সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিড ফলো করুন

এলাকার খবর
খুঁজুন

পাঠকের আগ্রহ

সম্পর্কিত